সংস্কারের মধ্যদিয়ে ১৮ মাসের মধ্যেই নির্বাচন
- আপলোড টাইম : ১০:১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। আগামী ১৮ মাসের মধ্যে যাতে নির্বাচন হতে পারে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে এই সরকারকে সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন। তার সাক্ষাৎকারটি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে রয়টার্স। সোমবার রাজধানীর ঢাকা সেনানিবাসে নিজ কার্যালয়ে রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ‘আমি তার (ড. ইউনূস) পাশে থাকব। যা-ই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।’
শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে ২৩ জুন সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটা উচিত। তবে সে জন্য তিনি ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে, এই সময়সীমার মধ্যেই আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।’ রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্ট মাসে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে তিনি প্রতি সপ্তাহে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অস্থির সময়ের পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি এমন কিছু করব না, যা আমার বাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে সংগতি রেখে সেনাবাহিনীও তার সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যে কিছু সেনাসদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো কর্মরত সেনাসদস্য দোষী সাব্যস্ত হন, আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, কিছু সামরিক কর্মকর্তা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলোতে কাজ করার সময় নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে রাখতে চান। এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, এটা কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এই মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেনাপ্রধান যে ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা করতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে সামরিক বাহিনীকে কখনোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা উচিত নয়। একজন সৈনিকের রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া উচিত নয়।’ রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্ম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালে সামরিক বাহিনী আবার অভ্যুত্থান ঘটায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন জানায়। এই সরকার দুই বছর দেশ চালায়। পরে হাসিনা ক্ষমতায় আসেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে গত জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। একপর্যায়ে তা সরকারবিরোধী অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই আন্দোলনে ১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়। আন্দোলনের কেন্দ্রে থাকা ঢাকার সড়কগুলোতে শান্তি ফিরেছে। কিন্তু হাসিনা সরকারের নাটকীয় পতনের পর প্রশাসনের কিছু অংশ এখনো সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার সদস্যের পুলিশ বাহিনী এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে এগিয়ে এসেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত আগস্ট মাসে অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিল।