ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু

চুয়াডাঙ্গায় প্রতারণা চালিয়ে যেতে সমাধান ফাউন্ডেশনের নানা ফন্দি-ফিকির

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলছেন অনুমতি দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:২২:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় প্রতারণা করতে সময় চাইছে সমাধান ফাউন্ডেশন। কার্যালয় অর্ধদিন বন্ধ রাখার পর ফন্দি-ফিকিরে আবার নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে চক্রটি। প্রশাসনকে ডোনারদের অর্থ ফেরত দিয়েছে জানালেও প্রকৃতপক্ষে ডোনাররা ফেরত পায়নি টাকা। আবার কাগজপত্র দেখাবার সময় নিয়ে ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে অফিস খুলেছে তারা। তবে প্রশাসন বলছে, তাদের দেখানো কাগজপত্র ঠিক নেই। তদন্ত করে দেখা হবে। আর সচেতন মহল বলছে, তদন্ত করতে যত বেশি সময় নেয়া হবে, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে অর্থ নিয়ে লোপাট হলে সেটা হবে হাস্যরসের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সমাধান ফাউন্ডেশনের ট্রেড লাইসেন্স মাত্র ২০ দিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া, একক মালিকানায়। অথচ বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রেড লাইসেন্স যা করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে তাও আবার সরবরাহ ব্যবসা, ব্যক্তিগতভাবে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সমাধান গ্রুপ’, চালানো হচ্ছে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’-এর নামে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা অফিস তাদের এ কাজের ব্যাপারে কিছুই জানে না। একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স এ ব্যবসার ধরণ বা উদ্দেশ্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক। অথচ সমাধান ফাউন্ডেশন যা উল্লেখ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও ভুল উপস্থাপন।

নিজেদেরকে কখনো চেইন কোম্পানি, কখনো এনজিও হিসেবে পরিচয় দিলেও জাতীয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন তারা নেয়নি। এতদিনেও তাদের কোনো ভিত্তিমূলক কার্যক্রম নেই, সমাধান ফাউন্ডেশন চলছে ডেসটিনির মতো এমএলএম/পুঞ্জি/পিরামিড স্কিমে যা দেশের আইনের পরিপন্থী। (উল্লেখ্য, এ স্কিমে দ্রব্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় না করে, নতুনভাবে নিয়োগ দিয়ে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ পুরানো কর্মীদের মাঝে বেতন হিসেবে বণ্টন করা হয়)।

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে জানুয়ারি থেকে তাদের সুপারশপ, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন কার্যকারিতা শুরু হবে। সমাধান ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যাদের কর্মকাণ্ড এবং লোগো কোনোটিই চুয়াডাঙ্গার সমাধান ফাউন্ডেশনের সাথে মেলে না। চুয়াডাঙ্গার মধ্যে মাত্র বিগত কয়েক মাসে তারা অফিসিয়াল তালিকাভুক্ত ২৪৪ জন মানুষের কাছে থেকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়েছে, যা মোট হিসেবে ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু সবমিলে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে এর থেকে অনেক গুণ বেশি নারী-পুরুষ তাদেরকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা করে দিয়েছে।

সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণা, সাথে আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে সমাধান ফাউন্ডেশন। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজরের সামনে আসার পরও কেন তাদেরকে সময় দেয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র না থাকলেও এ ধরনের কাজ করছে, আবার তাদের কিছু কাজ দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী। তারপরও তাদেরকে কাগজপত্র দেখাবার সময় দেবার অর্থ কী? আর আরেকটি মহল বলছে, বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা অফিস বন্ধ রেখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে তারা বিকেলে পুনরায় অফিস খোলেন। বিকেল থেকেই তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে কার্যক্রম শুরু করছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অনুমতি দিয়েছেন, এমন গুজবই ছড়ানো হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, সমাধান ফাউন্ডেশনের দেখানো কাজগপত্র ঠিক নেই। তারা সময় চেয়েছে এবং টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছে প্রশাসনকে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাধান ফাউন্ডেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এসেছিলেন। পত্রিকায় সংবাদ দেখে আমি বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে জানতে চেয়েছি। তবে তারা যা দেখিয়েছে, তা তাদের কাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন দিয়ে এ সকল কাজ হয় না। এ জন্য মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির অনুমোদন প্রয়োজন। ওরা আমাকে বলেছে যে টাকা নিয়েছে, তা ফেরত দিয়েছে। এটার গভীর তদন্ত করব। রোববারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি করে নির্দেশনা দেব।’

পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, ‘তারা নিজের উদ্যোগে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। ওনারা মূলত জানিয়েছে, ওরা যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দিয়েছে। এটা জেলা প্রশাসক মহোদয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নির্দেশনা দিলে আমি ব্যবস্থা নেব। তবে ওদের কার্যক্রম আমার পছন্দ হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি জেলা প্রশাসন বা যারা এনজিও নিয়ন্ত্রণ করে, তারা এটা জানে না। তারা আমাকে বলেছে, তারা অলরেডি টাকা ফেরত দিয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে অফিস খুলে কার্যক্রম শুরু

চুয়াডাঙ্গায় প্রতারণা চালিয়ে যেতে সমাধান ফাউন্ডেশনের নানা ফন্দি-ফিকির

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলছেন অনুমতি দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব

আপলোড টাইম : ০৯:২২:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় প্রতারণা করতে সময় চাইছে সমাধান ফাউন্ডেশন। কার্যালয় অর্ধদিন বন্ধ রাখার পর ফন্দি-ফিকিরে আবার নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে চক্রটি। প্রশাসনকে ডোনারদের অর্থ ফেরত দিয়েছে জানালেও প্রকৃতপক্ষে ডোনাররা ফেরত পায়নি টাকা। আবার কাগজপত্র দেখাবার সময় নিয়ে ডিসি-এসপির নাম ভাঙিয়ে অফিস খুলেছে তারা। তবে প্রশাসন বলছে, তাদের দেখানো কাগজপত্র ঠিক নেই। তদন্ত করে দেখা হবে। আর সচেতন মহল বলছে, তদন্ত করতে যত বেশি সময় নেয়া হবে, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে অর্থ নিয়ে লোপাট হলে সেটা হবে হাস্যরসের।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সমাধান ফাউন্ডেশনের ট্রেড লাইসেন্স মাত্র ২০ দিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া, একক মালিকানায়। অথচ বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রেড লাইসেন্স যা করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে তাও আবার সরবরাহ ব্যবসা, ব্যক্তিগতভাবে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সমাধান গ্রুপ’, চালানো হচ্ছে ‘সমাধান ফাউন্ডেশন’-এর নামে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা অফিস তাদের এ কাজের ব্যাপারে কিছুই জানে না। একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স এ ব্যবসার ধরণ বা উদ্দেশ্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক। অথচ সমাধান ফাউন্ডেশন যা উল্লেখ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য ও ভুল উপস্থাপন।

নিজেদেরকে কখনো চেইন কোম্পানি, কখনো এনজিও হিসেবে পরিচয় দিলেও জাতীয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন তারা নেয়নি। এতদিনেও তাদের কোনো ভিত্তিমূলক কার্যক্রম নেই, সমাধান ফাউন্ডেশন চলছে ডেসটিনির মতো এমএলএম/পুঞ্জি/পিরামিড স্কিমে যা দেশের আইনের পরিপন্থী। (উল্লেখ্য, এ স্কিমে দ্রব্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় না করে, নতুনভাবে নিয়োগ দিয়ে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ পুরানো কর্মীদের মাঝে বেতন হিসেবে বণ্টন করা হয়)।

মানবসম্পদ উন্নয়ন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে জানুয়ারি থেকে তাদের সুপারশপ, কৃষিখাতসহ বিভিন্ন কার্যকারিতা শুরু হবে। সমাধান ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যাদের কর্মকাণ্ড এবং লোগো কোনোটিই চুয়াডাঙ্গার সমাধান ফাউন্ডেশনের সাথে মেলে না। চুয়াডাঙ্গার মধ্যে মাত্র বিগত কয়েক মাসে তারা অফিসিয়াল তালিকাভুক্ত ২৪৪ জন মানুষের কাছে থেকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়েছে, যা মোট হিসেবে ৭৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা। কিন্তু সবমিলে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে এর থেকে অনেক গুণ বেশি নারী-পুরুষ তাদেরকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা করে দিয়েছে।

সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণা, সাথে আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে সমাধান ফাউন্ডেশন। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজরের সামনে আসার পরও কেন তাদেরকে সময় দেয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র না থাকলেও এ ধরনের কাজ করছে, আবার তাদের কিছু কাজ দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী। তারপরও তাদেরকে কাগজপত্র দেখাবার সময় দেবার অর্থ কী? আর আরেকটি মহল বলছে, বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা অফিস বন্ধ রেখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে তারা বিকেলে পুনরায় অফিস খোলেন। বিকেল থেকেই তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে কার্যক্রম শুরু করছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অনুমতি দিয়েছেন, এমন গুজবই ছড়ানো হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বলছেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, সমাধান ফাউন্ডেশনের দেখানো কাজগপত্র ঠিক নেই। তারা সময় চেয়েছে এবং টাকা ফেরত দেয়ার কথা বলেছে প্রশাসনকে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘সমাধান ফাউন্ডেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এসেছিলেন। পত্রিকায় সংবাদ দেখে আমি বিষয়টি নিয়ে ভালোভাবে জানতে চেয়েছি। তবে তারা যা দেখিয়েছে, তা তাদের কাজের জন্য প্রযোজ্য নয়। সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন দিয়ে এ সকল কাজ হয় না। এ জন্য মাইক্রোক্রেডিট অথরিটির অনুমোদন প্রয়োজন। ওরা আমাকে বলেছে যে টাকা নিয়েছে, তা ফেরত দিয়েছে। এটার গভীর তদন্ত করব। রোববারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চিঠি করে নির্দেশনা দেব।’

পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, ‘তারা নিজের উদ্যোগে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। ওনারা মূলত জানিয়েছে, ওরা যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদের টাকা ফেরত দিয়েছে। এটা জেলা প্রশাসক মহোদয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি নির্দেশনা দিলে আমি ব্যবস্থা নেব। তবে ওদের কার্যক্রম আমার পছন্দ হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলেছি জেলা প্রশাসন বা যারা এনজিও নিয়ন্ত্রণ করে, তারা এটা জানে না। তারা আমাকে বলেছে, তারা অলরেডি টাকা ফেরত দিয়েছে।’