সংবিধান সংস্কারে বিএনপির ৬২ প্রস্তাব ; ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ
- আপলোড টাইম : ০৮:২৯:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২০ বার পড়া হয়েছে
সংবিধান সংস্কারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ৬২টি প্রস্তাব পেশ করেছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ কমিশনের কাছে এসব প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংবিধানে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তকরণ, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য, উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রী পদ সৃজন, পরপর দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া প্রভৃতি।
বর্তমান সংবিধানের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটছে না, একই সাথে এতে স্বৈরাতন্ত্র জেঁকে বসছে এমন আলোচনা দীর্ঘ দিনের। সঙ্গত কারণে ছাত্রজনতার বিপ্লবের ফসল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব¡াধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে রাষ্ট্র সংস্কারে যে কয়টি কমিশন গঠন করেছে; সংবিধান সংস্কার কমিশন সেগুলোর একটি। কমিশন সংবিধান সংস্কারে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত চেয়েছে। ওই আলোকে বিএনপি সংবিধান সংস্কারে প্রস্তাব দিয়েছে।
আমাদের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার প্রবল জনমত উপেক্ষা করে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি ফিরে পেতে বিএনপিসহ অপরাপর রাজনৈতিক দল তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। তবু সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মত উপেক্ষা করে আওয়ামী সরকার ছিল অনড়। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামো সংবিধানে এমনভাবে সংযোজন করতে হবে, যাতে এ নিয়ে ভবিষ্যতে বিতর্ক সৃষ্টি না হয়।
বর্তমানে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বাংলাদেশের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে বলে বিজ্ঞ মহলে আলোচনা রয়েছে। দেশের অনেক মেধাবী মানুষ রয়েছেন যারা রাজনীতি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিচরণ করতে চান না। কিন্তু তারা দেশের জন্য অনেক কিছু করতে চান। ওই সক্ষমতা তাদের রয়েছে। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষে এমন মানুষদের স্থান দিলে দেশ সমৃদ্ধ হবে।
এছাড়া পরপর দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না- এ প্রস্তাবও দেশের ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে। এর মাধ্যমে দেশে দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা পরিবারকেন্দ্রিক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ নিরুৎসাহীত হবে এবং রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় রাষ্ট্রপতির পদটি নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র সমালোচনা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতির কাজ শুধু বিভিন্ন মাজারে ফুল দেয়া আর ফিতা কেটে কোনো কিছুর উদ্বোধন করা- সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতার ভারসম্য আনলে এমন সমালোচনার অবসান হবে। এক্ষেত্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রী কতটুকু ক্ষমতার অধিকারী হবেন আর পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কতটুকু ক্ষমতার অধিকারী হবেন সেটি ন্যয্যতার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতে যে ৩১ দফা দিয়েছিল সেখানেও সংবিধান সংশোধনের কিছু বিষয় ছিল। সবশেষ সংবিধান সংস্কারে বিএনপির এসব প্রস্তাব দলটির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।
সংবিধান সংস্কার কমিশন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একটি সংবিধান উপহার দেবে- যার মধ্য দিয়ে প্রকৃত অর্থে একটি ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।