ইপেপার । আজ রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫

লোকবলের অভাবে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগী!

১১ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিপরীতে আছে মাত্র একজন

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

লোকবলের অভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ফলে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসারের পোস্ট রয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে ৯টি খালি। বাকি ১৪ জনের মধ্যে একজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২ জন প্রেষণে রয়েছেন ঝিনাইদহ শিশু ও সদর হাসপাতালে।
এদিকে, হাসপাতালে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি থাকায় উপজেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন। এতে সেখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না। গর্ভবতী মায়েরা ক্লিনিকে সিজার করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর চলে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে। ফলে হাসপাতালে যথাযথ সেবা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যায় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

হাসপাতালে সুইপারের দুটি পদ খালি রয়েছে। এতে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। ফলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট রয়েছে। নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকারও মাঝেমধ্যে সংকট দেখা যায়।

শৈলকুপার আসানগর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, ডায়াবেটিকস ও প্রেসারের ওষুধ না থাকায় হতদরিদ্রদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। নাজমুল হোসেন নামে এক রোগী জানান, হাসপাতালে রয়েছে পুরাতন মডেলের একটি এক্সরে মেশিন। এই পুরাতন মেশিন দিয়ে ঠিকমতো এক্স-রে করা যায় না। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রিপোর্টেও আসে ভুলভাল। লোডশেডিংয়ের বিপরীতে জেনারেটর থাকলেও তেল বরাদ্দ নেই। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকে রোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই নেই নেই সংকটের কারণে হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা হাসপাতালে আসা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা আমরা দিতে পারছি না। তবুও সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব তা রোগীদের দিচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশরা করা যায় দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

লোকবলের অভাবে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগী!

১১ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের বিপরীতে আছে মাত্র একজন

আপলোড টাইম : ১০:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লোকবলের অভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ফলে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসারের পোস্ট রয়েছে ২৩টি। এর মধ্যে ৯টি খালি। বাকি ১৪ জনের মধ্যে একজন চিকিৎসককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ২ জন প্রেষণে রয়েছেন ঝিনাইদহ শিশু ও সদর হাসপাতালে।
এদিকে, হাসপাতালে ১১ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র একজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১০টি পদ খালি থাকায় উপজেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া পদ খালি রয়েছে দীর্ঘদিন। এতে সেখানে নিয়মিত সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে না। গর্ভবতী মায়েরা ক্লিনিকে সিজার করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালটিতে সবসময় ধারণক্ষমতার বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের আউটডোর চলে উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে। ফলে হাসপাতালে যথাযথ সেবা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যায় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে।

হাসপাতালে সুইপারের দুটি পদ খালি রয়েছে। এতে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। ফলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার কীট সংকট রয়েছে। নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকারও মাঝেমধ্যে সংকট দেখা যায়।

শৈলকুপার আসানগর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, ডায়াবেটিকস ও প্রেসারের ওষুধ না থাকায় হতদরিদ্রদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। নাজমুল হোসেন নামে এক রোগী জানান, হাসপাতালে রয়েছে পুরাতন মডেলের একটি এক্সরে মেশিন। এই পুরাতন মেশিন দিয়ে ঠিকমতো এক্স-রে করা যায় না। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। রিপোর্টেও আসে ভুলভাল। লোডশেডিংয়ের বিপরীতে জেনারেটর থাকলেও তেল বরাদ্দ নেই। ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকে রোগীরা।
অভিযোগ রয়েছে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই নেই নেই সংকটের কারণে হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন দালাল সক্রিয় রয়েছে। তারা হাসপাতালে আসা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন বলেন, শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি জনবল সংকট রয়েছে। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা আমরা দিতে পারছি না। তবুও সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সেবা দেওয়া সম্ভব তা রোগীদের দিচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। আশরা করা যায় দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।