ইসি পুনর্গঠনে সার্চ কমিটি, শিগগিরই প্রজ্ঞাপন
নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু- আপলোড টাইম : ০৯:৩০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৪
- / ৪৮ বার পড়া হয়েছে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হচ্ছে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি। ইতিমধ্যে তার নাম মনোনীত করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানকে সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের এ দুইজন বিচারপতিকে মনোনীত করার পর তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ইসি নিয়োগের আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির বাকি সদস্যরা হবেন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। এ দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নির্বাচন নিয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থান কী, জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি একটা কথা বলতে পারি-আমাদের সরকারের নির্বাচনমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করার যে কাজ, সেটা শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে আপনারা বলতে পারেন। নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করলেই আপনারা জানতে পারবেন। উপদেষ্টা আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। আগেও বলেছি, ভোটার তালিকা নিয়ে প্রচুর প্রশ্ন ছিল, গত নির্বাচন এমন ভুয়া নির্বাচন ছিল, ভোটার তালিকা নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা ছিল না। এবার অসাধারণ একটা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। শুধু এতটুকু বলতে পারি, আমাদের নির্বাচনমুখী যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।
সার্চ কমিটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে নাম প্রস্তাব করবেন। যোগ্যতা বিবেচনা করে তারা ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন। তাদের মধ্য থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে রাষ্ট্রপতি গঠন করবেন নতুন নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দুইজনের এবং কমিশনার হিসেবে আটজনের নাম প্রস্তাব করবে কমিটি। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা সম্ভব হবে।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আইনেই একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। সরকার তার দল নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে সার্চ কমিটি করবে, কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ইসি পুনর্গঠনের কাজ করবে। পুনর্গঠিত ইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
ইসি নিয়োগ আইনে যা রয়েছে :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়; সেহেতু এত দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হয়। আইনের ১ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ নামে অভিহিত হবে এবং যা অবিলম্বে কার্যকর হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতির মনোনীত দুই জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ দুই বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন হবেন নারী। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে। এ কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সার্চ কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্য সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।
সার্চ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি :
আইনের ৪ ধারায় সার্চ কমিটির দায়িত্ব ও কার্যাবলি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অনুসন্ধান কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে এবং এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিন্নতা, সততা ও সুনাম বিবেচনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের উদ্দেশ্যে এই আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করবে এবং এজন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে রাষ্ট্রপতির কাছে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে কমিটি।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা :
আইনের ৫ ধারায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য কোনো ব্যক্তিকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৫০ বছর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা-সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা :
আইনের ৬ ধারা অযোগ্যতা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে সুপারিশ করা যাবে না, যদি তিনি কোনো উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষিত হন, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন। এছাড়া যদি তিনি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বাংলাদেশ কোলাবোরেটরস আইনের অধীন যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকেন, বা আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সিইসি বা নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য হবে। আইনের ৭ ধারায় অনুসন্ধান কমিটি সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে। ৮ ধারা সরকারকে আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়নের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আর ৯ ধারায় আগের দুই নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ইসি নিয়োগে কোনো আইন ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পরপর দুই বার সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়, যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করেছিল। একইভাবে ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন করে দিয়েছিল, যে কমিশনের অধীন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতের ভোট আয়োজন করা হয়। ওই দুই সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন তৎকালীন আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হাসান।