ইপেপার । আজ শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা কৃষি অফিসে চুরির দীর্ঘদিন পার হলেও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা

দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর দোষ লুকানোর পায়তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৫৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে চুরি হওয়া মেইজ সিডার (বীজ বপন যন্ত্র) মেশিন ফেরত দেওয়ার ঘটনায় দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর দোষ লুকানোর পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। চুরি, চুরির পর ফেরত আর তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে চুরির মতো এতো বড় ঘটনার দীর্ঘদিন পার হলেও নেয়া হয়নি কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি করছেন, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত কৃষি বিভাগেরই কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জানা গেছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউন থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টোর কিপার বুঝতে পারেন, গোডাউন থেকে একটি দামি কৃষি যন্ত্র মেইজ সিডার গায়েব। বিষয়টি নিয়ে হই-চই পড়ে যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত শুরু হওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সিসিটিভি ফুটেজও সামনে আসে। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কে বা কারা সেই মেশিনটির তিনটি টুকরো হওয়া অংশ স্টোরের পিছনে রেখে চলে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার সাথে জড়িতদের স্পষ্টতা প্রমাণিত হলেও এ ঘটনায় এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারের কাছে।
কৃষি বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহ মেইজ সিডার মেশিনটি সরিয়েছিলেন। তদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। তাদেরকে নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও শাহিন উদ্দীন বিভিন্ন মহলে দৌঁড়-ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিন্ন ভাষায় বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার জন্যই বিভিন্ন নাটক সাজানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তারা দোষী প্রমাণিত হলেও ইচ্ছা করেই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। মুসলে উদ্দীনকে তার মূল কর্মস্থল আলমডাঙ্গায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। জেলা অফিসে তিনি সংযুক্ত ছিলেন। আর এনায়েতুল্লাহ এখনো জেলা অফিসেই বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। দুজনেরই যাতে কোনো শাস্তি না হয়, সে জন্য জেলা অফিসের ঊর্ধ্বতনরা নিশ্চুপ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। আশা করছি, একটা ব্যবস্থা নেবে। আর আমি আপাতত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীনকে তার মূল কর্মস্থল আলমডাঙ্গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা কৃষি অফিসে চুরির দীর্ঘদিন পার হলেও নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা

দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর দোষ লুকানোর পায়তারা

আপলোড টাইম : ০৮:৩৭:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে চুরি হওয়া মেইজ সিডার (বীজ বপন যন্ত্র) মেশিন ফেরত দেওয়ার ঘটনায় দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর দোষ লুকানোর পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। চুরি, চুরির পর ফেরত আর তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর থেকে চুরির মতো এতো বড় ঘটনার দীর্ঘদিন পার হলেও নেয়া হয়নি কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগেরই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি করছেন, ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় মত্ত কৃষি বিভাগেরই কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জানা গেছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউন থেকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টোর কিপার বুঝতে পারেন, গোডাউন থেকে একটি দামি কৃষি যন্ত্র মেইজ সিডার গায়েব। বিষয়টি নিয়ে হই-চই পড়ে যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত শুরু হওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সিসিটিভি ফুটেজও সামনে আসে। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কে বা কারা সেই মেশিনটির তিনটি টুকরো হওয়া অংশ স্টোরের পিছনে রেখে চলে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার সাথে জড়িতদের স্পষ্টতা প্রমাণিত হলেও এ ঘটনায় এখনো কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। গত ৩ অক্টোবর তদন্ত কমিটি তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারের কাছে।
কৃষি বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহ মেইজ সিডার মেশিনটি সরিয়েছিলেন। তদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। তাদেরকে নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন ও শাহিন উদ্দীন বিভিন্ন মহলে দৌঁড়-ঝাপ করে বেড়াচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিন্ন ভাষায় বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার জন্যই বিভিন্ন নাটক সাজানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তারা দোষী প্রমাণিত হলেও ইচ্ছা করেই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। মুসলে উদ্দীনকে তার মূল কর্মস্থল আলমডাঙ্গায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। জেলা অফিসে তিনি সংযুক্ত ছিলেন। আর এনায়েতুল্লাহ এখনো জেলা অফিসেই বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। দুজনেরই যাতে কোনো শাস্তি না হয়, সে জন্য জেলা অফিসের ঊর্ধ্বতনরা নিশ্চুপ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। আশা করছি, একটা ব্যবস্থা নেবে। আর আমি আপাতত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীনকে তার মূল কর্মস্থল আলমডাঙ্গায় পাঠিয়ে দিয়েছি।’