হাসিনার শেষ তিন বছরে ধ্বংসের প্রান্তে বিদ্যুৎ খাত!
- আপলোড টাইম : ০৩:৩৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে
চাহিদা বিবেচনা না করে গত কয়েক বছর একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে গত জুন শেষে দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ সক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে ২৭ হাজার মেগাওয়াট। যদিও উৎপাদন করা হয় ১৩ থেকে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটে চাহিদার পুরোটা পূরণ করাও সম্ভব হয়নি হাসিনার শেষ দুই বছরে। এরপরও বসে থাকা সক্ষমতার বোঝা টানতে গিয়ে অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়।
ঘনঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে বাড়তি ব্যয় মেটানো যায়নি। এতে লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। ভর্তুকির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে হাসিনার ক্ষমতার শেষ তিন অর্থবছরেই (২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪) পিডিবি লোকসান গুনেছে এক লাখ ৩১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা। আর সে ঘাটতি পূরণে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। অথচ আগের ১৩ বছরে পিডিবি লোকসান গুনেছে ৭৭ হাজার কোটি টাকা। আর সে সময় ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ৬২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। এ থেকেই বোঝা যায় বিদ্যুৎ খাতের শেষ তিন বছরের চিত্র।
পিডিবির হিসাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছর পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে (প্রাক্কলিত) ৪৭ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এ সময় পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এটি ছিল পিডিবির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লোকসান ও ভর্তুকি। এর আগের অর্থবছর (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ খাতে লোকসান ও ভর্তুকির সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়। ওই অর্থবছর পিডিবি লোকসান করেছিল ৫১ হাজার ৩০০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছর পিডিবি লোকসান গুনেছিল ৩২ হাজার ৮৯১ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সে অর্থবছর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ২৯ হাজার ৬৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এটি পিডিবির ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ লোকসান ও ভর্তুকির পরিমাণ। মূলত হাসিনার ক্ষমতার শেষ তিন অর্থবছরে দেশে বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসতে শুরু করে। আদানির কারণে ভারত থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি গত তিন অর্থবছরে ডলারের বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ১১৮ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে ৩৯ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২১ সালের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ও কয়লার দাম বাড়তে শুরু করে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। গত বছর মাঝামাঝি সময়ে এসে তা আবার কিছুটা নিম্নমুখী হলেও নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা বেড়েছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। ফলে পাঁচ বছর আগেও যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় ছিল ছয় টাকার কম, তা বর্তমানে বেড়ে ১১ টাকায় ঠেকেছে। আর লোকসানের চাপ সামাল দিতে গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১৪ মাসে চার দফা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারি বিদ্যুতের দামও বেড়েছে দুই দফা।
পিডিবির তথ্যমতে, তিন অর্থবছর আগেও বিদ্যুৎ খাতের এ ধরনের চিত্র ছিল না। ২০২০-২১ অর্থবছর পিডিবির লোকসান হয়েছিল ১১ হাজার ৬৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সে অর্থবছর সংস্থাটিকে ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল ১১ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল আরও অনেক কম। ওই (২০২০-২১) অর্থবছর পিডিবির লোকসান হয়েছিল সাত হাজার ৪৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর ভর্তুকি দেয়া হয়েছিল সাত হাজার ৪৩৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এদিকে ২০০৮-০৯ অর্থবছর পিডিবি লোকসান গুনেছিল মাত্র ৮২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। পরের (২০০৯-১০) অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে ২০১০-১১ অর্থবছর লোকসান এক লাফে সাতগুণের বেশি বেড়ে হয় চার হাজার ৬২০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছর তা আরও ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয় ছয় হাজার ৬৯৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। তবে ২০১২-১৩ অর্থবছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
পরের দুই অর্থবছর পিডিবির লোকসান আবারও বাড়ে। এর মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছর লোকসান ৩৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ছয় হাজার ৮০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছর প্রায় সাত শতাংশ বেড়ে হয় সাত হাজার ২৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পিডিবির লোকসান প্রায় ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮৭৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর পিডিবির লোকসান আবারও বাড়ে। ওই অর্থবছর লোকসান দাঁড়ায় চার হাজার ৪৩৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছর পিডিবির লোকসান অনেকখানি বাড়ে। ওই অর্থবছর ১১০ শতাংশ বেড়ে সংস্থাটির লোকসান দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। তবে পরের দুই অর্থবছর তা আবার কমে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর লোকসান হয় আট হাজার ১৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর তা আরও কমেছিল। সংস্থাটির লোকসান প্রথম ১০ হাজার কোটি ছাড়ায় ২০২০-২১ অর্থবছর। যদিও পরের দুই অর্থবছরে তা ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।