ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সংস্কার কমিশনের কর্মতৎপরতা: রাষ্ট্র মেরামতের বিকল্প নেই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

দিন মাস বছর গড়িয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স ৫৩ বছর। এটি আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জনের সময়কাল। আসলে রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায় তা কি আদৌ আমরা গড়তে পেরেছি? সত্যি হলো, অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে আমরা একটি ভূখণ্ড পেয়েছি বটে; কিন্তু ৫৬ হাজার বর্গমাইল জায়গাকে এখনো আধুনিক যুগের উপযোগী একটি কার্যকর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার দায় প্রথমত অবশ্যই দেশের রাজনীতিবিদদের। এর পরে যাদের দায়ভার নিতে হবে তারা নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তি।

বাংলাদেশের বুনিয়াদ নড়বড়ে হওয়ায় রাষ্ট্র হিসেবে এখনো খুব দুর্বল। একটি রাষ্ট্র যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে; উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা তা কমবেশি পেয়েছিলাম। নিজেদের অদূরদর্শিতায় রাষ্ট্রযন্ত্রের সেসব প্রতিষ্ঠান আমরা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশেষ করে গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। নাগরিক মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘন করেছেন। সদ্য পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে তার দলীয় লোকজন ছাড়া বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হন।

অধিকারহারা মানুষ দমবন্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে ওঠা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে হাসিনার অপশাসন থেকে মুক্তি খোঁজে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে মাফিয়া হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনা জমানার অবসানে দেশবাসী মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু মুশকিল হলো, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হওয়ার পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে চার দিকে কেবলই ধ্বংসের চিত্র দেখতে পায়। জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সবাইকে শেখ হাসিনা যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে রাষ্ট্র মেরামতে হাত দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার ওই ভাষণে জনপ্রত্যাশার প্রতিধ্বনি হয়েছে। দেশবাসীও চায় রাষ্ট্রের প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার হোক।
জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে এসব কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। সেই ইঙ্গিত মিলেছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রধানদের বৈঠকের মাধ্যমে। গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সংস্কার কমিশন প্রধানরা কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে।

আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর দ্রুত তা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার । এরপর দেশে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যে নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রকামী মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সংস্কার কমিশনের কর্মতৎপরতা: রাষ্ট্র মেরামতের বিকল্প নেই

আপলোড টাইম : ০৮:২৪:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

দিন মাস বছর গড়িয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়স ৫৩ বছর। এটি আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা অর্জনের সময়কাল। আসলে রাষ্ট্র বলতে যা বোঝায় তা কি আদৌ আমরা গড়তে পেরেছি? সত্যি হলো, অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে আমরা একটি ভূখণ্ড পেয়েছি বটে; কিন্তু ৫৬ হাজার বর্গমাইল জায়গাকে এখনো আধুনিক যুগের উপযোগী একটি কার্যকর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারিনি। এই ব্যর্থতার দায় প্রথমত অবশ্যই দেশের রাজনীতিবিদদের। এর পরে যাদের দায়ভার নিতে হবে তারা নীতিনির্ধারক পর্যায়ের ব্যক্তি।

বাংলাদেশের বুনিয়াদ নড়বড়ে হওয়ায় রাষ্ট্র হিসেবে এখনো খুব দুর্বল। একটি রাষ্ট্র যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকে; উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা তা কমবেশি পেয়েছিলাম। নিজেদের অদূরদর্শিতায় রাষ্ট্রযন্ত্রের সেসব প্রতিষ্ঠান আমরা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি। বিশেষ করে গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। নাগরিক মানবাধিকার পদে পদে লঙ্ঘন করেছেন। সদ্য পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে তার দলীয় লোকজন ছাড়া বাকি সবাই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হন।

অধিকারহারা মানুষ দমবন্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে ওঠা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে হাসিনার অপশাসন থেকে মুক্তি খোঁজে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে মাফিয়া হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনা জমানার অবসানে দেশবাসী মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন। কিন্তু মুশকিল হলো, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হওয়ার পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে চার দিকে কেবলই ধ্বংসের চিত্র দেখতে পায়। জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সবাইকে শেখ হাসিনা যেসব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন তা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে রাষ্ট্র মেরামতে হাত দিতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার ওই ভাষণে জনপ্রত্যাশার প্রতিধ্বনি হয়েছে। দেশবাসীও চায় রাষ্ট্রের প্রতিটি ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার হোক।
জনমানুষের আকাক্সক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে এসব কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার কমিশনগুলো তাদের সুপারিশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে। সেই ইঙ্গিত মিলেছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে গঠিত সংস্কার কমিশনের প্রধানদের বৈঠকের মাধ্যমে। গত সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সংস্কার কমিশন প্রধানরা কমিশনগুলোর কাজের অগ্রগতি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টাকে।

আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ হাতে পাওয়ার পর দ্রুত তা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়ন করবে অন্তর্বর্তী সরকার । এরপর দেশে একটি অবাধ-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে, যে নির্বাচনের জন্য গণতন্ত্রকামী মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।