ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে মেশিন চুরির পর আবার ফেরত দিল চোরেরা

ফেঁসে যাচ্ছেন দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবস্থা নিতে ধীরগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১১৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে চুরি হওয়া মেইজ সিডার (বীজ বপন যন্ত্র) মেশিন ফেরত দিয়ে গেছেন চোরেরা। চুরি-ফেরত আর তদন্তের গড়িমসিতেই ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চলছে নাটকীয় অবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেই সরকারি মেশিন চুরির অভিযোগ। আবার তদন্ত কমিটি হওয়ার পর চুরি যাওয়া মেশিন ফেরত ও অভিযুক্তদের সনাক্ত করার পরও ব্যবস্থা না নেয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সামালোচনা।

জানা গেছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউনে রাখা ছিল বিভিন্ন কৃষিসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টোরকিপার বুঝতে পারেন গোডাউন থেকে একটি দামি কৃষি যন্ত্র মেইজ সিডার গায়েব। বিষয়টি নিয়ে হই-চই পড়ে যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় জেলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোমরেজ আলীকে।

তদন্ত শুরু হওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সিসিটিভি ফুটেজও সামনে আসে। বেরিয়ে আসে চুরি যাওয়ার আসল রহস্য। এরপর আবার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কে বা কারা সেই মেশিনটির তিনটি টুকরো হওয়া অংশ স্টোরের পিছনে রেখে চলে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। চুরি যাওয়া, ফেরত দেয়া এসব নিয়ে শেষমেষ তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারের কাছে।
এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও তদন্তে ধীরগতি, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং পুনরায় ফেরত দিয়ে যাওয়ার এই নাটকীয় ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সরকারি দপ্তরের জিনিস চুরির পর ফেরত দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেকেই করছেন হাসাহাসি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহ মেইজ সিডার মেশিনটি সরিয়েছিলেন। তদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। তদন্তে ধীরগতি এবং মেশিন স্টোরের পিছনে গাছপালার মধ্যে রেখে যাওয়াকে ছাড়ের সুযোগ করে দেয়া বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিন্ন ভাষায় বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার জন্যই এসব নাটক সাজানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তারা দোষী প্রমাণিত হলেও ইচ্ছা করেই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। এ ধরনের কাজের পরও শাস্তি না দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হতে পারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা কে সরিয়েছে আমি জানি না। পরে আবার যাইহোক, সেটা ওই জায়গাতেই চলে গেছে। তা ছাড়া কিছু আমি জানি না।’

আরেক অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ৫ মিনিট পর কল দিচ্ছি।’ তিনি যোগাযোগ না করলে পরে আবারও কল দিলে তিনি মুঠোফোনটি পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্ত পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির সাথে এই প্রতিবেদকের কথা বলতে বলেন। তবে এই প্রতিবেদক, বিএনপি নেতার সাথে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোমরেজ আলী বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন আমি উপ-পরিচালক মহোদয়ের কাছে জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, মেশিনটি ফেরত পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আমি পেয়েছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় দুজন অভিযুক্তের নাম বলে অভিযুক্তদের বিষয়ে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি অভিযুক্তদের নাম সঠিক বললেও বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে মেশিন চুরির পর আবার ফেরত দিল চোরেরা

ফেঁসে যাচ্ছেন দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবস্থা নিতে ধীরগতি

আপলোড টাইম : ০৯:৪৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে চুরি হওয়া মেইজ সিডার (বীজ বপন যন্ত্র) মেশিন ফেরত দিয়ে গেছেন চোরেরা। চুরি-ফেরত আর তদন্তের গড়িমসিতেই ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে চলছে নাটকীয় অবস্থা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেই সরকারি মেশিন চুরির অভিযোগ। আবার তদন্ত কমিটি হওয়ার পর চুরি যাওয়া মেশিন ফেরত ও অভিযুক্তদের সনাক্ত করার পরও ব্যবস্থা না নেয়াকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে সামালোচনা।

জানা গেছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউনে রাখা ছিল বিভিন্ন কৃষিসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্টোরকিপার বুঝতে পারেন গোডাউন থেকে একটি দামি কৃষি যন্ত্র মেইজ সিডার গায়েব। বিষয়টি নিয়ে হই-চই পড়ে যায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। ২৪ সেপ্টেম্বর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় জেলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মোমরেজ আলীকে।

তদন্ত শুরু হওয়ার পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের সিসিটিভি ফুটেজও সামনে আসে। বেরিয়ে আসে চুরি যাওয়ার আসল রহস্য। এরপর আবার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে কে বা কারা সেই মেশিনটির তিনটি টুকরো হওয়া অংশ স্টোরের পিছনে রেখে চলে যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নজরে আসে। চুরি যাওয়া, ফেরত দেয়া এসব নিয়ে শেষমেষ তদন্ত কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকারের কাছে।
এদিকে, সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও তদন্তে ধীরগতি, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া এবং পুনরায় ফেরত দিয়ে যাওয়ার এই নাটকীয় ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। সরকারি দপ্তরের জিনিস চুরির পর ফেরত দেয়াকে কেন্দ্র করে অনেকেই করছেন হাসাহাসি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহ মেইজ সিডার মেশিনটি সরিয়েছিলেন। তদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হলেও তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়। তদন্তে ধীরগতি এবং মেশিন স্টোরের পিছনে গাছপালার মধ্যে রেখে যাওয়াকে ছাড়ের সুযোগ করে দেয়া বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা কৃষি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিন্ন ভাষায় বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীন ও নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহকে বিশেষ ছাড় দেওয়ার জন্যই এসব নাটক সাজানো হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে তারা দোষী প্রমাণিত হলেও ইচ্ছা করেই তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। এ ধরনের কাজের পরও শাস্তি না দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তৈরি হতে পারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

অভিযুক্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মুসলে উদ্দীনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা কে সরিয়েছে আমি জানি না। পরে আবার যাইহোক, সেটা ওই জায়গাতেই চলে গেছে। তা ছাড়া কিছু আমি জানি না।’

আরেক অভিযুক্ত নিরাপত্তা প্রহরী মো. এনায়েতুল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ৫ মিনিট পর কল দিচ্ছি।’ তিনি যোগাযোগ না করলে পরে আবারও কল দিলে তিনি মুঠোফোনটি পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্ত পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির সাথে এই প্রতিবেদকের কথা বলতে বলেন। তবে এই প্রতিবেদক, বিএনপি নেতার সাথে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট না হওয়ায় কথা বলতে রাজি হননি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোমরেজ আলী বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন আমি উপ-পরিচালক মহোদয়ের কাছে জমা দিয়েছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, মেশিনটি ফেরত পাওয়া গেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও আমি পেয়েছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় দুজন অভিযুক্তের নাম বলে অভিযুক্তদের বিষয়ে এই প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি অভিযুক্তদের নাম সঠিক বললেও বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।