ইপেপার । আজ শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

সাবেক এমপি টগরের অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ‘হত্যা’

পিতার খুনিদের বিচার চাইলো ৬ বছরের শিশু রুশা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৩:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগর টগরের অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. রোকনুজ্জামান। এ কারণেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারাতে হয় তাকে। এক বছর বয়সে বাবা হারানো রুশার কিছুই মনে নেই। তবুও তার মুখে শোনা গেল, ‘আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই।’

রোকনুজ্জামানের পিতা আবু বক্কর বলেন, ‘আমার ছেলে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সে সবসময় আলী আজগার টগরের বেআইনি কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতো। টগরের সঙ্গে তার মতের ভিন্নতাও ছিল। ফলে সাবেক এমপি আলী আজগারের পেটুয়া বাহিনী ও দামুড়হুদা থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস প্রায়ই রোকনুজ্জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট দুপুরে আমার ছেলে রোকনুজ্জামানকে স্থানীয় আওয়ামী ক্যাডার সজল গং মোবাইল ফোনে কৌশলে ডেকে দক্ষিণ চাঁদপুরের ছটাঙ্গার মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর সজল গং অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করে। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন লোকমুখে শুনি, দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলার বখতিয়ার মিয়ার বাঁশবাগানে পুলিশ নাকি একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আমার ছেলের লাশ শনাক্ত করি।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রোকনুজ্জামানের মা রুশিয়া পারভীনের সঙ্গে। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমি খুনিদের বিচার চাই।’ রোকনুজ্জামানের ছয় বছরের শিশুকন্যা রুশা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই।’

এলাকাবাসী জানান, ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোকনুজ্জামানকে হত্যা করতে কৌশলে অপহরণ করা হয়। সাবেক এমপি আলী আজগার টগরের নির্দেশে ওসি সুকুমার বিশ্বাসসহ পুলিশ সদস্যরা রোকনুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করেছে।’ এ ঘটনায় মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত ছাত্র রোকনুজ্জামানের বাবা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক। মামলার অপর আসামিরা হলেন- দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস, দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) কে.এম জাহাঙ্গীর, উপ-পরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার নন্দী, শেখ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল দিপু গাঙ্গুলি, খালিদ মাসুদ, নজরুল ইসলাম, শফিউর রহমান ও ফিরোজ ইকবাল, এবং আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের মাছুম, সুমন, রাজিব ও সজল।

মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা কামাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রেশমা শারমিন পিপিএম-সেবা বলেন, ‘মামলার যাবতীয় কাগজপত্র আমরা পেয়েছি, বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সাবেক এমপি টগরের অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ‘হত্যা’

পিতার খুনিদের বিচার চাইলো ৬ বছরের শিশু রুশা

আপলোড টাইম : ০৮:২৩:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক এমপি আলী আজগর টগরের অনৈতিক কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মো. রোকনুজ্জামান। এ কারণেই কথিত বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারাতে হয় তাকে। এক বছর বয়সে বাবা হারানো রুশার কিছুই মনে নেই। তবুও তার মুখে শোনা গেল, ‘আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই।’

রোকনুজ্জামানের পিতা আবু বক্কর বলেন, ‘আমার ছেলে ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। সে সবসময় আলী আজগার টগরের বেআইনি কার্যকলাপ ও চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করতো। টগরের সঙ্গে তার মতের ভিন্নতাও ছিল। ফলে সাবেক এমপি আলী আজগারের পেটুয়া বাহিনী ও দামুড়হুদা থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস প্রায়ই রোকনুজ্জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট দুপুরে আমার ছেলে রোকনুজ্জামানকে স্থানীয় আওয়ামী ক্যাডার সজল গং মোবাইল ফোনে কৌশলে ডেকে দক্ষিণ চাঁদপুরের ছটাঙ্গার মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে পৌঁছানোর পর সজল গং অস্ত্রের মুখে তাকে অপহরণ করে। এরপর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন লোকমুখে শুনি, দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঁঠালতলার বখতিয়ার মিয়ার বাঁশবাগানে পুলিশ নাকি একজনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এরপর সদর হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আমার ছেলের লাশ শনাক্ত করি।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রোকনুজ্জামানের মা রুশিয়া পারভীনের সঙ্গে। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমি খুনিদের বিচার চাই।’ রোকনুজ্জামানের ছয় বছরের শিশুকন্যা রুশা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই।’

এলাকাবাসী জানান, ‘পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রোকনুজ্জামানকে হত্যা করতে কৌশলে অপহরণ করা হয়। সাবেক এমপি আলী আজগার টগরের নির্দেশে ওসি সুকুমার বিশ্বাসসহ পুলিশ সদস্যরা রোকনুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করেছে।’ এ ঘটনায় মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট দামুড়হুদা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা আমলি আদালতে মামলাটি দায়ের করেন নিহত ছাত্র রোকনুজ্জামানের বাবা মো. আবু বক্কর ছিদ্দিক। মামলার অপর আসামিরা হলেন- দামুড়হুদা মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস, দামুড়হুদা মডেল থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) কে.এম জাহাঙ্গীর, উপ-পরিদর্শক (এসআই) তপন কুমার নন্দী, শেখ রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল দিপু গাঙ্গুলি, খালিদ মাসুদ, নজরুল ইসলাম, শফিউর রহমান ও ফিরোজ ইকবাল, এবং আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুরের মাছুম, সুমন, রাজিব ও সজল।

মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা কামাল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রেশমা শারমিন পিপিএম-সেবা বলেন, ‘মামলার যাবতীয় কাগজপত্র আমরা পেয়েছি, বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে।’