এইচএসসি সমমানের ফল প্রকাশ, চুয়াডাঙ্গায় পাশের হার ৫৭.৯৬ শতাংশ
যশোর বোর্ডের ১০ জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান অষ্টম- আপলোড টাইম : ০৯:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
- / ৭৭ বার পড়া হয়েছে
সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষা-২০২৪ এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সব বোর্ডের ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এ বছরে পাশের হার ৭৭ দশমিক ৭৮। গতবার এই হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪। এ বছর পাশের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের দুই হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন ও ছাত্রী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন।
ঢাকা বোর্ডে পাশের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে পাশের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যশোর বোর্ডে পাশের হার ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে পাশের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে পাশের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে পাশের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে পাশের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ।
এদিকে, ফল প্রকাশের পর দেশজুড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এদিন দুপুর ১২টার পর থেকে ফল জানতে বিভিন্ন কলেজ প্রাঙ্গণে বাড়তে থাকে ফলপ্রত্যাশী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি। এরপর প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে কর্তৃপক্ষের টানিয়ে দেওয়া ফল দেখে উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দল বেঁধে তাদের উল্লাস আর আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। দীর্ঘ সাধনা ও পরিশ্রমের পর কাক্সিক্ষত ফল পেয়ে আনন্দ প্রকাশে বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে, ছবি আর সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
এবারে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চুয়াডাঙ্গায় পাশের হার ৫৭.৯৬ শতাংশ। গত বছর পাশের হার ছিল ৬২.০৩ শতাংশ। পাশের হারের দিক বিবেচনায় যশোর বোর্ডের ১০ জেলার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার অবস্থান অষ্টম। জেলার ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট উপস্থিত ৭ হাজার ৫৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪ হাজার ৩৭২ জন পরীক্ষার্থী পাশ করেছেন। জেলার ১২টি কেন্দ্রে এসব শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নেয়। পাশকৃত ৪ হাজার ৩৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৮৮৮ জন ছাত্র এবং ২ হাজার ৪৮৪ জন ছাত্রী। পরীক্ষায় উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখা ৩ হাজার ১৭১জন।
যশোর বোর্ডের মধ্যে পাশের হারের দিক থেকে এবার চুয়াডাঙ্গার অবস্থান অষ্টম। প্রথম অবস্থানে আছে যশোর জেলা। এবার যশোর জেলায় পাশের হার ৭২.৮৪ শতাংশ। দ্বিতীয় খুলনা, পাশের হার ৭১.১৯, তৃতীয় সাতক্ষীরা ৭০.১১ শতাংশ, চতুর্থ নড়াইল ৬১.২৭ শতাংশ, পঞ্চম ঝিনাইদহ ৫৯.৪০, ষষ্ঠ কুষ্টিয়া ৫৮.৫২, সপ্তম মাগুরা ৫৮.২৩, অষ্টম অবস্থানে চুয়াডাঙ্গা ৫৭.৯৬ শতাংশ, নবম বাগেরহাট ৫৫.০৪ শতাংশ। সবথেকে কম পাশের হার মেহেরপুর জেলায়। এবারে ৫০.৩৮ শতাংশ পাশের হার নিয়ে যশোর বোর্ডের দশ জেলার মধ্যে সবার শেষে মেহেরপুর জেলা।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজে এবার সর্বমোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৮৭ জন। পাশ করেছে ৮৩৩ জন। পাশের হার ৮৪.৩৯শতাংশ, সর্বমোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪৬ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৯০ জন, মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪৮ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন। বিজ্ঞান বিভাগে পাশের হার ৯৭.৪৬ শতাংশ, মানবিক বিভাগে পাশের হার ৮৭.২৭ শতাংশ, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাশের হার ৬৬.২০ শতাংশ।
সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৬৬৭ জন। কৃতকার্য হয়েছে ৫০০ জন। অকৃতকার্য ১৬৭ জন। পাশের হার ৭৫ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ জন। চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজে পাশের হার ৪০.৩৫ শতাংশ। পৌর কলেজে সাধারণ থেকে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৫৬১ জন। পাশ করেছে ২৩২ জন। কারিগরি বিভাগ থেকে ৬৪ জন পরীক্ষা দিয়ে ৬০ জন পাশ করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ জন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ কে এম সাইফুর রশিদ বলেন, ফলাফলে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদেরকে আমি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। তারা উচ্চ শিক্ষায় উচ্চ জায়গায় তাদেরকে আসিন করে নেবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি। তিনি আরও বলেন, শতভাগ পাশ করলে আমি বেশি খুশি হতাম। আশা করছি, আগামীতে জিপিএ-৫ সহ পাশের হার আরও বৃদ্ধি পাবে।
এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট ১ হাজার ৯৩২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে ৮৫৪ জন কৃতকার্য হয়েছেন। যা পাশের হার ৪৪%। এবারের ফলাফলে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৬৩ জন। আর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ১ হাজার ৭৮ জন।
আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয়েছে। এই কলেজে ৫৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪৭ জন পাস করেছে, যার মধ্যে ৫৭ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৩২ জন, মানবিক বিভাগে ২৩ জন এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে ২ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। উপজেলায় ৪টি আলিম মাদ্রাসা থেকে মোট ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে ৭৭ জন কৃতকার্য ও ৮ জন অকৃতকার্য হয়েয়ে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। আলমডাঙ্গার ৬টি কলেজ, ৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং ৪টি আলিম মাদ্রাসা মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের ফলাফল মোটের ওপর আশাব্যঞ্জক হলেও পাসের হার কম হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ ও দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১ হাজার ৫৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮৮১ জন কৃতকার্য হয়েছে, ৬৯৭ জন অকৃতকার্য হয়েছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৮ জন। এর মধ্যে আব্দুল ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন ৫২৫ জন পরীক্ষার্থী। যার মধ্যে ২১২ জন কৃতকার্য, ৩১৩ জন অকৃতকার্য এবং ৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিএমটি শাখার ১৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে কৃতকার্য ১২৪ জন, অকৃতকার্য ৭ জন এবং জিপিএ পাঁচ পেয়েছে ৩ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়াও দর্শনা সরকারি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৯২২ পরীক্ষার্থী মধ্যে কৃতকার্য ৫৪৫, অকৃতকার্য ৩৭৭ এবং ২৯ পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েঠে। এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলার দুটি কলেজে পাসের হার কম হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও চিন্তার ছাপ দেখা গেছে।
অপর দিকে, জীবননগরে ৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে এ বছর মোট ১ হাজার ৭৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। যার মধ্যে ৬২৬ জন পাস করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৩ জন এবং অকৃতকার্য করেছে ৪৫১ জন। যার মধ্যে সরকারি আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ৩১৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ২৪৩ জন পাস করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ জন। জীবননগর ডিগ্রি কলেজ থেকে ৩৭৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৪৩ জন পাস করেছে এবং ৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, জীবননগর থানা আলিম আলিয়া মাদ্রাসার ৪৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। হাসাদাহ কামিল মাদ্রাসায় ৪৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪৪ জন পাস করেছে এবং ৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, উথলী মহাবিদ্যালয়ের ১৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ জন পাস করেছে এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন। আন্দুলবাড়ীয়া কলেজ থেকে ৪১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৩ জন পাস করেছে এবং ১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আন্দুলবাড়ীয়া আশরাফিয়া আলিম মাদ্রাসায় ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন পাস করেছে। এছাড়াও বিএম শাখায় জীবননগর ডিগ্রি কলেজ থেকে ৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ জন পাস করেছে এবং জীবননগর সরকারি আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ৩৬ জনের মধ্যে ৩৩ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন।
তবে, এইচএসসি পরীক্ষার এই ফলাফলের পরেও জীবননগরে কোনো উৎসবের চিহ্ন দেখা যায়নি। মিষ্টির দোকানগুলোতে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কোনো ভিড় ছিল না। উপজেলার বাজারের মৌচাক মিষ্টি অ্যান্ড দধি ভান্ডারের মালিক হাসান আলী বলেন, ‘প্রতিবছর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন দোকানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় থাকে, কিন্তু এবার তেমন কোনো কাস্টমার পাইনি।’