ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঠিক বিচারের দাবি

চুয়াডাঙ্গায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে সভা

আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার জীবন আর তাদের রক্ত বৃথা যাবে না : জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফ

সমীকরণ প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা জাহান সুমাইয়া সভা সঞ্চালনা করেন।

সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) সিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সি আবু সাইফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম, সাংবাদিক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আহতরা বক্তব্য দেন।

স্মরণ সভায় ক্বারী কবীর হোসেন শহিদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া পরিচালনা করেন। সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট নয়ন কুমার রাজবংশী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা ও রাজধানী ঢাকায় সংঘটিত ঘটনার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন। স্মরণ সভায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যারা শহিদ এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের বিচার সঠিকভাবে হয়, সেই দাবি করেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঠিক বিচার দাবি করা হয়। তাদের আত্মত্যাগ যেন ভুলে না যায়, সে আহ্বান জানানো হয়।

স্মরণ সভায় জেলা জামায়াতের আামির রুহুল আমিন বলেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় ও দেশের জন্য জীবন দেয়, তাঁরা শহিদ। যারা পঙ্গু হয়েছেন, তাদের জন্য আমার কষ্ট। যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া করব। দেশে ৪০ হাজার আহত হয়েছে, তাদের স্মরণ করব। সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি নয়, নৈতিক পরিবর্তন হোক। যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদের স্যালুট জানাই।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ছাত্রদের স্যালুট জানাই। আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে পারিনি। আমরা মামলা দিলে কোর্ট থেকে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। যাদের নামে মামলা, তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। আহত ও শহিদদের প্রতি সুদৃষ্টি থাকবে। সরকারি চাকরি দেওয়ার সুযোগ থাকলে দেখবেন।’

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে একজন মা তার নিজের সন্তানকে হাসিমুখে অভ্যুত্থানে যেতে সাহস জুগিয়েছেন। বিগত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবই একজন মায়ের এমন সাহসি ভূমিকা তৈরি হয়েছে। তাই বর্তমান বাংলাদেশকে চিনতে হলে আগে মাকে চিনতে হবে। আন্দোলনে যে সকল পরিবারের একমাত্র সন্তান শহিদ হয়েছেন, সেই পরিবারের সাথে নিজের পরিবারকে দাঁড় করিয়ে একবার ভেবে দেখেন, তাদের কী অবস্থা। তিনি আরও বলেন, ‘যারা পাহাড়সম দুর্নীতি করে সম্পদ বানিয়েছেন, তারা এখন ভোগ করতে পারছেন না। পৃথিবীতে পালিয়ে যাওয়া কোনো স্বৈরাচার দ্বিতীবার আর ক্ষমতায় আসেনি’।

বিএনপি নেতা শরীফ আরও বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। তাই তাদের জীবন আর রক্ত বৃথা যাবে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের ঘটনার বর্ণনা শুনে চোখে পানি চলে আসছে। সরকারিভাবে সারাদেশে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গায় আহত ও শহিদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ৪২ জনের নাম প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্র-জনতা আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দুজন শহিদ হন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঠিক বিচারের দাবি

চুয়াডাঙ্গায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে সভা

আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার জীবন আর তাদের রক্ত বৃথা যাবে না : জেলা বিএনপির সম্পাদক শরীফ

আপলোড টাইম : ০৯:৩৪:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা জাহান সুমাইয়া সভা সঞ্চালনা করেন।

সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, অধ্যক্ষ (অবসরপ্রাপ্ত) সিদ্দিকুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক ড. মুন্সি আবু সাইফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক, সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম, সাংবাদিক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম এবং জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আহতরা বক্তব্য দেন।

স্মরণ সভায় ক্বারী কবীর হোসেন শহিদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া পরিচালনা করেন। সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট নয়ন কুমার রাজবংশী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহিদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আসলাম হোসেন অর্ক জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা ও রাজধানী ঢাকায় সংঘটিত ঘটনার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করেন। স্মরণ সভায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে যারা শহিদ এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের বিচার সঠিকভাবে হয়, সেই দাবি করেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সঠিক বিচার দাবি করা হয়। তাদের আত্মত্যাগ যেন ভুলে না যায়, সে আহ্বান জানানো হয়।

স্মরণ সভায় জেলা জামায়াতের আামির রুহুল আমিন বলেন, যারা আল্লাহর রাস্তায় ও দেশের জন্য জীবন দেয়, তাঁরা শহিদ। যারা পঙ্গু হয়েছেন, তাদের জন্য আমার কষ্ট। যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া করব। দেশে ৪০ হাজার আহত হয়েছে, তাদের স্মরণ করব। সরকারি কর্মকর্তাদের বদলি নয়, নৈতিক পরিবর্তন হোক। যারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন তাদের স্যালুট জানাই।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ছাত্রদের স্যালুট জানাই। আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে পারিনি। আমরা মামলা দিলে কোর্ট থেকে আসামিরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। যাদের নামে মামলা, তাদের গ্রেপ্তার করা হোক। আহত ও শহিদদের প্রতি সুদৃষ্টি থাকবে। সরকারি চাকরি দেওয়ার সুযোগ থাকলে দেখবেন।’

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে একজন মা তার নিজের সন্তানকে হাসিমুখে অভ্যুত্থানে যেতে সাহস জুগিয়েছেন। বিগত সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবই একজন মায়ের এমন সাহসি ভূমিকা তৈরি হয়েছে। তাই বর্তমান বাংলাদেশকে চিনতে হলে আগে মাকে চিনতে হবে। আন্দোলনে যে সকল পরিবারের একমাত্র সন্তান শহিদ হয়েছেন, সেই পরিবারের সাথে নিজের পরিবারকে দাঁড় করিয়ে একবার ভেবে দেখেন, তাদের কী অবস্থা। তিনি আরও বলেন, ‘যারা পাহাড়সম দুর্নীতি করে সম্পদ বানিয়েছেন, তারা এখন ভোগ করতে পারছেন না। পৃথিবীতে পালিয়ে যাওয়া কোনো স্বৈরাচার দ্বিতীবার আর ক্ষমতায় আসেনি’।

বিএনপি নেতা শরীফ আরও বলেন, হাজারো ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা একটা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। এই আন্দোলন করতে গিয়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। তাই তাদের জীবন আর রক্ত বৃথা যাবে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, আহত ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের ঘটনার বর্ণনা শুনে চোখে পানি চলে আসছে। সরকারিভাবে সারাদেশে ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গায় আহত ও শহিদদের পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চুয়াডাঙ্গায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ৪২ জনের নাম প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্র-জনতা আন্দোলনে রাজধানী ঢাকায় চুয়াডাঙ্গা জেলার দুজন শহিদ হন।