চুয়াডাঙ্গায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মীসভায় মোনায়েম মুন্না
আমরা সকলের স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ে কাজ করতে চাই
ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় নিজেদের উৎসর্গ করুন- নাসির উদ্দীন
- আপলোড টাইম : ০৯:৪২:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
স্বৈরাচারের অনুকরণকারী নেতা আমাদের দরকার নেই- নাজমুল হাসান
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেছেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় যুবদল ও ছাত্রদলকে আরও সংগঠিত করে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের কর্মী হয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন কর। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে।’ গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘আমরা কোনো উচ্ছৃঙ্খল আন্দোলন চাই না। আমাদের লক্ষ্য হলো গণমানুষের সাথে যুক্ত থেকে তাদের স্বার্থে কাজ করা। আপনাদের মনে রাখতে হবে, আপনারা শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের উচ্ছৃঙ্খল কর্মী নন। জনগণের ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে আপনাদের মর্যাদা তৈরি করতে হবে।’ তিনি সকল নেতা-কর্মীদের মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার অনুরোধ জানান এবং দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
মুন্না বিগত স্বৈরশাসকের সময়ে মানুষের স্বাধীনতা লুণ্ঠনের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদর্শের প্রতীক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। কাউকে ভয় দেখিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়ে পাশে থেকে আমরা সকলের স্বাধীনতা ও অধিকার আদায়ে কাজ করতে চাই।’
এসময় তিনি চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত এই যৌথ কর্মীসভা আয়োজন নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আপনাদের মধ্যে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার বিষয়ে ত্রুটি পেয়েছি। আমরা বিগত দিনের আন্দোলন, সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে আপনারা কীভাবে ভূমিকা রেখেছেন, তা খতিয়ে দেখবো। এরপরই পরবর্তী জেলা নেতৃত্বের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
আব্দুল মোনায়েম মুন্না পরবর্তী জেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে দলের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা এবং কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন বিবেচনা করা কথা জানান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার প্রভাব বা তদবির এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলকে সুসংগঠিত করতে যা প্রয়োজন, আমি তা করতে প্রস্তুত। আমাদের সকলকে বুঝতে হবে যে আমাদের আদর্শ শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন শৃঙ্খল ও মার্জিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর আদর্শ আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন করা যায়।’ তিনি যুবদল ও ছাত্রদলকে আরও সুসংগঠিত এবং শৃঙ্খল হওয়ার আহ্বান জানান। এবং দলের আদর্শকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এগিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘কেবল নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, দলের প্রতি বিশ্বাস এবং আদর্শের প্রতি অটল থাকার মাধ্যমেই আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো।’
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নয়, দেশে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলমান। বিএনপির সব অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। দ্রুত নির্বাচন না দেওয়ার চেষ্টা চলছে, কিন্তু এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচন চাই। এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা সুষ্ঠুভাবে হস্তান্তর করতে হবে। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাই নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ এ সময় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে, নির্বাচনকে সফল করতে নেতাকর্মীদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানান।
যৌথ কর্মীসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির। তিনি বলেন, ‘আজকের এই যৌথ সম্মেলন, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের মধ্যে একটি নতুন ও ভিন্ন ধরনের উদ্যম তৈরি করছে। স্বৈরাচারের শাসনামলে আমাদের ইনডোর সম্মেলন করতে বাধ্য করা হলেও, তখন দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে আমাদের নেতাকর্মীদের অবদান ছিল অপরিসীম। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে আমাদের শত শত নেতাকর্মী শহিদ হয়েছেন, হাজারো আহত হয়েছেন। তাদের ত্যাগ আমাদের জন্য গৌরবের এবং আমাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংগ্রাম ও ত্যাগ তখনই সফল হবে, যখন আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবো। ১৫ বছর ধরে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যে অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে, সত্ত্বেও তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। এই সংগ্রামের চূড়ান্ত সফলতা আমরা অর্জন করবো তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি সোনার বাংলা গঠনের মধ্য দিয়ে।’
আগামী নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি সরকার চাই যেখানে জনগণ তাদের স্বাধীন মতামত ও ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। আমাদের সহযোগিতা যেন গণতন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ তিনি আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাস, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থেকেছে, যা দেশের মানুষের জন্য আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতার কারণ হয়েছে। তিনি এসব অপকর্মের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ছাত্রদলকে এর বিপরীতে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে, জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান, যেন তারা সমাজে শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় নিজেদের উৎসর্গ করে।
যৌথ কর্মীসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, ‘স্বৈরাচার শাসকের পতনের আন্দোলনে আমরা অনেক নেতা-কর্মীর ফোন বন্ধ পেয়েছি। অনেকেই আমাদের এই সংগ্রামে পাশে দাঁড়াননি, অথচ আজ তারা নেতা সেজে আমাদের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কি লজ্জা লাগে না? কিছু উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী এখন ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। আমরা এসব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মী, তারেক রহমানের আদর্শের সৈনিক। আমাদের লক্ষ্য রাতারাতি নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা নয়; আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত সময়ে আমরা হত্যা, গুম, নির্যাতনের শিকার হয়েছি, কিন্তু আমরা হারিয়ে যাইনি, পালিয়ে যাইনি। আমরা এখনও আছি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য, দেশের কল্যাণে কাজ করার জন্য। যারা জনগণের সম্পদ লুট করেছে, স্বাধীনতার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছে, তারা আজ কোথায়? তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আছি জনগণের পাশে, তাদের সেবায়।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা মানুষের জন্য কাজ করুন, তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের ভালোবাসা অর্জন করুন। যারা রাতারাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চায়, তারা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সৈনিক নয়। তারা যত বড় নেতা হোক, আমরা তাদের চাই না। আমাদের দরকার এমন নেতা যারা সত্যিকারের আদর্শে বিশ্বাসী, কোনো স্বৈরাচারের অনুকরণকারী নয়।’
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে, সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ‘আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন, অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিন। আমাদের সংগ্রাম হবে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, একসঙ্গে একটি সমৃদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সভাপতি শরীফ উর জামান সিজারের সভাপতিত্বে যৌথ কর্মীসভায় আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সহ-সাধারণ সম্পাদক এম তমাল ইসলাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক বাবুল সারেং, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মামুন হোসেন দিপু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিকুল ইসলাম পিটু, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাজাহান খান।
সভাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এম এ তালহা ও জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা।