ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় ৩ বছর ধরে পড়ে আছে ভারতের দেয়া উপহার ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’

অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৪৫ বার পড়া হয়েছে

গাড়ি থাকলেও ঘোড়া না থাকার মতো চুয়াডাঙ্গায় অবহেলায় পড়ে আছে অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স। ২০২১ সালে ভারত সরকারের দেওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি অলস পড়ে আছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের আঙিনায়। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি বুঝে নেওয়ার পর ৩ বছর পার হতে চললেও চালু হয়নি জীবনরক্ষাকারী এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা। সাধারণ রোগী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আইসিইউ সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যাচ্ছে না। রোগীদের জীবনরক্ষার কাজে ব্যবহারের পূর্বেই অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই যেন নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। একই অবস্থায় পড়ে আছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটিও।

সরেজমিনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি ধুলায় ঢেকে রয়েছে। ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে অ্যাম্বুলেন্সের ‘ব্যাকভিউ মিরর’, জং ধরতে শুরু করেছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিনটির ক্ষতি রোধে বিভিন্ন সময় সক্রিয় রাখার চেষ্টা করলেও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটি সচল করাও সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে প্রাপ্ত একটি অত্যাধুনিক আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এসে পৌঁছায়। সেদিনই অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু নেই। ছিল না একটিও আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স। করোনা মহামারির সময়ে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট সাজেদা ফাউন্ডেশন নিজস্ব জনবলে ও যন্ত্রপাতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট চালু করে। তবে জেলায় করোনা মহামারির প্রকোপ কমতে থাকা ও চুক্তি শেষ হওয়ায় ফাউন্ডেশনটি আইসিইউ সেবা বন্ধ করে দেয়। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়তই মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। যে কারণে এ জেলার একমাত্র আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেটি চালুর বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকেই ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ গেছে অনেকের। এ অবস্থায় এ জেলার সাধারণ মানুষ অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলন্সটি দ্রুততম সময়ে চালুর দাবি তুলেছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা প্রশ্ন তোলেন, যদি তিন বছরেও এই অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা কোনো রোগী না পেয়ে থাকে, তবে কী প্রয়োজন আছে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ফেলে রাখার? অ্যাম্বুলেন্সটিকে ফেলে রেখে নষ্ট না করে যে কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা। তাদের দাবি, পড়ে নষ্ট হওয়ার থেকে দেশের যে কোনো প্রান্তের রোগীরা সেবা পেলেও তা দেশের মানুষের জন্য উপকারে আসবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপন বলেন, ‘তিন বছর ধরে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি অচল পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সটি সচল থাকলে সাধারণ রোগীরা এর সেবা পেতেন।’ তিনি বলেন, ‘রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাস্তার মাঝপথে অনেককে মৃত্যুর কোলে ঢোল পড়তে দেখিছি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি চালু হলে এমন মৃত্যুর সংখ্যা কমবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘রোগী বহনে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জনবলের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। ফলে পড়ে থেকে মূল্যবান জীবনরক্ষাকারী এই সম্পদ নষ্ট হতে বসেছে। আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা করলে এই জেলার মানুষ তার সুবিধা পাবে, যা অত্যন্ত জরুরি। আমি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় ৩ বছর ধরে পড়ে আছে ভারতের দেয়া উপহার ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স’

অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ

আপলোড টাইম : ১১:৫৩:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

গাড়ি থাকলেও ঘোড়া না থাকার মতো চুয়াডাঙ্গায় অবহেলায় পড়ে আছে অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্স। ২০২১ সালে ভারত সরকারের দেওয়া প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের উপহারের অ্যাম্বুলেন্সটি অলস পড়ে আছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সম্প্রসারিত নতুন ভবনের আঙিনায়। সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি বুঝে নেওয়ার পর ৩ বছর পার হতে চললেও চালু হয়নি জীবনরক্ষাকারী এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা। সাধারণ রোগী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা আইসিইউ সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক-নার্সসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা যাচ্ছে না। রোগীদের জীবনরক্ষার কাজে ব্যবহারের পূর্বেই অ্যাম্বুলেন্সটি নিজেই যেন নষ্ট হওয়ার অপেক্ষায় অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। একই অবস্থায় পড়ে আছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটিও।

সরেজমিনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সটি ধুলায় ঢেকে রয়েছে। ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে অ্যাম্বুলেন্সের ‘ব্যাকভিউ মিরর’, জং ধরতে শুরু করেছে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিনটির ক্ষতি রোধে বিভিন্ন সময় সক্রিয় রাখার চেষ্টা করলেও ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেটি সচল করাও সম্ভব হচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশের অন্যান্য হাসপাতালের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে প্রাপ্ত একটি অত্যাধুনিক আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছিল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। অ্যাম্বুলেন্সটি ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গনে এসে পৌঁছায়। সেদিনই অ্যাম্বুলেন্সটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সরকারি বা বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সেবা চালু নেই। ছিল না একটিও আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স। করোনা মহামারির সময়ে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট সাজেদা ফাউন্ডেশন নিজস্ব জনবলে ও যন্ত্রপাতি নিয়ে অস্থায়ীভাবে সদর হাসপাতালের নতুন ভবনে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট চালু করে। তবে জেলায় করোনা মহামারির প্রকোপ কমতে থাকা ও চুক্তি শেষ হওয়ায় ফাউন্ডেশনটি আইসিইউ সেবা বন্ধ করে দেয়। তবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়তই মুমূর্ষু রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। যে কারণে এ জেলার একমাত্র আইসিইউ সুবিধার অ্যাম্বুলেন্সটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেটি চালুর বিষয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকেই ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থ রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রাণ গেছে অনেকের। এ অবস্থায় এ জেলার সাধারণ মানুষ অত্যাধুনিক ও জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অ্যাম্বুলন্সটি দ্রুততম সময়ে চালুর দাবি তুলেছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনেরা প্রশ্ন তোলেন, যদি তিন বছরেও এই অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা কোনো রোগী না পেয়ে থাকে, তবে কী প্রয়োজন আছে অ্যাম্বুলেন্সটিকে ফেলে রাখার? অ্যাম্বুলেন্সটিকে ফেলে রেখে নষ্ট না করে যে কোনো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিয়ে দেয়ার দাবি জানান তারা। তাদের দাবি, পড়ে নষ্ট হওয়ার থেকে দেশের যে কোনো প্রান্তের রোগীরা সেবা পেলেও তা দেশের মানুষের জন্য উপকারে আসবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক স্বপন বলেন, ‘তিন বছর ধরে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটি অচল পড়ে আছে। অ্যাম্বুলেন্সটি সচল থাকলে সাধারণ রোগীরা এর সেবা পেতেন।’ তিনি বলেন, ‘রোগীদের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় রাস্তার মাঝপথে অনেককে মৃত্যুর কোলে ঢোল পড়তে দেখিছি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি চালু হলে এমন মৃত্যুর সংখ্যা কমবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘রোগী বহনে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও জনবলের অভাবে তা চালু করা যাচ্ছে না। ফলে পড়ে থেকে মূল্যবান জীবনরক্ষাকারী এই সম্পদ নষ্ট হতে বসেছে। আমি গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা করলে এই জেলার মানুষ তার সুবিধা পাবে, যা অত্যন্ত জরুরি। আমি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সটির সেবা দ্রুত চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।’