তৈরী পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষ: সংবেদনশীল হতে হবে
- আপলোড টাইম : ০৮:১২:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
- / ২৭ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ চলছেই। বকেয়া বেতন পরিশোধ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে তারা বিক্ষোভ করছেন, মহাসড়ক অবরোধ করছেন। গত মঙ্গলবারও চারটি কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেন। মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শুধু বিক্ষোভ বা সড়ক অবরোধ নয়, শ্রমিকদের একাংশ কারখানা ও গাড়ি ভাঙচুর করে, আগুন লাগিয়ে দেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৩ শ্রমিককে আটক করা হয়। এর আগে দু’জন শ্রমিক নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবির যৌক্তিকতা অস্বীকার করা যায় না। আমাদের দেশে শ্রমিকদের বেতন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। সুযোগ-সুবিধা বা কর্মপরিবেশও তীব্র অভাব রয়েছে। তবু কারখানাগুলো লাভজনক তাতে সন্দেহ নেই। শ্রমিকদের হাত ধরে এটি দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাতে পরিণত হতে পেরেছে। সে তুলনায় তাদের প্রাপ্তি সামান্য। বিষয়টি গুরুত্ব হওয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত সেপ্টেম্বরে আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে সমঝোতা করে দেয়। প্রতিটি গার্মেন্ট কারখানার নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা। সংশ্লিষ্ট কারখানা মালিকদের বক্তব্য অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ কারখানা যথারীতি বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। নানা কারণে ১০ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। এখানে আসে পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রশ্ন। সমস্যায় পড়া কারখানার শ্রমিকরা যদি নিজের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা বুঝতে না চান তাহলে সঙ্কট আরো গভীর হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পুরো সময়জুড়ে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান গভীর খাদে পড়ে। কোভিড মহামারীর সময়ও নাজুক অবস্থায় পড়ে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা অর্ধেক বেতনে কিংবা তার চেয়েও কম নিয়ে প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখেছেন। তেমনি যদি কোনো তৈরী পোশাক কারখানা এমন পরিস্থতির মুখোমুখি হয় তা হলে গার্মেন্টকর্মীরা তা উপেক্ষা করতে পারেন না। স্বৈরাচারের ১৫ বছরে গ্যাস বিদ্যুতের মতো অবকাঠামো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তাতে গার্মেন্ট খাত সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে। ব্যাংক খাত প্রায় পুরো ধসে পড়ে। এখনো এলসি খোলা, এমনকি গ্রাহকের আমানতের টাকাও দিতে পারছে না অনেক ব্যাংক। গার্মেন্ট মালিকদের কারো কারো এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। শ্রমিকদের সেসব বুঝতে হবে। মালিককেও বুঝতে হবে শ্রমিকদের অসহায়ত্ব। কারণ তাদের সংসার চালাতে হয়। স্বৈরাচারের পতনের পর তাদের দোসররা দেশে নানাভাবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অনেকের ধারণা, এসব অপচেষ্টার একটি হাতিয়ার গার্মেন্ট শ্রমিকরা। বাইরে থেকে উসকানি ও ইন্ধন দিয়ে এক শ্রেণীর গার্মেন্ট শ্রমিককে মাঠে নামানো হচ্ছে। তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছেন। শুধু স্বৈরাচারের দোসররা নয়, আমাদের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের পেছনে বাইরের একটি শক্তিরও ইন্ধন আছে। এদেশে গার্মেন্ট শিল্প পথে বসে গেলে কোন শক্তি লাভবান হবে সেটি সচেতন কোনো নাগরিকের না বোঝার কথা নয়। গার্মেন্টশ্রমিকদের বিষয়টি মনে রাখা দরকার। কারো উসকানিতে তারা যেন নিজের পাশাপাশি দেশের ক্ষতি না করেন তা খেয়াল রাখা জরুরি ।