আলমডাঙ্গায় বিসিআইসি ডিলার জোয়ার্দ্দার ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে সার চোরাচালানের অভিযোগ
সার পাচ্ছে না কৃষকরা, পাচারের সময় ১২০ বস্তা সার জব্দ
- আপলোড টাইম : ০৩:১১:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
- / ২০ বার পড়া হয়েছে
বিসিআইসি ডিলার হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ কৃষকদের নিকট সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি না করা এবং অবৈধভাবে সার চোরাচালানের অভিযোগে পাওয়া গেছে আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের মেসার্স জোয়ার্দ্দার ট্রেডার্সের মালিক আনিছুর রহমান জোয়ার্দ্দার ও তার ছেলে সাদ্দাম জোয়ার্দ্দারসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এতে আগামীতে সার সংকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় সার সংকট দেখা দিয়েছে। অধিক লাভের আশায় এই তিন জেলায় আলমডাঙ্গাসহ চুয়াডাঙ্গার অন্য উপজেলা থেকে সার পাচার হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার সার পাচারের প্রধান রুট হিসেবে আলমডাঙ্গাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সুযোগকে আলমডাঙ্গার ডিলাররাও সার পাচার করছেন।
গত এক সপ্তাহে আলমডাঙ্গা উপজেলার পোলতাডাঙ্গা ও হাটবোয়ালিয়া এলাকা থেকে স্থানীয় জনতার সহযোগিতায় ৮০ বস্তা এমওপি ও ৪০ বস্তা ডিএপি সার জব্দ করা হয়েছে। এসময় তিনটি লাটাহাম্বারের চালককে আটক করা হলেও পরে তাদের মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর সকালে দুটি ইঞ্জিনচালিত লাটাহাম্বার গাড়িতে উপজেলার ভাংবাড়িয়া বাজারস্থ কীটনাশক ব্যবসায়ী মেসার্স মারিফুল ট্রেডার্সে মালিক মারিফুল ইসলাম চোরাই পথে কুষ্টিয়ায় ৮০ বস্তা এমওপি সার পাচার করছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পোলতাডাঙ্গা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার এবিএম মোমিনুর রসিদ গাড়ি দুটি আটক করেন। পরে গাড়িতে থাকা ৮০ ব্যাগ সার জব্দ করে। পরবর্তীতে জানা যায়, এই চালানকৃত সার আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের সরকারি সার ডিলার আনিছুর রহমান জোয়ার্দ্দারের।
এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দামুড়হুদা উপজেলার এক কীটনাশক ব্যবসায়ী একই ইউনিয়নের হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মধ্যদিয়ে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় ৪০ বস্তা ডিএপি সার পাচারকালে ওই এলাকার ব্লক সুপারভাইজার খাদেমুল বাশার লাটাহাম্বাসহ সার জব্দ করেন। পরে আটককৃত সার আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে রাখা হয়। স্থানীয় কৃষককেরা অভিযোগ তুলে বলেন, উপজেলার অধিকাংশ কীটনাশক ডিলারেরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি দামের তুলনায় অধিক মূল্য নিচ্ছে। সরেজমিনেও এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
বাড়াদী ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, তারা সরকারিভাবে বেধে দেওয়া দামে সার পাচ্ছেন না। বেশি দাম সার কিনতে হয়। তবে কোনো রসিদ দেওয়া হয় না। এদিকে, গত ১৬ অক্টোবর উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের বিএডিসি ডিলার শাহ আলমের বিরুদ্ধে ৪ জন ইউপি সদস্য ও ১৪ জন কৃষকসহ ১৮ জন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের নিকট স্বজনপ্রীতি ও কৃষকদের সাথে অসদাচরণসহ ডিলারের নিকট কোনো সার না পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষক নতিডাঙ্গা গ্রামের মনসুর আলী বলেন, ‘বাংলাদেশে চলছে জোর যার মুল্লুক তার। আমরা সাধারণ চাষি, আমাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। আমাদের বাড়াদী ইউনিয়নের সারের ডিলার আনিছুর রহমান জোয়ার্দ্দার কাছে সার কিনতে গেলে, সে এক কথায় বলে এক রকমের সার দেওয়া যাবে না, তার কাছ থেকে সার নিতে হলে সব রকমের সার মিল করে নিতে হবে। আমার যদি ইউরিয়া সার লাগে, তাহলে আমি ইউরিয়া সার ছাড়া অন্য সার নিয়ে কী করব? তিনি সাধারণ কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন না, সে গাড়ি ভর্তি করে বাইরের মানুষের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করেন। আমাদের বাধ্য হয়েই গ্রামের দোকানদারদের কাছ থেকে বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে হয়। আমাদের দাবি, ডিলার থেকে এই আনিছুর রহমান জোয়ার্দ্দারকে বাদ দিয়ে একটা ভালো মানুষকে দেওয়া হোক।’
এ বিষয়ে বাড়াদী ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিএম মোমিনুর রহমান জানান, গত সোমবার সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পোলতাডাঙ্গা বাজার এলাকা থেকে ৮০ বস্তা এমওপি সার জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তারা পরবর্তীতে কী পদক্ষেপ নিবেন, তা মিটিংয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিবেন। এছাড়া সার ডিলার মেসার্স জোয়ার্দ্দার ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার রেহানা পারভিন জানান, ‘বর্তমানে সার চোরাকারবারিরা আলমডাঙ্গার রুটকে ব্যবহার করছে। এছাড়া উপজেলার কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধেও এমন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী জেলা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলায় সার সংকট দেখা দিয়েছে। ওই সকল এলাকায় সারের চাহিদা পূরণ করতে সরকারি দামের তুলনায় বেশি দামে কিছু অসাধু ডিলার এলাকার চাষিদের নিকট সার বিক্রি না করে চোরাইভাবে বেশি দামে ওই সব এলাকায় বিক্রির চেষ্টা করছেন। তবে সার চোরাকারবারিদের ধরতে তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যে ১২০ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাড়াদী ইউনিয়নের সারের ডিলার আনিছুর রহমান জোয়ার্দ্দারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাইরের উপজেলায় সার বিক্রি করাসহ নানা অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যেই তার পাচারকৃত ৮০ বস্তা সার আমরা জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি। ইতঃপূর্বেও বিভিন্ন অপকর্মের কারণে তাকে দুইবার সতর্ক করা হয়েছে। এবার তার বিরুদ্ধে পরবর্তী মিটিংয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যদি কোনো ডিলার এমন কাজে জড়িত থাকে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহ আলম নামের এক ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলমান রয়েছে।’