ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দুর্নীতি দমন সরকারের অগ্রাধিকার ; সৎ ও যোগ্যদের দরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক প্রতিষ্ঠা হলেও জাতির কোনো উপকার প্রতিষ্ঠানটি করতে পারেনি। পতিত হাসিনা বরং একে ব্যবহার করেছেন দুর্নীতিবাজ সাঙ্গোপাঙ্গদের দায়মুক্তি দিতে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে দুদক দিয়ে শায়েস্তা করেছেন। লুটপাট অনিয়ম দুর্নীতিতে দেশ যখন ক্ষমতাসীনরা দেউলিয়া করে দিয়েছিলেন, তখনও দুদক চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পতিত সরকারের আশীর্বাদ পাওয়া দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ করায় নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি গঠনের প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে।
আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। দুর্নীতি নির্মূল এখন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট, প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিপুল অর্থ একই প্রক্রিয়ায় পাচার করা হয়েছে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মহামারী আকারে ঘুষ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি নিয়োগে প্রশ্নফাঁস, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ সাধারণ একটি ব্যাপার হয়েছে। তবু দুদক নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে। সে কারণে অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর প্রধানত দায়িত্ব হচ্ছে দেশ থেকে দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। কিন্তু তাদের সামনে পাহাড়সম বাধা রয়েছে।
পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার মাফিয়া ব্যবস্থা কায়েম করে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিবাজ চক্রের সদস্যদের বসিয়ে দেয়া হয়। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে এদের বিদায় করতে হবে। একটি শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে, যাতে করে মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে ওঠে।
এমন একটা সময়ে দুদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হলো যখন এর ওপর বিপুল কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব পড়েছে। পতিত সরকারের করা অগুনতি দুর্নীতির রেকর্ড সামনে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তৃত অনুসন্ধান চালাতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে আইনি ব্যবস্থা। সঠিক অভিযোগ আনা না গেলে বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারেন। অবহেলা গাফিলতি কিংবা যোগসাজশে যাতে অপরাধীরা পার পেয়ে না যান সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে দুদক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার এবং কমিশনের গঠন নিয়ে তারা প্রস্তাব দেবেন আশা করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন অর্থাৎ দুদকের কর্মকর্তাদের নিজে থেকে সৎ হতে হবে। দুর্নীতি দমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেখেছি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা বিপদে পড়েছেন। সরকারের প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মো: শরীফ চাকরিচ্যুত হন। প্রতিষ্ঠানটি নিজের একজন সৎ কর্মকর্তার পক্ষে না দাঁড়ালেও ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা নিজেরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে গেছেন।
দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার। সে জন্য সামনের দিনে দুদক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান-কমিশনার নিয়োগে তাই সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সবার আগে দরকার সততা। একইভাবে প্রয়োজন দক্ষতা-যোগ্যতা। দিতে হবে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এ ধরনের একটি যোগ্য কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আশা করা যায় দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দুর্নীতি দমন সরকারের অগ্রাধিকার ; সৎ ও যোগ্যদের দরকার

আপলোড টাইম : ০৫:১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

একটি মহান উদ্দেশ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক প্রতিষ্ঠা হলেও জাতির কোনো উপকার প্রতিষ্ঠানটি করতে পারেনি। পতিত হাসিনা বরং একে ব্যবহার করেছেন দুর্নীতিবাজ সাঙ্গোপাঙ্গদের দায়মুক্তি দিতে। অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে দুদক দিয়ে শায়েস্তা করেছেন। লুটপাট অনিয়ম দুর্নীতিতে দেশ যখন ক্ষমতাসীনরা দেউলিয়া করে দিয়েছিলেন, তখনও দুদক চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পতিত সরকারের আশীর্বাদ পাওয়া দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ করায় নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি গঠনের প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে।
আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। দুর্নীতি নির্মূল এখন সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুট, প্রকল্পের নামে লাখ লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বিপুল অর্থ একই প্রক্রিয়ায় পাচার করা হয়েছে। সরকারি সব প্রতিষ্ঠানে মহামারী আকারে ঘুষ ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি নিয়োগে প্রশ্নফাঁস, অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ সাধারণ একটি ব্যাপার হয়েছে। তবু দুদক নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে। সে কারণে অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর প্রধানত দায়িত্ব হচ্ছে দেশ থেকে দুর্নীতি ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। কিন্তু তাদের সামনে পাহাড়সম বাধা রয়েছে।
পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শেখ হাসিনা সরকার মাফিয়া ব্যবস্থা কায়েম করে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিবাজ চক্রের সদস্যদের বসিয়ে দেয়া হয়। দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে এদের বিদায় করতে হবে। একটি শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে, যাতে করে মানুষের মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে ওঠে।
এমন একটা সময়ে দুদকের গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য হলো যখন এর ওপর বিপুল কার্যক্রম চালানোর দায়িত্ব পড়েছে। পতিত সরকারের করা অগুনতি দুর্নীতির রেকর্ড সামনে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে বিস্তৃত অনুসন্ধান চালাতে হবে। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে আইনি ব্যবস্থা। সঠিক অভিযোগ আনা না গেলে বড় অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারেন। অবহেলা গাফিলতি কিংবা যোগসাজশে যাতে অপরাধীরা পার পেয়ে না যান সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।
ইতোমধ্যে দুদক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার এবং কমিশনের গঠন নিয়ে তারা প্রস্তাব দেবেন আশা করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন অর্থাৎ দুদকের কর্মকর্তাদের নিজে থেকে সৎ হতে হবে। দুর্নীতি দমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আমরা দেখেছি, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা বিপদে পড়েছেন। সরকারের প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক মো: শরীফ চাকরিচ্যুত হন। প্রতিষ্ঠানটি নিজের একজন সৎ কর্মকর্তার পক্ষে না দাঁড়ালেও ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা নিজেরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত হয়ে গেছেন।
দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার। সে জন্য সামনের দিনে দুদক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান-কমিশনার নিয়োগে তাই সর্বাধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সবার আগে দরকার সততা। একইভাবে প্রয়োজন দক্ষতা-যোগ্যতা। দিতে হবে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এ ধরনের একটি যোগ্য কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আশা করা যায় দেশ দুর্নীতিমুক্ত হতে পারবে।