নজরদারির অভাব: বাজারে আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী
- আপলোড টাইম : ০৯:৫৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩২ বার পড়া হয়েছে
দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি সঙ্কটকাল মোকাবেলা করছে। পতিত হাসিনা সরকার অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। স্বৈরাচার-উত্তর অন্তর্বর্তী সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট চলমান থাকায় জনজীবনে অস্বস্তি দূর হয়নি। বিশেষ করে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় না হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষের জীবনে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। এমন অবস্থায় এ দেশের মানুষের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা তরকারি আলুর দাম আরো বেড়েছে। এবার চড়া দামে কিনতে হচ্ছে পণ্যটি। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ১৫ দিন আগে আলুর কেজি ছিল ৫৫-৬০ টাকা। গত দুই সপ্তাহে পণ্যটির দাম কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে এখন ৭০-৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে গত সেপ্টেম্বর মাসে আলুর আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে (এসআরও) আলুর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। পাশাপাশি আলু আমদানিতে থাকা ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। কম শুল্কে আলু আমদানি হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, এর মাধ্যমে বাজারে আলুর দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে দাম আরো বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের হিসাবে, গত বছর এ সময়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা, যা এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। চলতি বছর আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় এক কোটি তিন লাখ টন। তবে হিমাগার মালিকরা বলছেন, এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। সে হিসাবে চাহিদার তুলনায় ১০-১৫ লাখ টন আলুর ঘাটতি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, সাধারণত বছরের এ সময়ে বাজারে আগাম (নতুন) আলু আসতে শুরু করে। এতে আলুর দামে এক ধরনের ভারসাম্য থাকে। তবে চলতি বছর অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে আলুবীজ রোপণে দেরি করেছেন কৃষক। এতে বাজারে আগাম আলু আসতে দেরি হচ্ছে। অন্য দিকে চলতি বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা আগামী মৌসুমে আরো বেশি জমিতে আলু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে বীজ আলুর সঙ্কট থাকায় তারা খাবারের জন্য রাখা আলুও বীজ হিসেবে কিনছেন। এসব কারণে আলুর সরবরাহে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে এবং বেড়েছে দাম। অন্য দিকে একটি সহযোগী দৈনিকে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরীকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়, আলুর বাড়তি চাহিদার কারণে মজুদদাররা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। হিমাগার থেকে আলুর কেজিতে বাড়তি যে লাভ রাখা হচ্ছে, তার পুরোটাই মজুদদাররা নিচ্ছেন।
বাস্তবতা হলো- হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলুর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দাম বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ চাহিদা থাকার পরও আলু কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বিক্রি আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে।
গত বছর এই সময়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের তদারকিতে মজুদদাররা ইচ্ছেমতো আলুর দাম বাড়ানোর সুযোগ পাননি। কিন্তু এ বছর সে ধরনের অভিযান না থাকায় আলুর এত দাম হয়েছে। বাস্তবে বাজার তদারকি ঠিকভাবে হচ্ছে না। নজরদারি ঢিলেঢালা হওয়ায় বিক্রেতারা সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে আলুর দাম ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করছেন। তাই সরকারকে বাজারে কঠোর নজরদারি করতে হবে। এতে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়।