ইপেপার । আজ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা মামলায় আদালতে দুই চাচাতো ভাইয়ের স্বীকারোক্তি

শারীরিক সম্পর্কের পর টাকা চাওয়ায় শ্বাসরোধে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা মামলায় মানিক আলী মুন্সি (২২) ও পারভেজ মহাসিন স্বপন (১৯) নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃত মানিক আলী মুন্সি হাজরাহাটি শেখপাড়ার টোকন আলী মুন্সির ছেলে এবং পারভেজ মহাসিন স্বপন একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃতরা সম্পর্কে একে অপরের চাচাতো ভাই।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর দুপুরে খালেদা আক্তার মুন্নি হাটবোয়ালিয়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানান, রাতে তিনি বাড়ি ফিরবেন না। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের চরের মাঠের একটি পানবরজের ঝোপে স্থানীয়রা অর্ধগলিত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মরদেহের পাশে থাকা একটি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নম্বর ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার উদ্ধার করে। এগুলোর সূত্র ধরেই ডিবি পুলিশ মুন্নির পরিচয় নিশ্চিত করে এবং দুই হত্যাকারীকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানিক ও স্বপন জানান, তারা মুন্নিকে বোয়ালমারী গ্রামের একটি চরের মাঠে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর মুন্নি তাদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দাবি করলে তারা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর মানিক মরদেহের পায়ের নুপুর, আংটি এবং নগদ টাকা নেয়। এরপর দুই ভাই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার মুন্নির মা আহারণ নেছা বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই আসামিকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার শুনানিতে বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামাল আসামিদের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মুন্নি আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত খোয়াজ আলীর ছোট মেয়ে। দুই বছর আগে আসিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, তবে ছয় মাস পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে তিনি মায়ের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। বৃহস্পতিবার মুন্নির মরদেহ উদ্ধারের পর একই দিনে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করে পরিবার।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) হোসেন আলী বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে মুন্নির পূর্ব পরিচয় ছিল। এর সূত্র ধরেই তারা শারীরিক সম্পর্কের জন্য মুন্নিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় এবং শারীরিক সম্পর্কের পর টাকা চাইলে মানিক ও স্বপন মুন্নিকে হত্যা করে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজন মুন্নিকে হত্যায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা দুজনই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমারা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্ত করছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা মামলায় আদালতে দুই চাচাতো ভাইয়ের স্বীকারোক্তি

শারীরিক সম্পর্কের পর টাকা চাওয়ায় শ্বাসরোধে হত্যা

আপলোড টাইম : ০৮:০৯:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত মুন্নি হত্যা মামলায় মানিক আলী মুন্সি (২২) ও পারভেজ মহাসিন স্বপন (১৯) নামের দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল শুক্রবার ভোরে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি শেখপাড়ায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরে শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃত মানিক আলী মুন্সি হাজরাহাটি শেখপাড়ার টোকন আলী মুন্সির ছেলে এবং পারভেজ মহাসিন স্বপন একই এলাকার মইদুল ইসলামের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃতরা সম্পর্কে একে অপরের চাচাতো ভাই।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর দুপুরে খালেদা আক্তার মুন্নি হাটবোয়ালিয়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। ওইদিন সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানান, রাতে তিনি বাড়ি ফিরবেন না। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর গত বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের চরের মাঠের একটি পানবরজের ঝোপে স্থানীয়রা অর্ধগলিত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মরদেহের পাশে থাকা একটি ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মোবাইল নম্বর ও স্বর্ণের দোকানের ক্যাশ ভাউচার উদ্ধার করে। এগুলোর সূত্র ধরেই ডিবি পুলিশ মুন্নির পরিচয় নিশ্চিত করে এবং দুই হত্যাকারীকে শনাক্তের পর গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মানিক ও স্বপন জানান, তারা মুন্নিকে বোয়ালমারী গ্রামের একটি চরের মাঠে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এরপর মুন্নি তাদের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী টাকা দাবি করলে তারা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর মানিক মরদেহের পায়ের নুপুর, আংটি এবং নগদ টাকা নেয়। এরপর দুই ভাই সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার মুন্নির মা আহারণ নেছা বাদী হয়ে সদর থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই আসামিকে চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার শুনানিতে বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তফা কামাল আসামিদের স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

হত্যাকাণ্ডের শিকার মুন্নি আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের মৃত খোয়াজ আলীর ছোট মেয়ে। দুই বছর আগে আসিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়, তবে ছয় মাস পর তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর থেকে তিনি মায়ের সঙ্গে বসবাস করছিলেন। বৃহস্পতিবার মুন্নির মরদেহ উদ্ধারের পর একই দিনে ময়নাতদন্ত শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাকে দাফন করে পরিবার।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) হোসেন আলী বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামি আদালতে নিজেদের জড়িয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে মুন্নির পূর্ব পরিচয় ছিল। এর সূত্র ধরেই তারা শারীরিক সম্পর্কের জন্য মুন্নিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায় এবং শারীরিক সম্পর্কের পর টাকা চাইলে মানিক ও স্বপন মুন্নিকে হত্যা করে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজন মুন্নিকে হত্যায় নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তারা দুজনই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমারা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্ত করছি।’