ইপেপার । আজ শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চুয়াডাঙ্গায় রেলের জায়গায় থাকা বন বিভাগের গাছ ইচ্ছামতো কাটছিলেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৮২ বার পড়া হয়েছে

রেলওয়ের জায়গায় থাকা বন বিভাগের গাছ ইচ্ছামতো কাটছিলেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানানো হয়নি বন বিভাগকে। রক্ষণাবেক্ষণে থাকা উপকারভোগী সমিতির লোকজনও ছিলেন নিরুপায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এক্টিভিটি কম হওয়ার সুযোগে এবার বড় আকারে গাছ সাবাড়ে মেতেছিলেন চুয়াডাঙ্গা রেলের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তিন দিন ধরে ৩৫টি বড় গাছ ইতোমধ্যে কাটাও হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসে চুয়াডাঙ্গার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বন বিভাগসহ প্রশাসনকে জানালে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। দীর্ঘ সময় ধরেই এই গাছ সাবাড়কারী চক্র মেতেছিল লাইন রক্ষার নাম করে গাছ চুরিতে। তবে এখন আবার রেলের লোকজন দোষ দিচ্ছেন বন বিভাগকে, আর বন বিভাগ দোষ দিচ্ছেন রেলের লোকজনকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর গাছ কাটা হলেও ১৫ দিনে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। ছাত্রদলের দাবি, তারা বিষয়টি নজরে না আনলে গাছ চুরির ছলেই বিক্রি হয়ে যেতো।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ের জায়গায় বনায়নের জন্য বন বিভাগ টেংরামারী রেল বনায়ন সমিতির মাধ্যমে গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করে আসছে। বন বিভাগের অধীনে এই সমিতির প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো এখন বড়। প্রত্যেকটির গুড়ি হয়েছে বেশ মোটা। তবে বিভিন্ন সময় রেলের লোকজন চুরি করে বিক্রি করছিলেন এই গাছ। অনুমতি বাদেই মাঝে মাঝেই কাটা হতো গাছগুলো। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোমিনপুর ইউনিয়নের নোয়াকারা আর গজলোগাড়ির মাঠের প্রায় ৩৫টি গাছ চুরির পায়তারা করে এই অসাধু দুই-তিনজন রেল কর্মচারী। তাদের নেতৃত্বেই বেশ কয়েকজন দিনমজুর এই গাছগুলো কেটেছেন বলে জানা যায়। গাছ কাটার প্রায় অর্ধমাস পূর্ণ হলেও রেল বা বন বিভাগ কোনো দপ্তরই এখন পর্যন্ত নেয়নি কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নজরে আসার পরই বিষয়টি সামনে আসে।

চুয়াডাঙ্গা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দীন বলেন, ‘বাগান মূলত সমিতির মাধ্যমেই পরিচালনা করা হয়। রেলের একটি নির্দেশনা হয়ত ছিল, হেলে পড়া লতা-পাতা-ডালপালা কাটার। তবে হাবিব নামের একজন রেলের কিম্যান (চাবি ম্যান) ৮-১০ জন লোকজন নিয়ে গিয়ে প্রায় ৩৫টির মতো গাছ কেটেছে। মোটা মোটা ৪৬টি গুড়ি হয়েছে। তার সাথে ওয়েম্যান সাইফুলও ছিলেন। গাছগুলো কাটা দেখে সমিতির সভাপতি আমাকে জানায়। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। ৩-৪টা গাছ হেলে পড়েছিল। রেলের গাছ হলেও কেউ সরকারি বিধি মোতাবেক কাটতে পারে না। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। গাছগুলো আনার সময় ছাত্রদলের ছেলেরা আটকায়। তারা আমাকে এবং প্রশাসনকে জানায়। সরকারি সম্পদ বলে গাছগুলো আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। অফিসিয়ালি আমরা রেলওয়েকে অবহিত করেছি। আমরাও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাছ কাটলে অনুমতি নিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কাটি। ওনারা চুরি করে গাছ কাটে। চুরি করে বলতে ওনাদের নির্দেশনাতেই ওনারা গাছ কাটে। আমি বিষয়টি নিয়ে ওয়েম্যান সাইফুলকে চার্জ করি। আপনি কিসের বলে গাছ কাটলেন? উনি অস্বীকার করলে আমি ছবি দেখালাম। আমি বললাম, যেহেতু গাছ আমাদের, আপনারা কেটেছেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মর্তার সাথে কথা বলব। তবে গাছ আমরা আমাদের হেফাজতে নেব। তখন সাইফুল আমাকে বলেন, গাছ নিতে হলে ওনাকে লিখিত দিতে হবে। আমি বললাম, গাছ কাটার সময় আমাদের অনুমতি নিয়েছেন? আপনারা লিখিত দিয়েছেন? হাবিবকেও বলেছিলাম, কোন অফিসার গাছ কাটতে বলেছে, আপনি বলেন। না হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে তিনি কিছু বলেননি। আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

রেলের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাছগুলো বন বিভাগের। ঝড়ে রেল লাইনের ওপর হেলে পড়ে গিয়েছিল। হেলে পড়া ছবি আছে কি না জানি না। এটা ভুল না ইচ্ছাকৃত বলতে পারছি না। তবে এতগুলো গাছ একবারে কাটা ঠিক হয়নি, সেটাও ঠিক আছে। বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়ে আল্লাহ জানে। আমি তো বলতে পারব না। আমি তো এতগুলো গাছ কাটতে নির্দেশ দিতে পারি না। আমি নির্দেশ দিইনি। আমি জানি না, কেউ অনুমতি দিয়েছে কি না। কাটার পর জানতে পারছি। হাবিব কি-ম্যান, আমার স্টাফ না। এখানে ডিপার্টমেন্ট অনেকগুলো।’

রেলের কি-ম্যান মো. হাবিব বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে যে ঝড় হয়েছিল, তখন কিছু গাছ রেল লাইনের ওপর হেলে পড়ে। ঝুকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে ওখানেই ফেলে রাখি। আমি কোনো কিছুর মধ্যে নেই। বন বিভাগ লেবার নিয়ে গাছ কেটেছে। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, রাতে আমরা গাছ পরিষ্কার করেছি। আমার সাথে ওয়েম্যান সাইফুল ছিল। আমরা ৩৫টি গাছ কাটিনি। দু-পাঁচটা গাছ আমরা কেটেছি। এই গাছগুলো কেটেছে বন বিভাগ। আমার গাছ কাটার কোনো উপযুক্ত ডকুমেন্ট কেউ দিতে পারবে না।’ কার অনুমতিতে গাছ কেটেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিব বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছি।’ তবে তিনি কোনো কর্মকর্তার নাম জানাননি।

ওয়েম্যান সাইফুল বলেন, ‘আমরা গাছ কাটতে যাবো কেন। আমরা রেলে চাকরি করি, বন বিভাগের গাছ কাটার এখতিয়ার আমাদের নেই। কিম্যান হাবিবরা ছিল আর আমাদের মিস্ত্রিরা ছিল। ওখানে আমরা কোনো গাছই কাটিনি। সমিতির সভাপতি নজরুল ও বন বিভাগের লোকজন গাছগুলো কেটেছে। রেলের ওপরে ঝড়-বৃষ্টিতে পড়া গাছ কেটে আমরা রেখেছিলাম। গাছ কাটার দায়িত্ব আমার না। আমরা ওখানে যায়নি, হাতও দিইনি।’

টেংরামারী রেল বনায়ন সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কেটে দিয়েছিল। বন বিভাগের লোকজনের কথায় আমি গাছগুলো বন বিভাগে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কী বিষয় আসলে বন বিভাগের বড় স্যাররা জানে। সমিতির নাম থাকলেও আমাদের কাগজপত্র দিয়েছিল না। আমরা বললে রেলের লোকজন বলত তোমাদের ও বন বিভাগের আর কোনো দায়িত্ব নেই। আমাদের মতো মানুষের কথার ওনারা দামই দেয়নি। আগেও রেলের লোকজন গাছ কেটেছে। নানা অজুহাতে গাছ কাটা হয়। এখন সরকারি কর্মকর্তা কথা বললে তো আমরা ফেরে পড়ে যাবো। আবার তারা বলছে, তোমাদের আর কিছু নেই, মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিন দিন আগে ওই দলিল বন বিভাগ দিয়েছে। গোড়া চারেক গাছ ভেঙ্গে-চুরে উপড়ে গিয়েছিল। এখন সরকারি লোক অনেক গাছ কেটেছে, আমাদের তো কিছু বলার নেই।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলের সহকারী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

চুয়াডাঙ্গায় রেলের জায়গায় থাকা বন বিভাগের গাছ ইচ্ছামতো কাটছিলেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

আপলোড টাইম : ১০:৪১:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

রেলওয়ের জায়গায় থাকা বন বিভাগের গাছ ইচ্ছামতো কাটছিলেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জানানো হয়নি বন বিভাগকে। রক্ষণাবেক্ষণে থাকা উপকারভোগী সমিতির লোকজনও ছিলেন নিরুপায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের এক্টিভিটি কম হওয়ার সুযোগে এবার বড় আকারে গাছ সাবাড়ে মেতেছিলেন চুয়াডাঙ্গা রেলের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। তিন দিন ধরে ৩৫টি বড় গাছ ইতোমধ্যে কাটাও হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসে চুয়াডাঙ্গার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বন বিভাগসহ প্রশাসনকে জানালে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। দীর্ঘ সময় ধরেই এই গাছ সাবাড়কারী চক্র মেতেছিল লাইন রক্ষার নাম করে গাছ চুরিতে। তবে এখন আবার রেলের লোকজন দোষ দিচ্ছেন বন বিভাগকে, আর বন বিভাগ দোষ দিচ্ছেন রেলের লোকজনকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর গাছ কাটা হলেও ১৫ দিনে এখন পর্যন্ত কোনো বিভাগই এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়নি। ছাত্রদলের দাবি, তারা বিষয়টি নজরে না আনলে গাছ চুরির ছলেই বিক্রি হয়ে যেতো।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ের জায়গায় বনায়নের জন্য বন বিভাগ টেংরামারী রেল বনায়ন সমিতির মাধ্যমে গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করে আসছে। বন বিভাগের অধীনে এই সমিতির প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানো হয়। গাছগুলো এখন বড়। প্রত্যেকটির গুড়ি হয়েছে বেশ মোটা। তবে বিভিন্ন সময় রেলের লোকজন চুরি করে বিক্রি করছিলেন এই গাছ। অনুমতি বাদেই মাঝে মাঝেই কাটা হতো গাছগুলো। গত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোমিনপুর ইউনিয়নের নোয়াকারা আর গজলোগাড়ির মাঠের প্রায় ৩৫টি গাছ চুরির পায়তারা করে এই অসাধু দুই-তিনজন রেল কর্মচারী। তাদের নেতৃত্বেই বেশ কয়েকজন দিনমজুর এই গাছগুলো কেটেছেন বলে জানা যায়। গাছ কাটার প্রায় অর্ধমাস পূর্ণ হলেও রেল বা বন বিভাগ কোনো দপ্তরই এখন পর্যন্ত নেয়নি কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের নজরে আসার পরই বিষয়টি সামনে আসে।

চুয়াডাঙ্গা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিব উদ্দীন বলেন, ‘বাগান মূলত সমিতির মাধ্যমেই পরিচালনা করা হয়। রেলের একটি নির্দেশনা হয়ত ছিল, হেলে পড়া লতা-পাতা-ডালপালা কাটার। তবে হাবিব নামের একজন রেলের কিম্যান (চাবি ম্যান) ৮-১০ জন লোকজন নিয়ে গিয়ে প্রায় ৩৫টির মতো গাছ কেটেছে। মোটা মোটা ৪৬টি গুড়ি হয়েছে। তার সাথে ওয়েম্যান সাইফুলও ছিলেন। গাছগুলো কাটা দেখে সমিতির সভাপতি আমাকে জানায়। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল। ৩-৪টা গাছ হেলে পড়েছিল। রেলের গাছ হলেও কেউ সরকারি বিধি মোতাবেক কাটতে পারে না। বিষয়টি আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানায়। গাছগুলো আনার সময় ছাত্রদলের ছেলেরা আটকায়। তারা আমাকে এবং প্রশাসনকে জানায়। সরকারি সম্পদ বলে গাছগুলো আমাদের হেফাজতে নিয়েছি। অফিসিয়ালি আমরা রেলওয়েকে অবহিত করেছি। আমরাও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গাছ কাটলে অনুমতি নিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে গাছ কাটি। ওনারা চুরি করে গাছ কাটে। চুরি করে বলতে ওনাদের নির্দেশনাতেই ওনারা গাছ কাটে। আমি বিষয়টি নিয়ে ওয়েম্যান সাইফুলকে চার্জ করি। আপনি কিসের বলে গাছ কাটলেন? উনি অস্বীকার করলে আমি ছবি দেখালাম। আমি বললাম, যেহেতু গাছ আমাদের, আপনারা কেটেছেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মর্তার সাথে কথা বলব। তবে গাছ আমরা আমাদের হেফাজতে নেব। তখন সাইফুল আমাকে বলেন, গাছ নিতে হলে ওনাকে লিখিত দিতে হবে। আমি বললাম, গাছ কাটার সময় আমাদের অনুমতি নিয়েছেন? আপনারা লিখিত দিয়েছেন? হাবিবকেও বলেছিলাম, কোন অফিসার গাছ কাটতে বলেছে, আপনি বলেন। না হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে তিনি কিছু বলেননি। আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।’

রেলের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাছগুলো বন বিভাগের। ঝড়ে রেল লাইনের ওপর হেলে পড়ে গিয়েছিল। হেলে পড়া ছবি আছে কি না জানি না। এটা ভুল না ইচ্ছাকৃত বলতে পারছি না। তবে এতগুলো গাছ একবারে কাটা ঠিক হয়নি, সেটাও ঠিক আছে। বিভাগীয় ব্যবস্থার বিষয়ে আল্লাহ জানে। আমি তো বলতে পারব না। আমি তো এতগুলো গাছ কাটতে নির্দেশ দিতে পারি না। আমি নির্দেশ দিইনি। আমি জানি না, কেউ অনুমতি দিয়েছে কি না। কাটার পর জানতে পারছি। হাবিব কি-ম্যান, আমার স্টাফ না। এখানে ডিপার্টমেন্ট অনেকগুলো।’

রেলের কি-ম্যান মো. হাবিব বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে যে ঝড় হয়েছিল, তখন কিছু গাছ রেল লাইনের ওপর হেলে পড়ে। ঝুকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে ওখানেই ফেলে রাখি। আমি কোনো কিছুর মধ্যে নেই। বন বিভাগ লেবার নিয়ে গাছ কেটেছে। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে, রাতে আমরা গাছ পরিষ্কার করেছি। আমার সাথে ওয়েম্যান সাইফুল ছিল। আমরা ৩৫টি গাছ কাটিনি। দু-পাঁচটা গাছ আমরা কেটেছি। এই গাছগুলো কেটেছে বন বিভাগ। আমার গাছ কাটার কোনো উপযুক্ত ডকুমেন্ট কেউ দিতে পারবে না।’ কার অনুমতিতে গাছ কেটেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিব বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গাছ কেটেছি।’ তবে তিনি কোনো কর্মকর্তার নাম জানাননি।

ওয়েম্যান সাইফুল বলেন, ‘আমরা গাছ কাটতে যাবো কেন। আমরা রেলে চাকরি করি, বন বিভাগের গাছ কাটার এখতিয়ার আমাদের নেই। কিম্যান হাবিবরা ছিল আর আমাদের মিস্ত্রিরা ছিল। ওখানে আমরা কোনো গাছই কাটিনি। সমিতির সভাপতি নজরুল ও বন বিভাগের লোকজন গাছগুলো কেটেছে। রেলের ওপরে ঝড়-বৃষ্টিতে পড়া গাছ কেটে আমরা রেখেছিলাম। গাছ কাটার দায়িত্ব আমার না। আমরা ওখানে যায়নি, হাতও দিইনি।’

টেংরামারী রেল বনায়ন সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, রেল কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কেটে দিয়েছিল। বন বিভাগের লোকজনের কথায় আমি গাছগুলো বন বিভাগে নিয়ে যাচ্ছিলাম। কী বিষয় আসলে বন বিভাগের বড় স্যাররা জানে। সমিতির নাম থাকলেও আমাদের কাগজপত্র দিয়েছিল না। আমরা বললে রেলের লোকজন বলত তোমাদের ও বন বিভাগের আর কোনো দায়িত্ব নেই। আমাদের মতো মানুষের কথার ওনারা দামই দেয়নি। আগেও রেলের লোকজন গাছ কেটেছে। নানা অজুহাতে গাছ কাটা হয়। এখন সরকারি কর্মকর্তা কথা বললে তো আমরা ফেরে পড়ে যাবো। আবার তারা বলছে, তোমাদের আর কিছু নেই, মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তিন দিন আগে ওই দলিল বন বিভাগ দিয়েছে। গোড়া চারেক গাছ ভেঙ্গে-চুরে উপড়ে গিয়েছিল। এখন সরকারি লোক অনেক গাছ কেটেছে, আমাদের তো কিছু বলার নেই।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা রেলের সহকারী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।