ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইন্টারনেট সেবায় ঘাটতি: দাম ও মান যৌক্তিক করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩৮ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ বাজারে দাম কমেছে বলে শোনা যাচ্ছে। পত্রিকান্তরের খবরে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যান্ডউইথের উচ্চ দাম এখনো নির্ধারিত আছে। শুধু মোবাইল অপারেটরদের জন্য দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের জন্য ব্যান্ডউইথের দাম ২০০ টাকা! আর একই সেবা দিতে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যান্ডউইথ কিনতে হয় ৩৬৫ টাকায়। এ অবস্থায় ইন্টারনেটের দাম কমানো নিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা বিরাজ করছে মনে হয়। আজ রোববার বিটিআরসিতে বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। পরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
বিটিআরসির নতুন চেয়ারম্যান নিজেও মনে করেন, ইন্টারনেটের দাম পানির দরে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগী হলে ব্যান্ডউইথের দাম কমানো সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং ব্যবহার বাড়ানো দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে প্রতিটি দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণদের মেধা এ ক্ষেত্রে কারো চেয়ে ন্যূন নয়; বরং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা বিশ্বে সেরা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম। এর নমুনা আমরা বহুবার দেখেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তরুণরা পিছিয়ে নেই। তাদের জন্য শুধু সুযোগটা তৈরি করে দিতে হবে।
পতিত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের নামে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং বিপুল অর্থ লুটপাট করলেও কাজের কাজ কিছু করেনি। তাদের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। একটু আধটু নয়, সাত গুণ বেশি। ইন্টারনেটের গতিও ছিল অন্য সব দেশের চেয়ে কম। বিগত সরকার মাঝে মাঝে দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে দাম কমায়নি। কিন্তু এর বিকাশে দাম কমানো এবং গতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা অপরিহার্য।
নতুন সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন সেটিই দেখার বিষয়। ব্যবসায়ীরা তাদের এবং মোবাইল অপারেটরদের জন্য ব্রডব্যান্ডের দামে সামঞ্জস্য আনার দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য কারিগরি কী কী বিষয় বিবেচ্য সেটি বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের সারচার্জ কমানো এবং আইএসপি দাম সমন্বয় করা থেকে বিদেশী বৃহৎ কনটেন্ট সরবরাহকারীদের এ দেশে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স দেয়া যায় কি না বিবেচনা করা যেতে পারে।
দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহক এক কোটি ৩৮ লাখের বেশি। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় সোয়া কোটি। আর আইএসপি ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্কের (পিএসটিএন) গ্রাহক ১৪ লাখের মতো। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সংখ্যাটি মোটেও যথেষ্ট নয়। আজকের বিশ্বে ঘরে ঘরে প্রত্যেক মানুষের জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য। বাংলাদেশেও সেটি করতে হবে। গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিগত আওয়ামী সরকার। এটি বর্তমান সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ইন্টারনেট সেবায় ঘাটতি: দাম ও মান যৌক্তিক করুন

আপলোড টাইম : ০৯:২৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; কিন্তু কার্যত তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ বাজারে দাম কমেছে বলে শোনা যাচ্ছে। পত্রিকান্তরের খবরে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যান্ডউইথের উচ্চ দাম এখনো নির্ধারিত আছে। শুধু মোবাইল অপারেটরদের জন্য দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাদের জন্য ব্যান্ডউইথের দাম ২০০ টাকা! আর একই সেবা দিতে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যান্ডউইথ কিনতে হয় ৩৬৫ টাকায়। এ অবস্থায় ইন্টারনেটের দাম কমানো নিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্বস্তি আছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা বিরাজ করছে মনে হয়। আজ রোববার বিটিআরসিতে বৈঠক হওয়ার কথা। বৈঠকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হবে। পরে ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
বিটিআরসির নতুন চেয়ারম্যান নিজেও মনে করেন, ইন্টারনেটের দাম পানির দরে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগী হলে ব্যান্ডউইথের দাম কমানো সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।
দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা সম্প্রসারণ এবং ব্যবহার বাড়ানো দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই জরুরি। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে প্রতিটি দেশ এখন এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের তরুণদের মেধা এ ক্ষেত্রে কারো চেয়ে ন্যূন নয়; বরং যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা বিশ্বে সেরা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে সক্ষম। এর নমুনা আমরা বহুবার দেখেছি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের তরুণরা পিছিয়ে নেই। তাদের জন্য শুধু সুযোগটা তৈরি করে দিতে হবে।
পতিত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের নামে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং বিপুল অর্থ লুটপাট করলেও কাজের কাজ কিছু করেনি। তাদের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। একটু আধটু নয়, সাত গুণ বেশি। ইন্টারনেটের গতিও ছিল অন্য সব দেশের চেয়ে কম। বিগত সরকার মাঝে মাঝে দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও বাস্তবে দাম কমায়নি। কিন্তু এর বিকাশে দাম কমানো এবং গতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা অপরিহার্য।
নতুন সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে তারা কতটা সফল হন সেটিই দেখার বিষয়। ব্যবসায়ীরা তাদের এবং মোবাইল অপারেটরদের জন্য ব্রডব্যান্ডের দামে সামঞ্জস্য আনার দাবি জানিয়েছেন। এ জন্য কারিগরি কী কী বিষয় বিবেচ্য সেটি বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। সরকারের সারচার্জ কমানো এবং আইএসপি দাম সমন্বয় করা থেকে বিদেশী বৃহৎ কনটেন্ট সরবরাহকারীদের এ দেশে পয়েন্ট অব প্রেজেন্স দেয়া যায় কি না বিবেচনা করা যেতে পারে।
দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহক এক কোটি ৩৮ লাখের বেশি। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক প্রায় সোয়া কোটি। আর আইএসপি ও পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্কের (পিএসটিএন) গ্রাহক ১৪ লাখের মতো। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সংখ্যাটি মোটেও যথেষ্ট নয়। আজকের বিশ্বে ঘরে ঘরে প্রত্যেক মানুষের জন্য ইন্টারনেট সহজলভ্য। বাংলাদেশেও সেটি করতে হবে। গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিগত আওয়ামী সরকার। এটি বর্তমান সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।