ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চব্বিশের গণহত্যার বিচার: ন্যায্যতা নিশ্চিতের অবারিত সুযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৫৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠন করে শেখ হাসিনা সরকার। ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময়ই দেশ-বিদেশে স্পষ্ট হয়, শেখ হাসিনা এ আদালত প্রতিষ্ঠা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করতে। বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যেনতেনভাবে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য। তাই করা হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ বিচারে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা মূলত বিচারিক হত্যা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। স্কাইপ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীকে গুম, সেইফ হাউজে সাক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, গণজাগরণ মঞ্চের নাটক এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। যে কারণে দেশ-বিদেশে যুদ্ধাপরাধের ওই বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সময় পাল্টেছে। যে আওয়ামী লীগ গণহত্যার বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল, সেই আওয়ামী লীগ এখন গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। আনুষ্ঠানিক বিচারের প্রথম দিনে গত সোমবার ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও আমলারা। আদালত গণহত্যার মামলার পলাতক প্রধান আসামি শেখ হাসিনার গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চান। তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। আদালতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, অভিযুক্তদের সক্রিয় অংশগ্রহণে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে গোটা জাতিকে হত্যা করতে তাদের দ্বিধা ছিল না। গত সাড়ে ১৫ বছরের সব অপরাধের কেন্দ্রে ছিলেন শেখ হাসিনা, আর মন্ত্রী-এমপিরা ছিলেন সহযোগী। শুধু জুলাই-আগস্ট নয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশে অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে যার শুরু। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হাসিনা। গত সাড়ে ১৫ বছরে তার শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যা ঘটেনি। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছেন। আহতদের অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। শত শত মানুষ চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা এবং আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নতুন কলঙ্কের ইতিহাস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে ঘোষণা দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্র-জনতাকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন রুখতে গণহত্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আমরা মনে করি, চব্বিশের গণহত্যার বিচারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে আওয়ামী লীগের মতো কোনো মিথ্যা, প্রতারণা কিংবা চাতুরীর আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন নেই। এবারের গণহত্যার ন্যায়বিচার ন্যায্যতার ভিত্তিতে করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিচার নিয়ে কেউ যেন বিতর্কের সৃষ্টি করতে না পারেন সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চব্বিশের গণহত্যার বিচার: ন্যায্যতা নিশ্চিতের অবারিত সুযোগ

আপলোড টাইম : ০৭:৫৫:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গঠন করে শেখ হাসিনা সরকার। ট্রাইব্যুনাল গঠনের সময়ই দেশ-বিদেশে স্পষ্ট হয়, শেখ হাসিনা এ আদালত প্রতিষ্ঠা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি নিশ্চিহ্ন করতে। বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যেনতেনভাবে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য। তাই করা হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ বিচারে জামায়াত নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা মূলত বিচারিক হত্যা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। স্কাইপ কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষীকে গুম, সেইফ হাউজে সাক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেয়া, গণজাগরণ মঞ্চের নাটক এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছাড়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। যে কারণে দেশ-বিদেশে যুদ্ধাপরাধের ওই বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সময় পাল্টেছে। যে আওয়ামী লীগ গণহত্যার বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল, সেই আওয়ামী লীগ এখন গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে। আনুষ্ঠানিক বিচারের প্রথম দিনে গত সোমবার ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়, যাদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও আমলারা। আদালত গণহত্যার মামলার পলাতক প্রধান আসামি শেখ হাসিনার গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চান। তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করার নির্দেশ দেন। আদালতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেছেন, অভিযুক্তদের সক্রিয় অংশগ্রহণে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। এক ব্যক্তিকে ক্ষমতায় রাখতে গোটা জাতিকে হত্যা করতে তাদের দ্বিধা ছিল না। গত সাড়ে ১৫ বছরের সব অপরাধের কেন্দ্রে ছিলেন শেখ হাসিনা, আর মন্ত্রী-এমপিরা ছিলেন সহযোগী। শুধু জুলাই-আগস্ট নয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে দেশে অসংখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিয়ে যার শুরু। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন হাসিনা। গত সাড়ে ১৫ বছরে তার শাসনামলে এমন কোনো মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই যা ঘটেনি। সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা এবং ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে আহত করেছেন। আহতদের অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। শত শত মানুষ চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। জুলাই-আগস্টে গণহত্যা এবং আন্দোলন দমাতে আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নতুন কলঙ্কের ইতিহাস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে ঘোষণা দিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্র-জনতাকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন রুখতে গণহত্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আমরা মনে করি, চব্বিশের গণহত্যার বিচারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে আওয়ামী লীগের মতো কোনো মিথ্যা, প্রতারণা কিংবা চাতুরীর আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন নেই। এবারের গণহত্যার ন্যায়বিচার ন্যায্যতার ভিত্তিতে করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বিচার নিয়ে কেউ যেন বিতর্কের সৃষ্টি করতে না পারেন সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।