ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন মগের মুল্লুক

ঘুসের টাকা না পেলে হয়রানি করেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১২:১৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৯৫ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের মহেশপুরে স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস মগেরমুল্লুক বানিয়ে ফেলেছেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস। ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির পাশাপাশি নিচ্ছেন খাজনার অতিরিক্ত টাকা। ঘুষের টাকা না পেলে সেবা গ্রহীতাদের অহরহ হয়রানি করেন তিনি। জমির নামজারি, ডিসিআর ও মিসকেসসহ নানা খাত থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ইউনিয়নের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস বেশি হয়রানি করেন নামজারি, দাখিলা কাটা ও মিসকেস নিয়ে। নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করা হলেও প্রতিবেদন নিতে তাকে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়। টাকা না দিলে প্রতিবেদন দিতে দেরি করেন। এভাবে তিনি মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার নামজারি কেস মঞ্জুর হলে ডিসিআরের জন্য অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। এরপর হোল্ডিং নম্বরের জন্য ভূমি অফিসে গেলে সেখানেও থাবা বসান নিকুঞ্জ কুমার।

স্বরুপপুর ইউনিয়নের কোশাডাঙ্গা গ্রামের আবু বক্কর অভিযোগ করেন, তার পিতা আবরুজ আলী ও মা আরজু বানুর হুদা কুশাডাঙ্গা মৌজার ৩৬০৪ নম্বর দাগে ৫৩ শতক ধানী জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য গেলে অতিরিক্ত টাকা না দেওয়া পর্যন্ত নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস খাজনার রশিদ দেননি। তিনি অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে ১০২ টাকার দাখিলা দিয়েছে। একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে ৮০ টাকার দাখিলা দিয়ে তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে। কুসুমপুর গ্রামের ইদু ফকিরের ছেলে আবুল কাসেম বলেন, কুসুমপুর মৌজার ৮৬৪ খতিয়ানে ৭৬ ও ৪৫৭ নম্বর দাগে ধানী ও ডাঙ্গা জমির ৭২ শতক জমির নামজারি ও ভূমি কর পরিশোধ জন্য ভূমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাসের কাছে গেলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি শেষ মেষ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় রফা করেছেন বলে জানান। 

কেশবপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী মন্ডলের ছেলে হোসেন আলী অভিযোগ করেন, তাকে ১৮০ টাকার দাখিলা দিয়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস। আর যারা ঘুষের টাকা দিতে পারে না, তাদের খাজনা নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। কুশাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন জানান, তিনি খাজনা দিতে বহুবার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাসের কাছে গেছেন, কিন্তু ঘুসের টাকা না দিলে জমির খাজনা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন আমি ৩ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে ১৮০ টাকার দাখিলা দিয়েছে। এভাবে নিকুঞ্জ শত শত জমির মালিকের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। একই গ্রামের মাজেদা বেগমেরও। তিনি ৩ হাজার টাকা দিয়ে ১৮০ টাকার দাখিলা পেয়েছেন।

তবে স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। জমির মালকরা খুশি হয়ে যা দেন তার বাইরে আমি একটা টাকাও গ্রহণ করি না। এখন মানুষ যদি খুশি হয়ে বেশি টাকা দেয় তাহলে আমরা কি করার আছে।

মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ শাওন জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি নিজে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবেন না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেন মগের মুল্লুক

ঘুসের টাকা না পেলে হয়রানি করেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ

আপলোড টাইম : ১২:১৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

ঝিনাইদহের মহেশপুরে স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস মগেরমুল্লুক বানিয়ে ফেলেছেন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস। ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির পাশাপাশি নিচ্ছেন খাজনার অতিরিক্ত টাকা। ঘুষের টাকা না পেলে সেবা গ্রহীতাদের অহরহ হয়রানি করেন তিনি। জমির নামজারি, ডিসিআর ও মিসকেসসহ নানা খাত থেকে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে ইউনিয়নের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস বেশি হয়রানি করেন নামজারি, দাখিলা কাটা ও মিসকেস নিয়ে। নামজারির জন্য অনলাইনে আবেদন করা হলেও প্রতিবেদন নিতে তাকে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হয়। টাকা না দিলে প্রতিবেদন দিতে দেরি করেন। এভাবে তিনি মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আবার নামজারি কেস মঞ্জুর হলে ডিসিআরের জন্য অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। এরপর হোল্ডিং নম্বরের জন্য ভূমি অফিসে গেলে সেখানেও থাবা বসান নিকুঞ্জ কুমার।

স্বরুপপুর ইউনিয়নের কোশাডাঙ্গা গ্রামের আবু বক্কর অভিযোগ করেন, তার পিতা আবরুজ আলী ও মা আরজু বানুর হুদা কুশাডাঙ্গা মৌজার ৩৬০৪ নম্বর দাগে ৫৩ শতক ধানী জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য গেলে অতিরিক্ত টাকা না দেওয়া পর্যন্ত নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস খাজনার রশিদ দেননি। তিনি অভিযোগ করেন, তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে ১০২ টাকার দাখিলা দিয়েছে। একই গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে ৮০ টাকার দাখিলা দিয়ে তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়েছে। কুসুমপুর গ্রামের ইদু ফকিরের ছেলে আবুল কাসেম বলেন, কুসুমপুর মৌজার ৮৬৪ খতিয়ানে ৭৬ ও ৪৫৭ নম্বর দাগে ধানী ও ডাঙ্গা জমির ৭২ শতক জমির নামজারি ও ভূমি কর পরিশোধ জন্য ভূমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাসের কাছে গেলে তিনি পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি শেষ মেষ সাড়ে ৪ হাজার টাকায় রফা করেছেন বলে জানান। 

কেশবপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলী মন্ডলের ছেলে হোসেন আলী অভিযোগ করেন, তাকে ১৮০ টাকার দাখিলা দিয়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস। আর যারা ঘুষের টাকা দিতে পারে না, তাদের খাজনা নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন। কুশাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন জানান, তিনি খাজনা দিতে বহুবার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাসের কাছে গেছেন, কিন্তু ঘুসের টাকা না দিলে জমির খাজনা গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন আমি ৩ হাজার টাকা খাজনা দিয়ে ১৮০ টাকার দাখিলা দিয়েছে। এভাবে নিকুঞ্জ শত শত জমির মালিকের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। একই গ্রামের মাজেদা বেগমেরও। তিনি ৩ হাজার টাকা দিয়ে ১৮০ টাকার দাখিলা পেয়েছেন।

তবে স্বরুপপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়। জমির মালকরা খুশি হয়ে যা দেন তার বাইরে আমি একটা টাকাও গ্রহণ করি না। এখন মানুষ যদি খুশি হয়ে বেশি টাকা দেয় তাহলে আমরা কি করার আছে।

মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ শাওন জানান, এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা তার কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তিনি নিজে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবেন না।