ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বতী সরকার কি খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে? দু’টি কারণে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি হলো- সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হওয়া। এতে বিপুল শস্য বিনষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয় যে কারণটি তা হলো- রবি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহে অনিশ্চয়তা। একের পর এক সারকারখানা বন্ধ, ডলার সঙ্কটে সার আমদানি করার জন্য এলসি খুলতে না পারায় সামনের রবি মৌসুমে দেশে সারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে আগের বছরের চেয়ে এবার খাদ্য উৎপাদন কম হতে পারে। তাই আশঙ্কা, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। এ নিয়ে কৃষি সচিব ড. মো: এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেছেন, ‘আগামী মৌসুমে বোরো উৎপাদনে কোনো সমস্যা না হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) চলতি মাসের গ্লোবাল অ্যাগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) ‘গ্রেইন অ্যান্ড আপডেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্যায় বাংলাদেশের ২৪টি জেলার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির আউশ ও আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে চাল উৎপাদনে। এবার আউশ মৌসুমে তিন লাখ টন এবং আমন মৌসুমে চার লাখ টন চালের উৎপাদন কম হতে পারে। এতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করা লাগতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগ বলছে, গত অর্থবছরে এক কোটি ৪৬ লাখ টন আমন চাল উৎপাদন হলেও চলতি অর্থবছরে এক কোটি ৪২ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। এ ছাড়া আউশের উৎপাদন ২৪ লাখ টন থেকে ২১ লাখ টনে নামতে পারে। সব মিলিয়ে এ দুই মৌসুমে চালের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এমনিতে চলমান বন্যায় এবার আউশ ও আমন মিলে প্রায় সাত-আট লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। এ ঘাটতি মেটাতে আগামী বোরো মৌসুমকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল; কিন্তু এলসি সমস্যার সমাধান না হওয়া এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে হুমকি দেখা দিয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোরো মৌসুমের আবাদের ওপর জোর দেয়ার বিকল্প নেই। দেশে সারের যে মজুদ রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এ সার দিয়ে চলমান আমন, আউশসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশের সবচেয়ে বড় রবি মৌসুমে সারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ওই সময় সারের চাহিদা বেশি থাকায় তা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া আমদানি করতে হবে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতিতে ডলার সঙ্কটে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। এতে কয়েক মাস ধরে বন্ধ আছে সার আমদানি। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের হজরত শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম। এ অবস্থায় আগামী বোরো ও সরিষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের।
এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না, অন্তর্বতী সরকারের সামনে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যদি সময়মতো সার আমদানি করা না যায়, দেশে উৎপাদন বাড়ানো না যায়, তাহলে কৃষি উৎপাদনে বড় সমস্যা হবে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। আমরা মনে করি, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বোরো আবাদের সময় কৃষককে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যশস্য আমদানির প্রস্তুতি নিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ; সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিন

আপলোড টাইম : ০২:৪২:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বতী সরকার কি খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে পড়তে যাচ্ছে? দু’টি কারণে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একটি হলো- সম্প্রতি পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হওয়া। এতে বিপুল শস্য বিনষ্ট হয়েছে। দ্বিতীয় যে কারণটি তা হলো- রবি মৌসুমে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহে অনিশ্চয়তা। একের পর এক সারকারখানা বন্ধ, ডলার সঙ্কটে সার আমদানি করার জন্য এলসি খুলতে না পারায় সামনের রবি মৌসুমে দেশে সারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে আগের বছরের চেয়ে এবার খাদ্য উৎপাদন কম হতে পারে। তাই আশঙ্কা, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। এ নিয়ে কৃষি সচিব ড. মো: এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেছেন, ‘আগামী মৌসুমে বোরো উৎপাদনে কোনো সমস্যা না হলে খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কোনো সঙ্কট হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষিসেবা বিভাগের ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) চলতি মাসের গ্লোবাল অ্যাগ্রিকালচারাল ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (গেইন) ‘গ্রেইন অ্যান্ড আপডেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার বন্যায় বাংলাদেশের ২৪টি জেলার প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমির আউশ ও আমন আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে চাল উৎপাদনে। এবার আউশ মৌসুমে তিন লাখ টন এবং আমন মৌসুমে চার লাখ টন চালের উৎপাদন কম হতে পারে। এতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় পাঁচ লাখ টন চাল আমদানি করা লাগতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগ বলছে, গত অর্থবছরে এক কোটি ৪৬ লাখ টন আমন চাল উৎপাদন হলেও চলতি অর্থবছরে এক কোটি ৪২ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। এ ছাড়া আউশের উৎপাদন ২৪ লাখ টন থেকে ২১ লাখ টনে নামতে পারে। সব মিলিয়ে এ দুই মৌসুমে চালের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
এমনিতে চলমান বন্যায় এবার আউশ ও আমন মিলে প্রায় সাত-আট লাখ টন চাল উৎপাদন কম হবে। এ ঘাটতি মেটাতে আগামী বোরো মৌসুমকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল; কিন্তু এলসি সমস্যার সমাধান না হওয়া এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ায় দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে হুমকি দেখা দিয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোরো মৌসুমের আবাদের ওপর জোর দেয়ার বিকল্প নেই। দেশে সারের যে মজুদ রয়েছে তা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এ সার দিয়ে চলমান আমন, আউশসহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। কিন্তু ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দেশের সবচেয়ে বড় রবি মৌসুমে সারের সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ওই সময় সারের চাহিদা বেশি থাকায় তা মেটাতে জরুরি ভিত্তিতে ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া আমদানি করতে হবে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতিতে ডলার সঙ্কটে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। এতে কয়েক মাস ধরে বন্ধ আছে সার আমদানি। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের হজরত শাহজালাল সারকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম। এ অবস্থায় আগামী বোরো ও সরিষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে খাতসংশ্লিষ্টদের।
এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না, অন্তর্বতী সরকারের সামনে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ প্রসঙ্গে কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, যদি সময়মতো সার আমদানি করা না যায়, দেশে উৎপাদন বাড়ানো না যায়, তাহলে কৃষি উৎপাদনে বড় সমস্যা হবে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। আমরা মনে করি, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বোরো আবাদের সময় কৃষককে প্রয়োজনীয় সার সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যশস্য আমদানির প্রস্তুতি নিতে হবে।