ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

হাসান নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ; মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০৫:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১২৯ বার পড়া হয়েছে

মধ্যপ্রাচ্যে দানব হয়ে উঠেছে ইসরাইল। যুদ্ধ আর যুদ্ধই যেন তাদের কাজ। গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি এবার লেবাননে হামলা শুরু করেছে অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটি। তাদের থামানোর যেন কেউ নেই। ইসরাইলের বেপরোয়া আচরণ মধ্যপ্রাচ্যকে সারাক্ষণ অস্থিতিশীল করে রাখছে। গত শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। তার সাথে হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারসহ আরো ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে ইরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার জন্যও ইসরাইলকে দায়ী করা হয়। জানা গেছে, শুক্রবার বৈরুতে ইসরাইলি বিমান থেকে যে বোমা ফেলা হয় সেগুলোর একেকটির ওজন ছিল এক টন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ১৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরাইল। বৈরুতে এই হামলা ছিল ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ। ইসরাইলি বিমানবাহিনীর প্রকাশিত তথ্য বলছে, তারা ৮৫ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। প্রতিটি বোমাই ছিল এক টন ওজনের। এসব বোমা হামলার ফলে বৈরুতে ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইসরাইলের বিমান হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লেবানন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সিরিয়ায় চলে গেছে। আর সীমান্তে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর লড়াইয়ের কারণে গত আটই অক্টোবর থেকে প্রায় সত্তর হাজার মানুষ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরাইলের হাতে হিজবুল্লাহর নেতাদের হত্যার পেছনে অন্যতম কারণ গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থন। হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এই আপত্তিকর মন্তব্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি হিসাবে কাজ করবে। জো বাইডেন ও তার দেশ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাসহ ইসরাইলের সব অপকর্মে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার পর ইসরাইলকে মোকাবেলার জন্য বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খামেনি বলেছেন, ইহুদিবাদীদের জানা উচিত, লেবাননে হিজবুল্লাহর মজবুত ভিত্তির বড় কোনো ক্ষতি করার যোগ্যতা তাদের নেই। এই অঞ্চলের সব প্রতিরোধী শক্তি হিজবুল্লাহর পাশে আছে এবং সমর্থন করবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, আমরা আমাদের আন্তরিক সমবেদনা, সহানুভূতি ও সংহতি জানাচ্ছি ভ্রাতৃপ্রতিম লেবাননের জনগণ এবং হিজবুল্লাহর ভাইদের ও লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধের প্রতি। হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে ইরান হিজবুল্লাহ ও ওই অঞ্চলটিতে সক্রিয় অন্য ইসরাইলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর (ইরানের সহায়তাপুষ্ট) সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। ইসরাইল-লেবাননের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের অন্য মিত্র দেশগুলো। কিন্তু তার কোনো তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। ইসরাইল তাদের ইনন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়। আর সেটা করতে গিয়ে তারা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নানা সঙ্ঘাতে জড়াচ্ছে। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো রক্তপাত নয়, শান্তি চাই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

হাসান নাসরুল্লাহ হত্যাকাণ্ড ; মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই

আপলোড টাইম : ১০:০৫:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মধ্যপ্রাচ্যে দানব হয়ে উঠেছে ইসরাইল। যুদ্ধ আর যুদ্ধই যেন তাদের কাজ। গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর পাশাপাশি এবার লেবাননে হামলা শুরু করেছে অবৈধ ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটি। তাদের থামানোর যেন কেউ নেই। ইসরাইলের বেপরোয়া আচরণ মধ্যপ্রাচ্যকে সারাক্ষণ অস্থিতিশীল করে রাখছে। গত শুক্রবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহর প্রধান ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। তার সাথে হিজবুল্লাহর সাউদার্ন ফ্রন্ট কমান্ডারসহ আরো ১১ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে ইরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়ার হত্যার জন্যও ইসরাইলকে দায়ী করা হয়। জানা গেছে, শুক্রবার বৈরুতে ইসরাইলি বিমান থেকে যে বোমা ফেলা হয় সেগুলোর একেকটির ওজন ছিল এক টন। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ১৪০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরাইল। বৈরুতে এই হামলা ছিল ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ। ইসরাইলি বিমানবাহিনীর প্রকাশিত তথ্য বলছে, তারা ৮৫ টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। প্রতিটি বোমাই ছিল এক টন ওজনের। এসব বোমা হামলার ফলে বৈরুতে ভূমিকম্পের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইসরাইলের বিমান হামলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লেবানন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ সিরিয়ায় চলে গেছে। আর সীমান্তে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর লড়াইয়ের কারণে গত আটই অক্টোবর থেকে প্রায় সত্তর হাজার মানুষ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরাইলের হাতে হিজবুল্লাহর নেতাদের হত্যার পেছনে অন্যতম কারণ গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধা হামাসের প্রতি হিজবুল্লাহর সমর্থন। হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকে ‘ন্যায়বিচারমূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার এই আপত্তিকর মন্তব্য ইহুদিবাদী ইসরাইলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উসকানি হিসাবে কাজ করবে। জো বাইডেন ও তার দেশ ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাসহ ইসরাইলের সব অপকর্মে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হাসান নাসরুল্লাহর হত্যার পর ইসরাইলকে মোকাবেলার জন্য বিশ্বের সব মুসলমানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খামেনি বলেছেন, ইহুদিবাদীদের জানা উচিত, লেবাননে হিজবুল্লাহর মজবুত ভিত্তির বড় কোনো ক্ষতি করার যোগ্যতা তাদের নেই। এই অঞ্চলের সব প্রতিরোধী শক্তি হিজবুল্লাহর পাশে আছে এবং সমর্থন করবে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, আমরা আমাদের আন্তরিক সমবেদনা, সহানুভূতি ও সংহতি জানাচ্ছি ভ্রাতৃপ্রতিম লেবাননের জনগণ এবং হিজবুল্লাহর ভাইদের ও লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধের প্রতি। হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে ইরান হিজবুল্লাহ ও ওই অঞ্চলটিতে সক্রিয় অন্য ইসরাইলবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর (ইরানের সহায়তাপুষ্ট) সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। ইসরাইল-লেবাননের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের অন্য মিত্র দেশগুলো। কিন্তু তার কোনো তোয়াক্কা করছে না ইসরাইল। ইসরাইল তাদের ইনন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়। আর সেটা করতে গিয়ে তারা তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নানা সঙ্ঘাতে জড়াচ্ছে। আমরা মধ্যপ্রাচ্যে আর কোনো রক্তপাত নয়, শান্তি চাই।