খুলনা বিভাগীয় কওমি মাদরাসা পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পরপর তিনবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় শ্রেষ্ঠ পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদরাসা
- আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
- / ৫৪ বার পড়া হয়েছে
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-২০২৪ এর ৪৭তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গা জেলার শীর্ষস্থান অর্জন করেছে আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদরাসা। জেলার শীর্ষস্থান অর্জন করায় এ মাদরাসাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা একটায় যশোর সতীঘাটা আশরাফুল মাদারিস প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত খুলনা বিভাগীয় উলামা সম্মেলনে এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ নিয়ে পরপর তিনবার মাদরাসাটি জেলা পর্যায়ে শীর্ষস্থান অর্জন করলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসার শ্রেষ্ঠ উস্তাদ আল্লামা সায়্যেদ আরশাদ মাদানী এই সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। মাদরাসার পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদরাসার মুহতামিম আলহাজ্ব হাফেজ মো. ইনারুল ইসলাম ইন্না।
খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন কওমি মাদরাসার ১০ হাজার উলামা হযরত এই সম্মেলনে অংশ নেন। খুলনা বিভাগীয় কওমী মাদরাসা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মুশতাক আহমেদের সভাপতিত্বে বিভাগীয় উলামা সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমীয়া বাংলাদেশ এর কো-চেয়ারম্যান মাওলানা সাজিদুর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক ও বিশেষ আলোচক ছিলেন সহসভাপতি মাওলানা বাহা উদ্দিন জাকারিয়া।
সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, খুলনা বিভাগের উলামায়ে কিরামের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠন, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সব কওমি মাদরাসাকে বেফাকের সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে তালিম ও তরবিয়তের মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও বেফাকের মেধাভিত্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী এবং প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা, গায়রে বেফাক জামাতের পাঠ্যতালিকা যুগোপযোগী এবং মানসম্মত করা এবং কওমি মাদরাসা পরিষদের সুচিন্তিত মতামত বেফাকের কাছে উপস্থাপন করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এছাড়া বক্তারা, অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা গ্রহণ, মসজিদভিত্তিক দ্বীনি শিক্ষা চালু করা, সহীহ শুদ্ধ তিলাওয়াত এবং দ্বীনের মৌলিক শিক্ষাদান নিশ্চিত করা, শিশুশিক্ষার কাঠামো ঢেলে সাজানো এবং বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজনের বিষয়েও আলোচনা করেন। আলোচকরা কল্যাণ তহবিল গঠন এবং সংগঠনের গতিশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে আহ্বান করেন।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলার মধ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করায় মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন মাদরাসাটির পরিচালক বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর (বিডিচ্যাম)-এর প্রেসিডেন্ট, সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি, সাহিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান, হোটেল সাহিদ প্যালেস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান শামীম।
উল্লেখ্য, একটি সুন্দর দ্বীনি-শিক্ষার ভাবনা নিয়ে মৃত হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাস ২০০১ সালে মাত্র ১৩ জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক নিয়ে একটি চালা-ঘরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামে ‘পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম কওমিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা’ নামে দ্বীনি-শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১০ সালে হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের মৃত্যুর পর এই মাদরাসাটির পরিচালকের দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ও দানবীর হিসেবে খ্যাত আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। একজন সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তিনি পিতার সুস্বপ্নকে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মেধা ও শ্রম দিয়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়।
২০১১ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে মাদরাসাটিতে ছাত্রদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে তিন বেলা মাদরাসার সকল ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। বহুল ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিননন্দন পাঁচতলা একাডেমিক ভবন। এই ভবনে একসঙ্গে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান ও আবাসনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। খোলামেলা ও মনোরম পরিবেশে দৃশ্যমান এ মাদরাসাটির সুবিশাল খেলার মাঠসহ লাল সিরামিক ইট ও নান্দনিক ব্লকের গাঁথুনী নজর কাড়বে সবার। পাঠদান, থাকা ও খাওয়ার সুযোগ-সুবিধাসহ আধুনিক এই মাদরাসাটি ইতঃমধ্যেই সমাদৃত হচ্ছে সারা দেশব্যাপী। এই প্রতিষ্ঠানটির দ্বীনি-শিক্ষার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে, এমনটাই প্রত্যাশা মাদরাসা সংশ্লিষ্ট সকলের।