ইপেপার । আজ শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়তে থাকবে

বিএনপি তরুণদের কাছে দায়িত্ব দিতে চায় : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১১:৩১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৪৫ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়তে থাকবে। তাই দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, সব রাজনৈতিক দল মিলে আমরা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। দেশের মানুষের হাতে ক্ষমতা ফিরে যেতে নির্বাচন প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রস্তাব ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একজন শুরু করবে, আরেকজন টেনে নিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ও সত্যিকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে, জনগণ তবেই জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

তারের রহমান বলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন, আমরা কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। এর ফলে সংসদের যারা জনপ্রতিনিধি বাছাই হয়ে আসবে, তারা সংসদে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কীভাবে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের সমস্যা সমাধান করা যায়। সকল সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব প্রকৃত ও সত্যিকারের একটি নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। কিন্তু হটিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার তো থেমে নেই। দেশী ও বিদেশী দোসরদের নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি আর দরকার নির্বাচন। সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে বলে জানান তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দেশের রাজনীতির রুগ্ন বা অসুস্থ হলে দেশের সবকিছু অসুস্থ হয়ে যায়। তাকিয়ে দেখুন, স্বৈরাচার সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে এই রাজনৈতিক রুগ্নতার মাধ্যমে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দায়িত্ব নিতে হলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে আশপাশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। যদি এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারা যায়, তবেই মানুষ আপনাদের দায়িত্ব দিবে, অন্যথায় দ্বিতীয়বার ভাববে। নির্বাচনের পথ অনেকটা সংকটময় মন্তব্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, বিএনপিকে আচরণগত ও গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেকে বিএনপির সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অনেক পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতে হবে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগনের পাশে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দমন-পীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে এক ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার রূপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ, শেষে জনগণের রোষে তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। ফখরুল আরও বলেন, সংস্কার করার পর তা টেকসই করতে হলে জনগণের সমর্থন লাগবে, আর তা করতে পারবে নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট। বিএনপি নির্বাচন ক্ষমতার জন্য চায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপি নির্বাচন চায়। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন চায়। বিএনপি তরুণদের কাছে দায়িত্ব দিতে চায়, তরুণ ও ছাত্রদের সাথে কোনো সমস্যা নেই, শুধু জনগণের স্বার্থে, ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচন চায় বিএনপি। যারা আন্দোলনে ছিল, তাদের নিয়েই সরকার গঠন করে সংস্কার এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি।

দেশকে বাঁচাতে নির্বাচন চায়, বিএনপি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই দেশকে বাঁচাতে নির্বাচন চায় বিএনপি। স্পষ্ট করে বিএনপি বলতে চায়, চর্তুদিক থেকে ষড়যন্ত্র চলছে যা রুখে দিতে পারে জনগণ। জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্টই পারে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। বিএনপি যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। অনেক উপদেষ্টা বলছেন, সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হবে। এসময় তিনি উপদেষ্টাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তবে সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই গণতান্ত্রিক দল ছিল না। তারা ফ্যাসিবাদী দল। তাদের বডি কেমেস্ট্রিতে গণতন্ত্র নেই। পুরোটাই তারা ফ্যাসিবাদী।
আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৬ বছর কোথাও কুপিয়ে কোথাও গুলি করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা নির্যাতন গুম করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ। এছাড়াও পুলিশকে ব্যবহার করেও হত্যা করা হয়েছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জনরোষে পালিয়ে গিয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। তাই এসব থেকে আল্লাহর রহমতে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি খুলনা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুজ্জামান মনা, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল হাসান তনু ও দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট।

এর আগে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে সম্মেলনের শুরু হলে জাতীয় সংঙ্গীতের তালে তালে প্রথম জাতীয় পতাকা এবং বিএনপির দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত এবং গীতা থেকে পাঠ করা হয়। এরপর বিএনপির দলীয় সংঙ্গীত গাওয়া হয়। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আহত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ ও ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। পরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান দোয়া পরিচালনা করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুর জব্বার সোনা সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শহিদ ৯ নেতা-কর্মীর পরিবারকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৪ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। সম্মেলনে ৮০৮ জন কাউন্সিলর ও ১৩ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সম্মেলনস্থলের বাইরে চুয়াডাঙ্গা শহরজুড়ে লোকারণ্য অবস্থার সৃষ্টি হয়। শহরব্যাপী প্রায় ২০ হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সম্মেলনস্থলে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দ ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেখা যায়।

সম্মেলনে ১ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মেডিকেল ক্যাম্প ছিল। সম্মেললের নিরাপত্তায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনার বিভিন্ন ইউনিট। এছাড়া অভ্যর্থনা, মঞ্চ সাজসজ্জা, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, আপ্যায়ন এবং প্রচার-প্রকাশনায় ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ২০১০ সালে বঙ্গজ ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক এবং শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্যসচিব করে দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছর ২৭ জানুয়ারি আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা করে। প্রথম সভাতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩৬৯টি ওয়ার্ড, ৪১টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভা ও ৫টি থানায় প্রকাশ্য সম্মেলনের মধ্যদিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করা হয়। সেই টিম প্রকাশ্য সম্মেলন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়তে থাকবে

বিএনপি তরুণদের কাছে দায়িত্ব দিতে চায় : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

আপলোড টাইম : ১১:৩১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, ষড়যন্ত্র তত বাড়তে থাকবে। তাই দেশ ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, সব রাজনৈতিক দল মিলে আমরা এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিচ্ছি। দেশের মানুষের হাতে ক্ষমতা ফিরে যেতে নির্বাচন প্রয়োজন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রস্তাব ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। একজন শুরু করবে, আরেকজন টেনে নিয়ে যাবে। অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ ও সত্যিকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারলে, জনগণ তবেই জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।

তারের রহমান বলেন, অনেকের মনে প্রশ্ন, আমরা কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি। আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারবে। এর ফলে সংসদের যারা জনপ্রতিনিধি বাছাই হয়ে আসবে, তারা সংসদে বসে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, কীভাবে দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরের সমস্যা সমাধান করা যায়। সকল সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব প্রকৃত ও সত্যিকারের একটি নির্বাচনের মাধ্যমে। নির্বাচন যত দেরিতে হবে, ততই ষড়যন্ত্র বাড়বে। কারণ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি। কিন্তু হটিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার তো থেমে নেই। দেশী ও বিদেশী দোসরদের নিয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। দেশের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি আর দরকার নির্বাচন। সেটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে বলে জানান তিনি।

তারেক রহমান বলেন, দেশের রাজনীতির রুগ্ন বা অসুস্থ হলে দেশের সবকিছু অসুস্থ হয়ে যায়। তাকিয়ে দেখুন, স্বৈরাচার সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে এই রাজনৈতিক রুগ্নতার মাধ্যমে। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দায়িত্ব নিতে হলে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে আশপাশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। যদি এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারা যায়, তবেই মানুষ আপনাদের দায়িত্ব দিবে, অন্যথায় দ্বিতীয়বার ভাববে। নির্বাচনের পথ অনেকটা সংকটময় মন্তব্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, বিএনপিকে আচরণগত ও গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেকে বিএনপির সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অনেক পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতে হবে। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রত্যেককে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগনের পাশে থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দমন-পীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে এক ভয়ঙ্কর স্বৈরাচার রূপ নিয়েছিল আওয়ামী লীগ, শেষে জনগণের রোষে তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। ফখরুল আরও বলেন, সংস্কার করার পর তা টেকসই করতে হলে জনগণের সমর্থন লাগবে, আর তা করতে পারবে নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট। বিএনপি নির্বাচন ক্ষমতার জন্য চায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য বিএনপি নির্বাচন চায়। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন চায়। বিএনপি তরুণদের কাছে দায়িত্ব দিতে চায়, তরুণ ও ছাত্রদের সাথে কোনো সমস্যা নেই, শুধু জনগণের স্বার্থে, ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্বাচন চায় বিএনপি। যারা আন্দোলনে ছিল, তাদের নিয়েই সরকার গঠন করে সংস্কার এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি।

দেশকে বাঁচাতে নির্বাচন চায়, বিএনপি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তাই দেশকে বাঁচাতে নির্বাচন চায় বিএনপি। স্পষ্ট করে বিএনপি বলতে চায়, চর্তুদিক থেকে ষড়যন্ত্র চলছে যা রুখে দিতে পারে জনগণ। জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্টই পারে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। বিএনপি যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। অনেক উপদেষ্টা বলছেন, সংস্কার করে নির্বাচন দেওয়া হবে। এসময় তিনি উপদেষ্টাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, তবে সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনই গণতান্ত্রিক দল ছিল না। তারা ফ্যাসিবাদী দল। তাদের বডি কেমেস্ট্রিতে গণতন্ত্র নেই। পুরোটাই তারা ফ্যাসিবাদী।
আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৬ বছর কোথাও কুপিয়ে কোথাও গুলি করে হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা নির্যাতন গুম করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ। এছাড়াও পুলিশকে ব্যবহার করেও হত্যা করা হয়েছে। গায়েবি মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব নয়। তবে শেষ পর্যন্ত জনরোষে পালিয়ে গিয়েছে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ। তাই এসব থেকে আল্লাহর রহমতে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপি খুলনা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুজ্জামান মনা, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ। সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল হাসান তনু ও দর্শনা পৌর বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক হাবিবুর রহমান বুলেট।

এর আগে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে সম্মেলনের শুরু হলে জাতীয় সংঙ্গীতের তালে তালে প্রথম জাতীয় পতাকা এবং বিএনপির দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত এবং গীতা থেকে পাঠ করা হয়। এরপর বিএনপির দলীয় সংঙ্গীত গাওয়া হয়। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আহত অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ ও ব্যাচ পরিয়ে দেওয়া হয় জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বুলা। পরে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আবু সুফিয়ান দোয়া পরিচালনা করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খন্দকার আব্দুর জব্বার সোনা সাংগঠনিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শহিদ ৯ নেতা-কর্মীর পরিবারকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে উপহার তুলে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৪ বছর পর চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। সম্মেলনে ৮০৮ জন কাউন্সিলর ও ১৩ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সম্মেলনস্থলের বাইরে চুয়াডাঙ্গা শহরজুড়ে লোকারণ্য অবস্থার সৃষ্টি হয়। শহরব্যাপী প্রায় ২০ হাজার মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সম্মেলনস্থলে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দ ও সুশিল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেখা যায়।

সম্মেলনে ১ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মেডিকেল ক্যাম্প ছিল। সম্মেললের নিরাপত্তায় ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনার বিভিন্ন ইউনিট। এছাড়া অভ্যর্থনা, মঞ্চ সাজসজ্জা, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, আপ্যায়ন এবং প্রচার-প্রকাশনায় ৭টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ২০১০ সালে বঙ্গজ ফ্যাক্টরি প্রাঙ্গণে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর দলের সংকটকালীন মুহূর্তে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে আহ্বায়ক এবং শরীফুজ্জামান শরীফকে সদস্যসচিব করে দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই বছর ২৭ জানুয়ারি আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা করে। প্রথম সভাতেই চুয়াডাঙ্গা জেলার ৩৬৯টি ওয়ার্ড, ৪১টি ইউনিয়ন, ৪টি পৌরসভা ও ৫টি থানায় প্রকাশ্য সম্মেলনের মধ্যদিয়ে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করা হয়। সেই টিম প্রকাশ্য সম্মেলন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে।