ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫

সরকারের নির্বাচনমুখী অভিযাত্রা ; রাষ্ট্র সংস্কার যেন ফোকাস না হারায়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে তা নিছক প্রহসন ছাড়া আর কিছু ছিল না। মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। দিনের ভোট রাতেই শেষ হয়ে যেত। শেখ হাসিনা যাকে খুশি তাকে এমপি বানিয়ে দিতেন। একই সাথে দেশের নির্বাচনে বাইরের দেশের মনোনীত প্রার্থীরও সন্ধান মিলেছিল! নির্বাচনের নামে শেখ হাসিনার নানাবিধ প্রহসনের কারণে মানুষ ছিল রীতিমতো অতিষ্ঠ ও অসহায়। কিন্তু স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারত না। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট শাসক হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নিজের মতো করে প্রতিনিধি নির্বাচনের। সে কারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন হবে আর সাথে সাথে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হবে, এমনটি ছাত্র-জনতা চায়নি। তারা চেয়েছে, ফ্যাসিস্টের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের যথাযথ সংস্কার। তারা দেখেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন। দেশে ভবিষ্যতে যাতে শেখ হাসিনার মতো আর কোনো স্বৈরাচার তৈরি হতে না পারে সেটিও প্রত্যাশা করেছেন তারা। আর সে কারণে ৫ আগস্টের পর গঠিত প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হওয়ার পর মোটামুটি সব রাজনৈতিক দল সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে নির্বাচনের জন্য এক ধরনের ঝোঁকপ্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, নানা ক্ষেত্রে ভঙ্গুর এই রাষ্ট্রের সংস্কারের চেয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গই মুখ্য হয়ে উঠেছে। অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হতে পারে- সে বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ তৈরি করতে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। দেশের নির্বাচনমুখী এই অভিযাত্রা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যে সুখবর তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকারকে এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু একটি নির্বাচন করাই যেন তাদের কাজ হয়ে না দাঁড়ায়; বরং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে ছাত্র-জনতার যে প্রত্যাশা তা বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। একই সাথে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার এই সরকার যেভাবে করতে পারবে অন্য কোনো সরকারের পক্ষে সেটি সম্ভব হবে কি না বলা মুশকিল। তাই গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রেও বর্তমান সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

সরকারের নির্বাচনমুখী অভিযাত্রা ; রাষ্ট্র সংস্কার যেন ফোকাস না হারায়

আপলোড টাইম : ০৯:৪৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশে নির্বাচনের নামে যা হয়েছে তা নিছক প্রহসন ছাড়া আর কিছু ছিল না। মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। দিনের ভোট রাতেই শেষ হয়ে যেত। শেখ হাসিনা যাকে খুশি তাকে এমপি বানিয়ে দিতেন। একই সাথে দেশের নির্বাচনে বাইরের দেশের মনোনীত প্রার্থীরও সন্ধান মিলেছিল! নির্বাচনের নামে শেখ হাসিনার নানাবিধ প্রহসনের কারণে মানুষ ছিল রীতিমতো অতিষ্ঠ ও অসহায়। কিন্তু স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলতে পারত না। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। ফ্যাসিস্ট শাসক হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছে মানুষ। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে নিজের মতো করে প্রতিনিধি নির্বাচনের। সে কারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন হবে আর সাথে সাথে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে শুধু রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তন হবে, এমনটি ছাত্র-জনতা চায়নি। তারা চেয়েছে, ফ্যাসিস্টের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের যথাযথ সংস্কার। তারা দেখেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন। দেশে ভবিষ্যতে যাতে শেখ হাসিনার মতো আর কোনো স্বৈরাচার তৈরি হতে না পারে সেটিও প্রত্যাশা করেছেন তারা। আর সে কারণে ৫ আগস্টের পর গঠিত প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করেছে। অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হওয়ার পর মোটামুটি সব রাজনৈতিক দল সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যে নির্বাচনের জন্য এক ধরনের ঝোঁকপ্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, নানা ক্ষেত্রে ভঙ্গুর এই রাষ্ট্রের সংস্কারের চেয়ে নির্বাচন প্রসঙ্গই মুখ্য হয়ে উঠেছে। অন্তর্র্বতী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হতে পারে- সে বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি বলেছেন, আগামী বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হতে পারে। এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের সুপারিশ তৈরি করতে আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেছেন, সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। দেশের নির্বাচনমুখী এই অভিযাত্রা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যে সুখবর তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু অন্তর্র্বতী সরকারকে এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু একটি নির্বাচন করাই যেন তাদের কাজ হয়ে না দাঁড়ায়; বরং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে ছাত্র-জনতার যে প্রত্যাশা তা বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। একই সাথে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার বিচার এই সরকার যেভাবে করতে পারবে অন্য কোনো সরকারের পক্ষে সেটি সম্ভব হবে কি না বলা মুশকিল। তাই গণহত্যার বিচারের ক্ষেত্রেও বর্তমান সরকারকে অধিক মনোযোগী হতে হবে।