ইপেপার । আজ শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

বিনা সুদে ঋণের প্রলোভনে রাজধানীর শাহবাগে জনসমাগমের চেষ্টা

চুয়াডাঙ্গা—মেহেরপুর থেকে গিয়েও প্রতারিত বহু মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০১:১৫:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে সাধারণ মানুষকে সমবেত করার চেষ্টা করেছে। এতে চুয়াডাঙ্গা থেকেও কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। ফরম পূরণের নামে চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা আলাদা মাঠকর্মীর নাটক সাজিয়ে নেয়া হয়েছিল মাত্র ১০ টাকা করে। তবে পরে সমাবেশে অংশগ্রহণের কথা বলে নেয়া হয়েছে এক হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। আর ১ লাখ টাকার বিনা সুদের ঋণের প্রলোভনে পা দিয়ে এ অঞ্চলের অনেকেই ঠকেছেন। তবে পুলিশের পদক্ষেপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শাহবাগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফটোকপি করা একটি ফরম হাতে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনা সুদে ১ লাখ টাকার ঋণ প্রদানের প্রলোভন দেখানো হয়। আর বিনা সুদে ১ লাখ টাকার ঋণের কথা শুনে অনেকেই পূরণ করেন ফরমটি। তবে পরবর্তীতে বোঝানো হয়, ঋণ নিতে হলে ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেখান থেকেই ঋণ দেয়া হবে। সে হিসেবে পরে রেজিস্ট্রেশন বাবদ এক হাজার টাকা করে জমা দেন সাধারণ মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের পৌরসভার পিছনে, রেলপাড়া, ইসলামপাড়া, সাতগাড়ি, দৌলতদিয়াড়সহ বিভিন্ন এলাকায় এই চক্র ফন্দি আটে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যারা মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। বীমা কর্মীর মতো সুবিধা দেয়া প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঋণের কথা প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। মূলত, ঢাকায় কোনো একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর জন্যই এই ফন্দি ফিকির বের করে ওই সংগঠনটি। আবার কেউ কেউ বলছেন, ঢাকা শহরে বড় সমাবেশের মাধ্যমে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তাদের। আর সমাবেশে লোক ভেড়াতেই এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন তারা।
সংগঠনটি দাবি করেছিল, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত এনে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিনাসুদে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। এ আশ্বাসে সাধারণ মানুষ বিশেষত গ্রামের বাসিন্দারা প্রলুব্ধ হন। তারা সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতি ব্যক্তি ১ হাজার টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফিও দেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার পর থেকেই বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঢাকায় যেতে শুরু করেন। রাত ১টা থেকে ভোরে শত শত মানুষ শাহবাগে এসে পেঁৗছাতে শুরু করেন। অধিকাংশই জানতেন না কী ঘটতে চলেছে, শুধু ঋণ পাওয়ার আশায় এসেছিলেন। এতে করে সকাল ৭টা থেকে শাহবাগ এলাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এলাকার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। পরে শাহবাগ থানার পুলিশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সমাবেশে আসা লোকজন জানান, তাঁদের বলা হয়েছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণ করলে বিনাসুদে ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়া হয়েছে। এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এই ঋণ পাওয়া আমাদের জীবনের বড় সুযোগ। তাই রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছি এবং এতদূর এসেছি।’
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনকে দুষছেন সচেতন মানুষ। তারা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, গতকাল রাতে ঢাকায় অন্তত ৮০০টি বাস ঢুকেছে। শাহবাগে আন্দোলন করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসব লোকজনকে আনা হয়েছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি জমায়েতের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সন্দেহজনক হওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরনের প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল।’
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম, অতীতেও এদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিনা সুদে ঋণের প্রলোভনে রাজধানীর শাহবাগে জনসমাগমের চেষ্টা

চুয়াডাঙ্গা—মেহেরপুর থেকে গিয়েও প্রতারিত বহু মানুষ

আপলোড টাইম : ০১:১৫:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে সাধারণ মানুষকে সমবেত করার চেষ্টা করেছে। এতে চুয়াডাঙ্গা থেকেও কয়েক হাজার মানুষ গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। ফরম পূরণের নামে চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আলাদা আলাদা মাঠকর্মীর নাটক সাজিয়ে নেয়া হয়েছিল মাত্র ১০ টাকা করে। তবে পরে সমাবেশে অংশগ্রহণের কথা বলে নেয়া হয়েছে এক হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি। আর ১ লাখ টাকার বিনা সুদের ঋণের প্রলোভনে পা দিয়ে এ অঞ্চলের অনেকেই ঠকেছেন। তবে পুলিশের পদক্ষেপ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শাহবাগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ফটোকপি করা একটি ফরম হাতে নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনা সুদে ১ লাখ টাকার ঋণ প্রদানের প্রলোভন দেখানো হয়। আর বিনা সুদে ১ লাখ টাকার ঋণের কথা শুনে অনেকেই পূরণ করেন ফরমটি। তবে পরবর্তীতে বোঝানো হয়, ঋণ নিতে হলে ঢাকার সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে হবে। সেখান থেকেই ঋণ দেয়া হবে। সে হিসেবে পরে রেজিস্ট্রেশন বাবদ এক হাজার টাকা করে জমা দেন সাধারণ মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের পৌরসভার পিছনে, রেলপাড়া, ইসলামপাড়া, সাতগাড়ি, দৌলতদিয়াড়সহ বিভিন্ন এলাকায় এই চক্র ফন্দি আটে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যারা মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন, তারাও বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। বীমা কর্মীর মতো সুবিধা দেয়া প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঋণের কথা প্রচারের জন্য পাঠানো হয়। মূলত, ঢাকায় কোনো একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটানোর জন্যই এই ফন্দি ফিকির বের করে ওই সংগঠনটি। আবার কেউ কেউ বলছেন, ঢাকা শহরে বড় সমাবেশের মাধ্যমে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল তাদের। আর সমাবেশে লোক ভেড়াতেই এই অভিনব পন্থা অবলম্বন করেন তারা।
সংগঠনটি দাবি করেছিল, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত এনে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বিনাসুদে এক লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। এ আশ্বাসে সাধারণ মানুষ বিশেষত গ্রামের বাসিন্দারা প্রলুব্ধ হন। তারা সমাবেশে অংশ নেওয়ার জন্য প্রতি ব্যক্তি ১ হাজার টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফিও দেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত একটার পর থেকেই বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ঢাকায় যেতে শুরু করেন। রাত ১টা থেকে ভোরে শত শত মানুষ শাহবাগে এসে পেঁৗছাতে শুরু করেন। অধিকাংশই জানতেন না কী ঘটতে চলেছে, শুধু ঋণ পাওয়ার আশায় এসেছিলেন। এতে করে সকাল ৭টা থেকে শাহবাগ এলাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এলাকার পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। পরে শাহবাগ থানার পুলিশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের বুঝিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সমাবেশে আসা লোকজন জানান, তাঁদের বলা হয়েছিল, সমাবেশে অংশগ্রহণ করলে বিনাসুদে ১ লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে। বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি নেওয়া হয়েছে। এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, এই ঋণ পাওয়া আমাদের জীবনের বড় সুযোগ। তাই রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছি এবং এতদূর এসেছি।’
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনকে দুষছেন সচেতন মানুষ। তারা বলছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি, গতকাল রাতে ঢাকায় অন্তত ৮০০টি বাস ঢুকেছে। শাহবাগে আন্দোলন করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসব লোকজনকে আনা হয়েছে। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি জমায়েতের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের কার্যক্রম সন্দেহজনক হওয়ায় অনুমতি দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরনের প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছিল।’
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, অহিংস গণঅভ্যুত্থান নামের সংগঠনটি আমাদের কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করার জন্য অনুমতিও চেয়েছিল। আমরা তাদের অতীত ঘেঁটে দেখলাম, অতীতেও এদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এরা এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ লোকদের থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। গাইবান্ধা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ সারা দেশ থেকে তারা লোকজন নিয়ে এসেছে।