ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

তরুণদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা ; লাভজনক জনমিতি কাজে লাগান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বে উচ্চ বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ দেশে শিক্ষিত- অশিক্ষিত লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। কিন্তু যে হারে কর্মক্ষেত্রে মানুষ প্রবেশ করছে, সেই তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এতে করে প্রতি বছর দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বেকারের অনেকে, বিশেষ করে তরুণরা দেশে সম্মানজনক কাজ না পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশ এসব তরুণের কর্মশক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে মোট সাত কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ বর্তমানে শ্রমশক্তিতে আছেন। তাদের মধ্যে সাত কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। সরকারি এই সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৯০ হাজার। বেসরকারি হিসাবে, দেশে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখের মতো মনে করা হয়। আর বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে বিবিএসের তথ্য অনির্ভরযোগ্য। কারণ, সরকারের সুবিধা অনুযায়ী সংস্থাটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়িয়ে-কমিয়ে তথ্য পরিবেশ করে থাকে। উচ্চ বেকারত্ব থাকলেও আমাদের দেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মধ্যে রয়েছে। কোনো একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন শ্রমশক্তিতে পরিণত হয় অর্থাৎ পরনির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার হার বেশি হয় তখন সেই অনুপাতকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলে। জাতিসঙ্ঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) মতে, ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বয়সী মানুষ তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধাভোগী। জনমিতির হিসাবে বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মতো সুবর্ণ সময় পার করছে, যা ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। একদিকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। অন্যদিকে বেকারত্ব নিয়ে দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ উদ্বিগ্ন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকারত্বের কারণগুলো হচ্ছে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, নিয়োগে বৈষম্য এবং পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারা। এসবের ফলে ৫৫ শতাংশ তরুণ বিদেশে যেতে আগ্রহী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তরুণরা যেসব বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে চান, শিক্ষা তার মধ্যে একনম্বর ক্ষেত্র। ৪৯ শতাংশ ‘পুওর টিচিং কোয়ালিটি’র (পাঠদানের নিম্নমান) কথা বলেছেন। বিশেষ করে তারা আধুনিক কর্মবাজারের সাথে সামঞ্জস্যহীন পাঠদান ও পাঠ্যসূচির কথা বলেছেন। সঙ্গত কারণে আমরা মনে করি, এখন যে জনমিতির সুবিধা আমরা পাচ্ছি; সেই আলোকে সরকারকে দেশের তরুণদের আকাক্সক্ষা ঘিরে কাজ করতে হবে। সেদিক বিবেচনায় সরকারের মৌলিক কাজ হবে নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করা, বৈষম্যহীন আইন ও নীতি কার্যকর করা এবং রাষ্ট্রে জনস্বার্থভিত্তিক নীতি কার্যকর করা। একইভাবে দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। যাতে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং তরুণরা এ দেশেই সম্মানজনক কর্মে নিয়োজিত হতে পারে। তাদের কর্মশক্তি দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

তরুণদের বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা ; লাভজনক জনমিতি কাজে লাগান

আপলোড টাইম : ১১:২৮:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ নভেম্বর ২০২৪

বিশ্বে উচ্চ বেকারত্বের দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। এ দেশে শিক্ষিত- অশিক্ষিত লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। কিন্তু যে হারে কর্মক্ষেত্রে মানুষ প্রবেশ করছে, সেই তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজের সুযোগ পাচ্ছে না। এতে করে প্রতি বছর দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। এসব বেকারের অনেকে, বিশেষ করে তরুণরা দেশে সম্মানজনক কাজ না পেয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। দেশ এসব তরুণের কর্মশক্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশে মোট সাত কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার নারী-পুরুষ বর্তমানে শ্রমশক্তিতে আছেন। তাদের মধ্যে সাত কোটি ১১ লাখ ৬০ হাজার লোক কর্মে নিয়োজিত। বাকিরা বেকার। সরকারি এই সংস্থার সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৯০ হাজার। বেসরকারি হিসাবে, দেশে বেকারের সংখ্যা ৩০ লাখের মতো মনে করা হয়। আর বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের গড় বেকারের হারের চেয়ে কিছুটা বেশি। ২০২৩ সালের গড় বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তবে বিবিএসের তথ্য অনির্ভরযোগ্য। কারণ, সরকারের সুবিধা অনুযায়ী সংস্থাটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়িয়ে-কমিয়ে তথ্য পরিবেশ করে থাকে। উচ্চ বেকারত্ব থাকলেও আমাদের দেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মধ্যে রয়েছে। কোনো একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি যখন শ্রমশক্তিতে পরিণত হয় অর্থাৎ পরনির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে কর্মক্ষম জনসংখ্যার হার বেশি হয় তখন সেই অনুপাতকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলে। জাতিসঙ্ঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) মতে, ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বয়সী মানুষ তাদের শ্রম ও মেধা দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধাভোগী। জনমিতির হিসাবে বাংলাদেশ ২০১২ সাল থেকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মতো সুবর্ণ সময় পার করছে, যা ২০৪০ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। একদিকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডে থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। অন্যদিকে বেকারত্ব নিয়ে দেশের ৪২ শতাংশ তরুণ উদ্বিগ্ন। ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে ‘নেক্সট জেনারেশন বাংলাদেশ ২০২৪’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেকারত্বের কারণগুলো হচ্ছে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, নিয়োগে বৈষম্য এবং পারিবারিক জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে না পারা। এসবের ফলে ৫৫ শতাংশ তরুণ বিদেশে যেতে আগ্রহী। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তরুণরা যেসব বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে চান, শিক্ষা তার মধ্যে একনম্বর ক্ষেত্র। ৪৯ শতাংশ ‘পুওর টিচিং কোয়ালিটি’র (পাঠদানের নিম্নমান) কথা বলেছেন। বিশেষ করে তারা আধুনিক কর্মবাজারের সাথে সামঞ্জস্যহীন পাঠদান ও পাঠ্যসূচির কথা বলেছেন। সঙ্গত কারণে আমরা মনে করি, এখন যে জনমিতির সুবিধা আমরা পাচ্ছি; সেই আলোকে সরকারকে দেশের তরুণদের আকাক্সক্ষা ঘিরে কাজ করতে হবে। সেদিক বিবেচনায় সরকারের মৌলিক কাজ হবে নাগরিকদের মানবাধিকার রক্ষা করা, বৈষম্যহীন আইন ও নীতি কার্যকর করা এবং রাষ্ট্রে জনস্বার্থভিত্তিক নীতি কার্যকর করা। একইভাবে দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। যাতে দেশে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এবং তরুণরা এ দেশেই সম্মানজনক কর্মে নিয়োজিত হতে পারে। তাদের কর্মশক্তি দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখে।