ছেলেকে পাওয়ার পর প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত মীর কাসেমের
- আপলোড টাইম : ১১:৩৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬
- / ৪১৪ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা এই সিদ্ধান্ত জানাতে ছেলের সঙ্গে পরামর্শের সুযোগ চেয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। তার ছেলে আহমেদ বিন কাসেম ২১দিন ধরে নিখোঁজ বলে পরিবার দাবি করে আসছে। গতকাল দুপুরের পর কাশিমপুর কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের ছয় সদস্য। কাসেম আলীর স্ত্রী, দুই কন্যা, দুই পুত্রবধূ, এক ভাতিজা ও পরিবারের ৩ শিশু দুপুর ২টার দিকে সাক্ষাতের জন্য কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করেন। সাক্ষাৎ শেষে ২ ঘণ্টা পর তারা কারাভ্যন্তর থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় কাসেম আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুন তার স্বামীর প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে বলেন, তার ছেলে নিখোঁজ রয়েছে। সে শুধু পরিবারের সদস্যই না কাসেম আলীর আইনজীবীও। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তার সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে। এদিকে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানিয়েছেন, মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে ‘রিজনেবল কিছু সময়’ পাচ্ছেন। অন্যদিকে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে গাজীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম, পিপিএম (বার) কারাগারে গিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ ছাড়া দিনভর র্যাব-পুলিশের টহল দেখা গেছে। সাক্ষাৎ শেষে কারাগার থেকে বের হয়ে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুন আরও বলেন, মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। এই দেখাই শেষ দেখা নয়। শেষ কাজগুলো কেমন হবে, শেষ কাজগুলো আমরা কীভাবে করবো সে ব্যাপারে পরামর্শের জন্যই এসেছিলাম। তিনি বলেন, ২১ দিন আগে সাদা পোশাকধারী লোকেরা তার ছেলেকে বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা তার সম্পর্কে কিছুই জানি না। মীর কাসেম আলী সাহেবের ব্যাপারে কোন কথা বলার আগে, কোনো কিছু সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাচ্ছি। তিনি বলেন, সে শুধু আমাদের পরিবারের সদস্যই নয়, এই মামলায় আসামির পক্ষের আইনজীবীও ছিল। তার সঙ্গে পরামর্শ আমাদের খুব বেশি দরকার। ছেলেকে পেলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেব। কাসেম পতœী বলেন, আমরা অপেক্ষা করছি, ছেলেকে পাওয়া যায় কি না? শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে, এর মধ্যে পাওয়া গেলে আমরা সবাই আলাপ-আলোচনা করে এটা জানাবো। সে সময় কি আপনাদের দেয়া হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি সময় শেষ হয়ে যায় সেটা ভিন্ন কথা। তবে যতক্ষণ সময় আছে আমি অপেক্ষা করতে চাই। ছেলেকে পাওয়ার জন্য তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতাও কামনা করেন। আয়েশা খাতুন বলেন, অন্তত পিতার শেষ মুহূর্তে ছেলে কাছে থাকা অত্যন্ত দরকার। যদি ছেলেকে না পাই, আমরা মনের সন্তুষ্টি নিয়ে বিদায় দিতে পারবো না। মীর কাসেম আলী তাকে বলেছেন- আমি অপেক্ষা করছি ছেলের জন্য। মতামত জানানোর জন্য আগে আমি ছেলেকে কাছে পেতে চাই। যেহেতু সে আমার ছেলে- পরিবারের অংশ, দ্বিতীয়ত সে তার আইনজীবী, এটা আমরা কারা কর্তৃপক্ষকে বলেছি। কাসেমপতœী তার ছোট দুই নাতনিকে দেখিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা তাদের বাবার জন্য কান্নাকাটি করছে। তারা তাদের বাবাকে ফেরত চায়। এদিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, আজ (গতকাল) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মীর কাসেম আলীকে তার রিভিউ আবেদন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া রায় পড়ে শুনানো হয়। তিনি জানান, বেলা পৌনে দুইটায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে কারাগারে আসেন মীর কাসেম আলীর স্ত্রীসহ পরিবারের ৬ সদস্য। প্রায় ৪৫ মিনিট সাক্ষাৎ শেষে বিকাল ৪টার দিকে তারা কারাগার ত্যাগ করেন। সাক্ষাৎকারীদের মধ্যে মীর কাসেম আলীর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন ছাড়াও মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, পুত্রবধূ সাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার, ভাতিজা হাসান জামান খান ছিলেন। এদের সঙ্গে ৪ শিশুও ছিল।
রিজনেবল সময় পাবেন কাসেম আলী: এদিকে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানিয়েছেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মীর কাসেম আলী প্রাণভিক্ষার বিষয়ে ‘রিজনেবল কিছু সময়’ পাচ্ছেন। গতকাল বিকালে পুরান ঢাকায় কারা অধিদপ্তরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি একথা জানান। আইজি প্রিজন বলেন, মীর কাসেম আলীকে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় রায়ের কপি পড়ে শোনানো হয়েছে। এরপর তার কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। তিনি কিছু সময় চেয়েছেন, বলেছেন চিন্তাভাবনা করে জানাবেন। আমরাও তাকে কিছু ‘রিজনেবল সময়’ দেবো। কতটুকু সময় দেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, পরিস্থিতিই বলে দেবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইজি প্রিজন বলেন, একজন সাধারণ দণ্ডপ্রাপ্ত ৭ দিন সময় পেয়ে থাকেন, কিন্তু মীর কাসেম আলী আইসিটি অ্যাক্টে দণ্ডপ্রাপ্ত। তিনি এর আওতাভুক্ত নন। তিনি ‘রিজনেবল সময়’ পাবেন। কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কোথায় হবে সে ব্যাপারে এখনও নির্ধারিত হয়নি বলেও জানান তিনি। মৃত্যুদণ্ডের খবর সংবাদমাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচারের বিষয়ে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, এ ধরনের খবর শিশুদের মানসিকতার ওপর প্রভাব ফেলে। একজনকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, এটা জেনে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য এভাবে লাইভ না দেখানোর অনুরোধ করবো।