সংঘাতের ঘটনায় তিন মামলা
আইনজীবী সাইফুলের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল, দাফন সম্পন্ন
- আপলোড টাইম : ০৮:২৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৯ বার পড়া হয়েছে
হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ৩৩ জন গ্রেপ্তার
ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার দাবি
হাসনাত-সারজিসের ইসকন নিষিদ্ধে রিট
রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চান আদালত
চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসের নথিপত্রে আগুন
চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর মুক্তির দাবি ঘিরে সংঘর্ষে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের ৪ দফা নামাজে জানাজা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে প্রথম এবং সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা দেড়টায় নিউ মার্কেট মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় জানাজা। পরে বিকাল ৪টায় লোহাগাড়ার চুনতি ফারেঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে সবশেষ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়। জানাজায় লাখো মানুষের ঢল নামে। আবেগাপস্নুত ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকনকে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন অ্যাখা দিয়ে এটি নিষিদ্ধ এবং আলিফ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তারা। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত। অন্যদিকে, আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জনসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। দোয়া মাহফিল আয়োজনসহ নেওয়া হয়েছে ৫টি সিদ্ধান্ত।
এছাড়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভের সময় ইসকন সদস্যদের সহায়তা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানাজায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ অংশ নেন। তিনি ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরীসহ আরও অনেক রাজনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঢাকা থেকে এসে জানাজায় যোগ দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
হত্যাকান্ডে জড়িত গ্রেপ্তার ৩০, ঢাকা-চট্টগ্রামে বিক্ষোভ:
চট্টগ্রামে এপিপি সাইফুল ইসলাম হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের মধ্যে অন্তত ছয়জনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নগরের পাথরঘাটা মেথর পট্টি, আন্দরকিলস্না, হাজারি গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের নিশ্চিত করেন।
এদিকে, অতিদ্রম্নত সময়ের মধ্যে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ ও সারজিস আলম। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস মোড়ে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি করেন তারা।
সারজিস আলম বলেন, ‘যে রক্তের বন্যা বইয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়; সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতের কিছু প্রেতাত্মা উসকানি দেয়। আমরা স্পষ্ট করে সব প্রেতাত্মাদের বলে দিতে চাই, আমরা ১৬ বছরের স্বৈরাচার খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি। ছোটোখাট কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।’
ইসকন নিষিদ্ধে রিট, রাষ্ট্রের প্রতিবেদন চায় আদালত:
সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ- ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন এক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করেন। চট্টগ্রাম ও রংপুরে জরুরি অবস্থা জারিরও আর্জি জানিয়েছেন তিনি। আবেদনের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের মতামত জানতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে পাঠায় আদালত। পরে এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আদালত বর্জনসহ ৬ সিদ্ধান্ত
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো আদালত বর্জনসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। এ ছাড়াও জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ আরও পাঁচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অফিসের নথিপত্রে আগুন
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভের সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের সদস্যদের (ইসকন) সহায়তা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতের প্রবেশমুখে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উল্টোপাশে ওই সমিতির অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর ইসকন সদস্যরা তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মুন্সি সমিতির সদস্যরা নিজেদের পোশাক এবং খাবার পানি বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করেছেন। এছাড়া তারা উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্টও দিয়েছেন ফেসবুকে।
চট্টগ্রামে সংঘাতের ঘটনায় তিন মামলা
এদিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোর সময় চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণ, রঙ্গম সিনেমা হল ও কোতোয়ালি মোড়ে তিন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ২৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে হামলার ঘটনায় মামলায় ৪৯ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাত ৬০০/৭০০ জনকে, রঙ্গম সিনেমা হলের সামনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উলেস্নখ করে ৩০০/৪০০ জনকে অজ্ঞাত এবং কোতোয়ালি মোড়ের ঘটনায় ১৩ জনকে আসামি করে অজ্ঞাত আরও ২৫০/৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রামে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও বহিষ্কৃত ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার আদালত এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তার অনুসারীরা। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চিন্ময় অনুসারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের হামলায় নিহত হন সাইফুল ইসলাম আলিফ। আইনজীবীরা এ হত্যাকান্ডের জন্য ইসকন সমর্থকদের দায়ী করেছেন। সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।