ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

কার্পাসডাঙ্গার যুবলীগ ক্যাডার বালি জব্বার বিএনপিতে ঢুকতে মরিয়া

স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৫:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৮৫ বার পড়া হয়েছে

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার বিএনপিতে প্রবেশে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিএনপিতে আজীবন থাকার ঘোষণার সংবাদও করেছেন। এ নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নসহ দামুড়হুদা উপজেলাজুড়ে। একটি পক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগের সময় ক্যাডারগিরি করে অনৈতিক সুবিধা নেয়া, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে আবার বিএনপিতে ঢুকে অস্তিত্ব তথা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পায়তারা করছেন এই যুবলীগ ক্যাডার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জব্বার খাবলী এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা নিতে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাগিয়ে নেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। তার যুবলীগের পদ পাওয়া নিয়ে সে সময় যুবলীগের মধ্যেই সমালোচনা তৈরি হয়। তবে বালি জব্বার ভল পাল্টে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ত্রাস। যুবলীগের পদ পেয়ে জব্বার খাবলী হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। কখনো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দুলাভাই পরিচয়, কখনো বন্ধু পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন পুরো এলাকা। ভৈরব নদ থেকে অর্ধকোটি টাকার মাটি ও বালি বিক্রি করে নাম হয়ে যায় বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুকে ম্যানেজ করে ভৈরব নদ থেকে কোটি টাকার বালি ও মাটি বিক্রি করেন জাব্বার। জব্বারের ভয়ে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না। কারণ জব্বার একাই ভয়ংকর নয়, তার আপন সহোদর কালাম খাবলি ছিলেন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায়। তিনি গত বছরে মারা গেছেন। তার মাও একসময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার দুলাভাই শীর্ষ মাদক কারবারি বারেক খাবলি ক্রসফায়ারে মারা যান। যার কারণে এলাকার লোক তার ভয়ে তটস্থ থাকে।
এদিকে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জব্বার খাবলির রাজত্বে ভাটা পড়তে থাকে। হারিয়ে যায় দাপট আর ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার দাপটকে ফেরাতে তিনি বিএনপিতে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ রয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালীর সাথে ইতোমধ্যেই পারিবারিক দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা দেখিয়ে লিয়াঁজুর নাটক সাজিয়েছেন। আবার কদিন আগে এই যুবলীগ ক্যাডার গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বিএনপিতে আজীবন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে বালু জব্বার খাবলির বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টাকে কোনোভাবেই মানতে নারাজ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করছেন জব্বার যদি কোনো উপায়ে বিএনপিতে প্রবেশের সুযোগ পাই, কারো মাধ্যমে তবে তার বিতর্কিত কর্মকাÐে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে ও নির্বাচনে বিএনপির ভোট নষ্ট হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মী বলেন, এই জব্বার এতোদিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে। অবৈধভাবে বালি বিক্রিসহ নানা অভিযোগ আছে এই লোকের নামে। তার ভয়ে আওয়ামী লীগের সময় কেউ মুখ খোলেনি। এই লোক টাকা দিয়ে লিঁয়াজু করে বিএনপিতে আসার চেষ্টা করছে। যা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে রাজি নয়।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের লোকজন দীর্ঘ বছর থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। পরিস্থিতির কারণে আমাকে ওয়ার্ড যুবলীগের পদ নিতে হয়। আমি সে পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। যদি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলে মেনেও না নেই তবুও আমি আজীবন বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমৃত্যু দলের সাথে থাকব।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কার্পাসডাঙ্গার যুবলীগ ক্যাডার বালি জব্বার বিএনপিতে ঢুকতে মরিয়া

স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ

আপলোড টাইম : ০৯:১৫:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার বিএনপিতে প্রবেশে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিএনপিতে আজীবন থাকার ঘোষণার সংবাদও করেছেন। এ নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নসহ দামুড়হুদা উপজেলাজুড়ে। একটি পক্ষ বলছে, আওয়ামী লীগের সময় ক্যাডারগিরি করে অনৈতিক সুবিধা নেয়া, চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ রয়েছে এই বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে আবার বিএনপিতে ঢুকে অস্তিত্ব তথা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার পায়তারা করছেন এই যুবলীগ ক্যাডার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জব্বার খাবলী এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা নিতে তিনি মরিয়া হয়ে ওঠেন। মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাগিয়ে নেন ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। তার যুবলীগের পদ পাওয়া নিয়ে সে সময় যুবলীগের মধ্যেই সমালোচনা তৈরি হয়। তবে বালি জব্বার ভল পাল্টে হয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা। যুবলীগ ক্যাডার হিসেবে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন ত্রাস। যুবলীগের পদ পেয়ে জব্বার খাবলী হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। কখনো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দুলাভাই পরিচয়, কখনো বন্ধু পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন পুরো এলাকা। ভৈরব নদ থেকে অর্ধকোটি টাকার মাটি ও বালি বিক্রি করে নাম হয়ে যায় বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবুকে ম্যানেজ করে ভৈরব নদ থেকে কোটি টাকার বালি ও মাটি বিক্রি করেন জাব্বার। জব্বারের ভয়ে এলাকার কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস করে না। কারণ জব্বার একাই ভয়ংকর নয়, তার আপন সহোদর কালাম খাবলি ছিলেন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায়। তিনি গত বছরে মারা গেছেন। তার মাও একসময় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার দুলাভাই শীর্ষ মাদক কারবারি বারেক খাবলি ক্রসফায়ারে মারা যান। যার কারণে এলাকার লোক তার ভয়ে তটস্থ থাকে।
এদিকে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জব্বার খাবলির রাজত্বে ভাটা পড়তে থাকে। হারিয়ে যায় দাপট আর ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার দাপটকে ফেরাতে তিনি বিএনপিতে প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অভিযোগ রয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালীর সাথে ইতোমধ্যেই পারিবারিক দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা দেখিয়ে লিয়াঁজুর নাটক সাজিয়েছেন। আবার কদিন আগে এই যুবলীগ ক্যাডার গণমাধ্যমকর্মীদের ডেকে বিএনপিতে আজীবন থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে বালু জব্বার খাবলির বিএনপিতে প্রবেশের চেষ্টাকে কোনোভাবেই মানতে নারাজ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তারা মনে করছেন জব্বার যদি কোনো উপায়ে বিএনপিতে প্রবেশের সুযোগ পাই, কারো মাধ্যমে তবে তার বিতর্কিত কর্মকাÐে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে ও নির্বাচনে বিএনপির ভোট নষ্ট হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতা-কর্মী বলেন, এই জব্বার এতোদিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে। অবৈধভাবে বালি বিক্রিসহ নানা অভিযোগ আছে এই লোকের নামে। তার ভয়ে আওয়ামী লীগের সময় কেউ মুখ খোলেনি। এই লোক টাকা দিয়ে লিঁয়াজু করে বিএনপিতে আসার চেষ্টা করছে। যা স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে রাজি নয়।
কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বালি জব্বার ওরফে কালো জব্বার বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের লোকজন দীর্ঘ বছর থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। পরিস্থিতির কারণে আমাকে ওয়ার্ড যুবলীগের পদ নিতে হয়। আমি সে পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। যদি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলে মেনেও না নেই তবুও আমি আজীবন বিএনপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে বিএনপির একজন ক্ষুদ্র কর্মী হিসেবে আমৃত্যু দলের সাথে থাকব।’