আজ কামান্ন দিবস, ভয়াল সেই দিনের কথা মনে হলে অঁাতকে ওঠে গ্রামবাসী
২৭ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জনকে হত্যা করে পাক—বাহিনী
- আপলোড টাইম : ১২:৫৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ২১ বার পড়া হয়েছে
ভয়াল এক স্মৃতি নিয়ে বসবাস করছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কামান্না গ্রামবাসী। ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সময় কামান্না গ্রামে ২৭ মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জন করে হত্যা করে পাক—বাহিনী। সেই থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জেলা প্রশাসন ভয়াল এই দিনটিকে কামান্না দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামালুজ্জামান স্মৃতি চারণ করে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে ৩৫ জনের মতো স্বাধীনতাকামী যুবক সেনা কর্মকর্তা শমসের হোসেনের নেতৃত্বে আশ্রয় নেন কামান্না হাইস্কুলের পশ্চিমদিকে মাধব ভৌমিক ও কিরণ শিকদারের বাড়িতে। খবরটি শৈলকুপা রাজাকার ক্যাম্পে পেঁৗছাতে যায়। ফলে তৎকালীন মহকুমা শহর ঝিনাইদহ, শৈলকুপা ও মাগুরা থেকে কয়েকশ’ হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে মাধব ভৌমিকের বাড়ি। ভোর হতে না হতেই ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনী। ব্রাশফায়ার ও বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয় ২৭ মুক্তিযোদ্ধাসহ ২৯ জনকে। ঘটনার দিন ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।
কামান্না গ্রামে নিহতরা হলেন— ব্যবসায়ী ফণিভূষণ কুন্ডু, গৃহবধূ রঙ্গনেছার, মোমিন, কাদের, শহিদুল ইসলাম, সলেমান, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল ওয়াহেদ, রিয়াদ, আলমগীর হোসেন, আব্দুল মোতালেব, আলী হোসেন, শরিফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, আলিমুজ্জামান, তাজুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান, নাসিম, রাজ্জাক—২, কওসার আলী, আব্দুল মালেক, আব্দুল আজিজ, আকবর হোসেন, সেলিম, হোসেন, রাসেদ, গোলজার আহমেদ, অধির ও গৌর কুমার। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই মাগুরা জেলার হাজিপুর ও শ্রীপুর উপজেলার সন্তান ছিলেন।
এলাকাবাসী জানান, ফণিভূষণ কুন্ডু প্রতিদিনের মতোই নদির পাড়ে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়েছিলেন আর রঙ্গনেছা গিয়েছিলেন তার নতুন জামাইয়ের জন্য পিঠে বানানোর আতপ চাল ধুতে নদির ঘাটে। তাদের শত্রু ভেবেই হানাদাররা গুলি করে হত্যা করে। হানাদারদের গুলিতে আরও বেশকজন যুবক আহত হন। গুলিতে আহত আব্দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে ওই সময় সেবা দিয়েছিলেন পানু কাজির মা রাবেয়া খাতুন ওরফে সোনা কাজি, ছোট বোন বেনু কাজি এবং কাজি সিরাজ। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা বারইহুদা গ্রামের কলেজছাত্র বিশ^াস লুৎফর রহমান যিনি পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব হয়ে অবসরে গেছেন। কামান্নার গরকবরস্থানে নির্মিত হয়েছে শহিদ স্তম্ভ। সেখানে ২৭ শহিদ মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা আছে।
এদিকে ঝিনাইদহ এলজিইডি ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৯শ ৫০ টাকা ব্যয়ে কামান্না গ্রামে “মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিবিজড়িত কামান্না বাড়ি স্মৃতিসৌধ” নির্মাণ করে। আবার একই স্থানে ৬৫ লাখ টাকা খরচ করে ২৭ শহিদ স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছে। একই স্থানে দুটি স্মৃতিসৌধ বানানোর মানে খুঁজে পাচ্ছেন না জমিদাতা কাজি রাসেল ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এলাকাবাসী নতুন স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স তৈরির দাবি করেছেন।