বাড়ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা
- আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
ইউক্রেন যুদ্ধের সহগ্রতম দিন পার হলেও বন্ধের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধ বন্ধ হবে-এমন আশা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি দেওয়ার পর সেই আশাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এবার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনকে মনুষ্যবিহীন মাইন সরবরাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে পূর্ব ইউরোপে বাড়ছে পরমাণু হামলার শঙ্কা। পরিস্থিতি যেদিকে মোড় নিচ্ছে, তাতে সংঘাতে আরো অনেক দেশের জড়িয়ে পড়া আশ্চরে্যর নয়। আর সেটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। রুশ বিমান হামলার আশঙ্কা, চার দেশের দূতাবাস বন্ধ রাশিয়ায় মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ (এটিএসিএমএস) দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে তেমন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এ হামলা উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কারণ এর আগে মার্কিন অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলার ঘটনা ঘটেনি। বরং ইউক্রেনের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব সেই অনুমতি দেয়নি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বাইডেন ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে সেই অনুমতি দিয়ে যুদ্ধের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া তিনি ইউক্রেনকে মনুষ্যবিহীন মাইন দেওয়ার প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছেন। এক মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে এই মাইন ইউক্রেনের ভেতরেই ব্যবহার করতে হবে। যদিও জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকায় ব্যবহার করতে পারবে না প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির বাহিনী।
রাশিয়ার হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বুধবার বিমান হামলা হতে পারে বলে তথ্য পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে দূতাবাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল এমন পদক্ষেপ নেয় ওয়াশিংটন। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বলেছে, গতকাল বুধবার বিমান হামলা হতে পারে বলে সুনির্দিষ্ট করে তথ্য পেয়েছে তারা। এজন্য দ্রুত দূতাবাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আরো বলেছে, সতর্কতা হিসেবে দূতাবাস সাময়িক বন্ধ থাকবে। দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বিমান হামলাজনিত সতর্কসংকেত ঘোষণা করা মাত্রই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে মার্কিন নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সতর্কবার্তার পর ন্যাটো সদস্যভুক্ত আরো তিন দেশ গ্রিস, ইতালি এবং স্পেনও তাদের দূতাবাস বন্ধ করার ঘোষণা দেয়। কয়েক বার বিমান হামলার সতর্কতা দিতে সাইরেন বাজানো হয়। তিনটি দূতাবাসই তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে বন্ধের একই কারণ উল্লেখ করেছে।
ঘটনাচক্রে মঙ্গলবার ছিল রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের সহগ্রতম দিন। ঐদিন সকালে জেলেনস্কির বাহিনী আমেরিকার ‘আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম’ (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় হামলা চালায়। এর পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রত্যাঘাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো। এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের জন্য সামরিক বিধি সংশোধন করেছেন।
যুদ্ধ বন্ধের যে শর্ত রাশিয়ার:
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যেও আশা জাগিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন। এতে দাবি করা হয়, পাঁচ সাবেক ও বর্তমান রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্রেমলিন দ্বন্দ্ব মেটাতে রাজি হতে পারে। তবে প্রধান দুটি শর্ত রয়েছে পুতিনের। প্রথমত, যুদ্ধ অধিকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড ছাড়বে না রাশিয়া। পাশাপাশি কিয়েভ ন্যাটোয় যোগ দিতে পারবে না। বন্দি এবং ইউক্রেনে যুদ্ধরত প্রত্যেক রাশিয়ান সেনাকে নির্বিঘ্নে দেশে ফিরতে দিতে হবে। শান্তি ফেরাতে আমেরিকা-রাশিয়ার যে কোনো ধরনের চুক্তিতে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে ইউক্রেনকে। এই শর্তগুলো পূরণ হলে শান্তি ফিরতে পারে ইউক্রেনে।
রাশিয়ার বড় অগ্রগতি:
ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বা আইএসডব্লিউর তথ্যউপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ইউক্রেনের যে পরিমাণ ভূমি রাশিয়া দখল করেছিল তার চেয়ে অন্তত ছয় গুণ বেশি ভূমি চলতি বছরে তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তারা এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকায় দেশটির লজিস্টিক বা রসদ সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়ার তুুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন যে বিস্ময়কর অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিল, সেটি এখন নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ান বাহিনী তাদের পেছনের দিকে যেতে বাধ্য করছে। বিশ্লেষকরা কিয়েভের ঐ আক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। তারা এ পরিস্থিতিকে কৌশলগত বিপর্যয় উল্লেখ করে বলেছেন, এর ফলে ইউক্রেন এখন লোকবল-সংকটের মুখে পড়েছে।