ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি ; সার সঙ্কটের সুরাহা করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৩৬:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় দেশের সারকারখানাগুলো একে একে বন্ধ হচ্ছে। সবশেষে গত সপ্তাহের শেষ দিকে বন্ধ হয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের হজরত শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে আগামী বোরো মৌসুমে ইউরিয়ার সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এতে দেশে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের। পতিত স্বৈরাচারের সময় দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি; বরং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হয়েছে চড়া দামে। ফলে গ্যাসভিত্তিক সব কল-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এমনকি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের মধ্যে সারকারখানা ছাড়াও আছে তৈরি পোশাকসহ নানা ধরনের কারখানা। দেশের মোট পাঁচটি সারকারাখানায় উৎপাদন বন্ধের কারণে দৈনিক প্রায় সাত লাখ টন ইউরিয়ার ঘাটতি পড়ছে। ইউরিয়ায় স্বনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে দেশ হয়ে পড়েছে আমদানিনির্ভর। কিন্তু স্বৈরাচারের নির্বিচার লুটপাট ও পাচারের কারণে এখন দেশের রিজার্ভ শূন্যপ্রায়। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে না পারায় সার সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সারের যে মজুদ রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা ও সচিব উভয়েই একই তথ্য জানিয়েছেন। বর্তমানে চার লাখ ৩৫ হাজার টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। এ দিয়ে চলমান আমন, আউশসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ তোলা যাবে। চিন্তার কারণ, এর পরের বোরো মৌসুম নিয়ে। দেশে বোরোই এখন বছরের সবচেয়ে বড় ধানের মৌসুম। এ মৌসুমে সারের চাহিদাও থাকে বেশি। কৃষি সচিব বলেছেন, আগামী মৌসুমে বোরো উৎপাদনে কোনো সমস্যা না হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না। তাই এখন আমাদের টার্গেট, আগামী বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদন করা। কিন্তু বোরো মৌসুম সামনে রেখে ইউরিয়ার বাড়তি চাহিদা মোকাবেলায় কী ব্যবস্থা করা হয়েছে সে বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কৃষিবিদ ও কৃষিসংশ্লিষ্ট অন্যরা বলছেন, চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার আমদানি করা দরকার। স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হওয়া অর্থনীতির এই নাজুক সময়ে সরকারকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা নিতে হবে যথাসময়েই, যাতে কোথাও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে কৃষি বা শিল্প খাতে উৎপাদন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করা যায়, তারা স্বৈরাচারী সরকারের মতো নিজের আখের গোছানোর মতলবে কাজ করবেন না। ব্যক্তিস্বার্থে দেশ ও জনগণের স্বার্থহানি ঘটাবেন না। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে অথবা পাচার করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে এখন জানা যাচ্ছে। সেই পাচারের ঢল বন্ধ হলে সারের মতো অত্যাবশ্যক পণ্য আমদানিতে টাকার ঘাটতি থাকবে না এমন আশা করাই যায়। অত্যাবশ্যক নয় এমন পণ্য আমদানি বন্ধ রেখে হলেও সার আমদানি করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি ; সার সঙ্কটের সুরাহা করুন

আপলোড টাইম : ১২:৩৬:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় দেশের সারকারখানাগুলো একে একে বন্ধ হচ্ছে। সবশেষে গত সপ্তাহের শেষ দিকে বন্ধ হয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের হজরত শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে আগামী বোরো মৌসুমে ইউরিয়ার সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। এতে দেশে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের। পতিত স্বৈরাচারের সময় দেশে গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি; বরং ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থে বিদেশ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হয়েছে চড়া দামে। ফলে গ্যাসভিত্তিক সব কল-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এমনকি অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের মধ্যে সারকারখানা ছাড়াও আছে তৈরি পোশাকসহ নানা ধরনের কারখানা। দেশের মোট পাঁচটি সারকারাখানায় উৎপাদন বন্ধের কারণে দৈনিক প্রায় সাত লাখ টন ইউরিয়ার ঘাটতি পড়ছে। ইউরিয়ায় স্বনির্ভর হওয়ার পরিবর্তে দেশ হয়ে পড়েছে আমদানিনির্ভর। কিন্তু স্বৈরাচারের নির্বিচার লুটপাট ও পাচারের কারণে এখন দেশের রিজার্ভ শূন্যপ্রায়। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে না পারায় সার সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কৃষিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সারের যে মজুদ রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা ও সচিব উভয়েই একই তথ্য জানিয়েছেন। বর্তমানে চার লাখ ৩৫ হাজার টন ইউরিয়া সার মজুদ রয়েছে। এ দিয়ে চলমান আমন, আউশসহ অন্যান্য ফসলের আবাদ তোলা যাবে। চিন্তার কারণ, এর পরের বোরো মৌসুম নিয়ে। দেশে বোরোই এখন বছরের সবচেয়ে বড় ধানের মৌসুম। এ মৌসুমে সারের চাহিদাও থাকে বেশি। কৃষি সচিব বলেছেন, আগামী মৌসুমে বোরো উৎপাদনে কোনো সমস্যা না হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না। তাই এখন আমাদের টার্গেট, আগামী বোরো মৌসুমে ভালো উৎপাদন করা। কিন্তু বোরো মৌসুম সামনে রেখে ইউরিয়ার বাড়তি চাহিদা মোকাবেলায় কী ব্যবস্থা করা হয়েছে সে বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কৃষিবিদ ও কৃষিসংশ্লিষ্ট অন্যরা বলছেন, চাহিদা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সার আমদানি করা দরকার। স্বৈরাচারের হাতে ধ্বংস হওয়া অর্থনীতির এই নাজুক সময়ে সরকারকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং তা নিতে হবে যথাসময়েই, যাতে কোথাও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে কৃষি বা শিল্প খাতে উৎপাদন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। অন্তর্র্বতী সরকারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আশা করা যায়, তারা স্বৈরাচারী সরকারের মতো নিজের আখের গোছানোর মতলবে কাজ করবেন না। ব্যক্তিস্বার্থে দেশ ও জনগণের স্বার্থহানি ঘটাবেন না। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের সুবিধাভোগী গোষ্ঠী গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ১৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে অথবা পাচার করার সুযোগ করে দিয়েছে বলে এখন জানা যাচ্ছে। সেই পাচারের ঢল বন্ধ হলে সারের মতো অত্যাবশ্যক পণ্য আমদানিতে টাকার ঘাটতি থাকবে না এমন আশা করাই যায়। অত্যাবশ্যক নয় এমন পণ্য আমদানি বন্ধ রেখে হলেও সার আমদানি করতে হবে।