আজ কলঙ্কজনক ২৮ অক্টোবর
- আপলোড টাইম : ০৯:১৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে
আজ রক্তাক্ত ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিন দেশের রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ চারদলীয় জোট সরকারের শেষদিন রাজধানীর পুরানা পল্টনে প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠা দিয়ে তরতাজা কয়েক তরুণকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশের ওপর নারকীয় উল্লাস চালানো হয়েছিল।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পুরানা পল্টনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর পৈশাচিক হামলা চালায়। লগি-বৈঠা, লাঠি, পিস্তল ও বোমা হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ মেরে লাশের ওপর নৃত্য-উল্লাস করার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ২৮ অক্টোবরের আগের দিন ও পরের দিনও দেশের বিভিন্ন স্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছিল।
২৭ অক্টোবর রাত ১২টার পর অষ্টম জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি ঘটে। ২৮ অক্টোবর ছিল বিএনপি সরকারের শেষ দিন। ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী সদ্যবিদায়ি প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কথা ছিল। সেদিনই বঙ্গভবনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শপথ হওয়ার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের তৎকালীন জোট আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তারা সেটি মেনে নেবে না। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, কে এম হাসান যদি প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়, তাহলে সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে লগি-বৈঠা হাতে ঢাকায় চলে আসে। ২৭ অক্টোবর রাতেই কেএম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তার অপারগতা প্রকাশের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংকট আরো জটিল আকার ধারণ করে।
সেই ২৮ অক্টোবর সামনে রেখে ঢাকা শহরে ছিল টানটান উত্তেজনা। আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে এবং নেতা-কর্মীদের লগি-বৈঠা নিয়ে আসতে বলে। বিএনপি ওই দিন নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের কর্মসূচি নেয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয় বায়তুল মোকাররম এলাকায়। এতে জামায়াত-শিবিরের ছয় কর্মী ও ওয়ার্কার্স পার্টির এক কর্মী মারা যান। ওই দিন সারা দেশে ১৫ জন নিহত হন।
২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। মূলত এ ভাষণ শেষ হওয়ার পর পরই দেশব্যাপী শুরু হয় লগি-বৈঠার তাণ্ডব। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের অফিসসহ নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি যেমন চালানো হয় পৈশাচিক হামলা, তেমনি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অনেক অফিস, বাড়িঘর। ঢাকায় বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদের ডেমরার কার্যালয়ে আগুন, ধানমন্ডিতে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, খুলনায় বিএনপির দুই সংসদ সদস্য আলী আসগর লবী ও আব্দুল জলিল খান কালামের বাড়িতে হামলা হয়। গাজীপুরে জামায়াতে ইসলামীর অফিসে লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডবে শহিদ হন রুহুল আমিন।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বেলা ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে পূর্ব নির্ধারিত সমাবেশ ছিল জামায়াতের। হঠাৎ করেই বেলা ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের লগি, বৈঠা ও অস্ত্রধারীরা জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। একযোগে হামলা চালানো হয় বিজয়নগর, তোপখানা রোড ও মুক্তাঙ্গন থেকে পল্টন মোড়ে। শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার শিকার হন জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর হামলাকারীরা তার লাশের ওপর উঠে নৃত্য-উল্লাস করতে থাকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান ও জুরাইনের জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ছয়জন নেতাকর্মী শহিদ এবং আহত হন সহস্রাধিক। ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতার বিচার হওয়া তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মামলাই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।