৭ বছর ধরে খেলাধুলা বন্ধ, ধ্বংসের পথে ক্রীড়াঙ্গন
ঝিনাইদহের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামের সামনে হাঁটুপানি
- আপলোড টাইম : ০৩:৪১:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
- / ৬১ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহের ক্রীড়াঙ্গন এখন ধ্বংসের পথে। ৭ বছর মাঠে বল গড়ায় না। নেই খেলার কোনো প্রতিযোগিতা। ফুটবল, ভলিবল এমনকি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দীর্ঘদিন বন্ধ। আওয়ামী লীগ নেতাদের পদ দখলের কামড়া কামড়িতে ঝিনাইদহ ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন ঝুলে আছে। মামলা জটিলতায় নির্বাচন না হওয়ায় ক্রীড়া সংস্থা এখন অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলছে।
পেশাদার খেলোয়াড়দের যাতায়াত না থাকায় জেলার একমাত্র বৃহৎ খেলার মাঠ ঝিনাইদহ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামটি খাঁ খাঁ করছে। স্টেডিয়ামের সংস্কার নেই। মাঠের গ্যালারি, ড্রেসিং রুম আর ক্রীড়া সংস্থার অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চাকচিক্য হারাচ্ছে। স্টেডিয়ামের সামনে এখন হাঁটুপানি। সেখানে জলকেলি করে হাঁসের দল।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, পেশাদার খেলোয়াড়দের নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল ঝিনাইদহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কিন্তু ১৪ বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতারা ক্রীড়া সংস্থা দখল করে নেওয়ায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে খেলার মান। ক্লাবভিত্তিক খেলা প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালে ক্রীড়া সংস্থায় কাউন্সিলর বানানো নিয়ে যুবলীগ নেতা রাশিদুর রহমান রাসেল ও আওয়ামী লীগ নেতা জীবন কুমার বিশ^াসের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধে। সেই দ্বন্দ্ব গড়ায় উচ্চ আদালতে। মামলা হওয়ায় স্টেডিয়ামে সব ধরণের প্রতিযোগিতাসহ খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। খেলেয়াড়দের পরিবর্তে আমলাদের নিয়ে গঠিত হয় ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি। এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে খেলোয়াড়দের মাঝে।
এদিকে খেলাধুলা বা বড় ধরণের কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন না থাকলেও ক্রীড়া সংস্থার খরচ থেমে নেই। ২০১৪ সালের ১০ মে থেকে ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্রীড়া সংস্থার জনতা ব্যাংকে জমা হয় মোট ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের ২২ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে ক্রীড়া সংস্থার আরেকটা অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১০ জুন দুটি চেকের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এই টাকা কোন খাতে ব্যয় দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে, তার হিসাব জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নেই। দীর্ঘদিন আভ্যন্তরীন অডিট না হওয়ায় ক্রীড়া খাতে বেশুমার লুটপাট হয়েছে, এমন অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ।
ঝিমিয়ে পড়া ঝিনাইদহের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে জেলার সাবেক ফুটবলার ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক আহসান উদ্দীন আফাঙ্গীর বলেন, ক্রীড়া সংস্থার নেতৃত্ব পেশাদার খেলোয়াড়দের হাতে ফিরিয়ে না দিলে মাঠে প্রাণবন্ত পরিবেশ ফিরে আসবে না। তিনি দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন দাবি করেন।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি গঠন হলে কেবল ক্রীড়ায় প্রাণ ফিরতে পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুম চলে গেলে আশা করা যায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়াম আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।