আ.লীগ নেতাদের মারধর ও টেন্ডারবাজিতে স্থবির ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড
প্রাণবন্ত ও কোলাহলমুখর পওর এখন অস্তিত্ব রক্ষায় ধুকছে- আপলোড টাইম : ০৫:২১:৩৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪
- / ৮১ বার পড়া হয়েছে
এক সময়ের প্রাণবন্ত ও কোলাহল মুখর ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডটি এখন অস্তিত্ব রক্ষায় ধুকছে। মৃতপ্রায় এই সরকারি দপ্তরটিতে দীর্ঘদিন জনবল না থাকায় যেমন কাজে গতি নেই, তেমনি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডও নেই। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে গাছাড়া ভাব। বেশিরভাগ সময় তারা অলস সময় পার করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নির্বাহী প্রকৌশলীদের মারধর ও টেন্ডার না দেওয়ায় হুমকি-ধমকির কারণে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে এমন স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে কোনো নির্বাহী প্রকৌশলী পূর্ণাঙ্গভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফকে মারধর করে জেলা আওয়ামমী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুর ভাতিজা শাহরিয়ার করিম রাসেল। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসে ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করা হয়। এই হামলা ও ভাঙচুরের খবর বিদ্যুৎবেগে সারা দেশ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভীতি ও আতঙ্ক ছড়ায়। মূলত এ ঘটনার পর থেকে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্ব পালন করতে চাননি কেউ। আবার অনেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঝিনাইদহে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও তারা ভয়ে ঠিকমতো অফিস করতে পারতেন না। ফলে পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী প্রকৌশলী না থাকায় এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৬ বছরে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আহামরি কোনো উন্নয়ন হয়নি। আবার যতসামান্য হলেও দলীয় প্রভাব বিস্তার ও কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে সব কাজ আওয়ামী লীগের নেতারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই দপ্তরটি।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলা অফিসের ১৪টি পদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীসহ ১০টি শূন্য ছিল। তবে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নতুন একজনকে পদায়ন করেছেন। এছাড়া দুটি সাবডিভিশন ও ৭টি সেকশন অফিসে মোট ৬৫টি পদের মধ্যে ৩৭টি পদে এখন কোনো লোকবল নেই।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মিনহাজুল ইসলাম জানান, লোকবল না থাকায় কোনো কাজই ঠিকমতো হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডোর বিশাল ভূসম্পত্তি রক্ষা করতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এদিকে, কাজ না থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা সাবডিভিশন অফিসগুলো ভেঙ্গেচুরে গেছে। অফিসের জানালা দরজা ও মূল্যবান গাছ চুরি হয়ে গেলেও ঠেকানোর লোক নেই।
সার্ভেয়ার আব্দুল বাতেন জানান, ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রায় ৭ হাজার একর জমি রয়েছে। কিন্তু লোকবল না থাকায় ৭০-৮০ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। নদী ও সেচ খাল দখল করে ভবন তৈরি করা হচ্ছে। উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার মতো পর্যাপ্ত কোনো লোকবল নেই। হরিণাকুণ্ডু, শৈলকুপা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সেচখাল এবং নদীর পাড় দখল করা হচ্ছে। এভাবে সরকারি সম্পদ বেহাত হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নতুন নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সরকার তাকে ঝিনাইদহে নিয়োগ করেছেন। তিনি ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পুনর্জ্জীবিত এবং শূন্যপদে লোকবল নিয়োগ করে আবারো প্রাণবন্ত করে তুলবেন বলে জানান।