৪০ কোটি পাঠ্যবই ছাপছে এনসিটিবি, খরচ ১২ শ কোটি
বছরের প্রথম দিকেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে চলছে জোর প্রস্তুতি
- আপলোড টাইম : ০৯:২৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪
- / ৫৮ বার পড়া হয়েছে
আগামী বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দিতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। এ জন্য চলছে জোর প্রস্তুতি। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বইয়ের পান্ডুলিপির ছাপার কাজ। এছাড়া ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক এবং কারিগরি বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অনুমোদনও দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। শিগগির এসব পান্ডুলিপি ছাপাখানায় যাবে। এরপর শুরু হবে বই ছাপার কর্মযজ্ঞ। এদিকে এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হবে। এরমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিকের বইয়ের সংখ্যা ১২ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫২টি। আর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়ের সংখ্যা ২৮ কোটি ৬ লাখ ২২ হাজার ৩৩৭টি। তাছাড়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে ৮ হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের দেওয়া হবে প্রায় ৪১ লাখ ‘শিক্ষক সহায়িকা’। মুদ্রণকারীরা দুই শতাধিক লটে এসব বই ছাপবে। বই ছাপার কাজে সরকারের খরচ হবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বই বেড়েছে সাড়ে ৯ কোটি :
সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছর সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি পাঠ্যবই ছাপা হয়েছিল। কিন্তু এবার ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৬ লাখের বেশি বই। সেই হিসাবে এবার প্রায় সাড়ে ৯ কোটি বই বেশি ছাপা হচ্ছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার যে শিক্ষার্থী বেড়েছে, তা নয়। নতুন শিক্ষাক্রমের চেয়ে পুরোনো শিক্ষাক্রমে বই বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু আগের অর্থাৎ ২০১২ সালে প্রণীত (সৃজনশীল) শিক্ষাক্রমে ফিরে গেছে, সে জন্য বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নতুন যে শিক্ষাক্রম ২০২৩ সালে চালু হয়েছিল, সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সব মিলিয়ে বই ছিল ১৫টি। আর পুরোনো অর্থাৎ ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ শ্রেণিতে বইয়ের সংখ্যা ১৯টি। আবার নতুন শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন ছিল না। সবার জন্য একই বিষয় ছিল। আর পুরোনো শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের জন্য আলাদা করে বই রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার সাড়ে ৯ কোটি বই বেশি ছাপতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাপাখানার একজন মালিক বলেন, ‘কাগজ মিলের সিন্ডিকেট বন্ধ, ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগে সতর্কতা, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে মনিটর, সেনাবাহিনীর হাতে বইয়ের কিছু অংশ ছাপার দায়িত্ব দেওয়াসহ কয়েকটি উদ্যোগের কারণে এবার ভালো মানের কাগজেই পাঠ্যবই ছাপা হবে বলে আশা করা যায়।’ এনসিটিবি জানিয়েছে, সব পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন শেষ না হলেও গত মাসের শেষের দিকে প্রাথমিকের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির সব বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করে ছাপাখানায় পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইয়ের কাজও চলছে পুরোদমে। বইয়ের পরিমার্জন শেষ হলেই ছাপাখানায় পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘আমরা বই পরিমার্জন ও সংশোধন করছি। তাছাড়া এবার এক দফা টেন্ডার বাতিল করতে হয়েছে। আশা করি, সব শিক্ষার্থী বছরের শুরুর দিনে নতুন বই হাতে পাবে।’ প্রসঙ্গত, ২০১০ সাল থেকে সরকার বছরের শুরুতে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রতি বছর এ কাজ করে থাকে। এবার অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও কাজের প্রক্রিয়া একই থাকছে। শুধু রাজনৈতিক সরকারের আমলে বই ছাপার কাজের টেন্ডার একচেটিয়াভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেলেও এবার তাতে স্বচ্ছতা আনা হয়েছে। বই ছাপার কাজে সংশ্লিষ্ট আছে সেনাবাহিনীও।
এদিকে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের পাঠ্যপুস্তক এবং কারিগরি বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) এবং দাখিল ও কারিগরির ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাশাপাশি ইবতেদায়ির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেণিগুলোর জন্য ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৬১ হাজার ৬৪৬টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহে মোট ব্যয় হবে ৫২৭ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৭ টাকা।
বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, ইবতেদায়ির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিক (বাংলা ও ইরেজি ভার্সন), দাখিল ও কারিগরি শ্রেণির সাত কোটি ৩১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৯টি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি। ১০৭টি লটে ৭৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে এই পাঠ্যপুস্তক নেওয়া হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৮ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অন্য এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) সপ্তম শ্রেণি, দাখিল সপ্তম শ্রেণি এবং কারিগরির সপ্তম শ্রেণির বিনামূল্যের পাঁচ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৭টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। ৯৯টি লটে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে এ পাঠ্যপুস্তক নেওয়া হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৩১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৯ টাকা।