আবারও লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা
- আপলোড টাইম : ০৩:৩০:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ১৩ বার পড়া হয়েছে
সারাদেশে ফের বেড়েছে লোডশেডিংয়ের তীব্রতা দিনে অন্তত কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে শহরের বিভিন্ন এলাকা। গ্রামের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যনুযায়ী গত কয়েক দিন ধরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। মূলত জ্বালানি সংকটে উৎপাদন ঘাটতি এই লোডশেডিংয়ের অন্যতম কারণ বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া কমেছে আদানির বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ। বিশেষ করে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া ও সামিটের এলএনজি সরবরাহ হ্রাসে পরিস্থিতিতে অবনতি হয়েছে। তবে সংকট সমাধানে দুই সংস্থার সঙ্গেই আলোচনা চলছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যানুযায়ী গত রোববার সারাদেশে প্রায় ১৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। যা পিক আওয়ারে অর্থাৎ সন্ধ্যায় আরও বেড়ে যায়। সে হিসেবে গত কয়েক দিন ধরে দিনে ও রাতে গড়ে প্রায় ১৫০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। আর এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বিপিডিবির ডাটা বলছে, দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট, এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের আশপাশে। ফলে প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে ঢাকা অঞ্চলে। রোববার ঢাকায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ৩২১ মেগাওয়াট, রাজশাহী ২৫০ মেগাওয়াট, কুমিলস্না ১৫০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহ ২৬০ মেগাওয়াট, সিলেট ১১৫ মেগাওয়াট, রংপুর ১৯৫ মেগাওয়াট।
উৎপাদন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উপাদন করা যাচ্ছে না। আগে দিনে যেখানে ৬০০০ মেগাওয়াটের বেশি গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তা এখন কমে ৪৫০০ মেগাওয়াটে নেমে এসেছে। অন্যদিকে আদানির ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও বিগত কয়েক দিন ধরে এর সরবরাহ কমে ১ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে। ফলে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। পরিস্থিতি কবে উন্নতি হবে জানতে চাইলে বিপিডিবি’র উৎপাদন বিভাগের প্রধান ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘বিপিডিবি আদানি ও সামিট দুই সংস্থার সঙ্গেই কথা হচ্ছে। সামিট বার বার আপডেট দিচ্ছে কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়াচ্ছে না। মূলত সামিটের একটি টার্মিনাল মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়েছিল। মেরামত শেষে চট্টগ্রামে এলেও তা এখনো ইনস্টল করা হয়নি। গত কিছুদিন ধরেই আজ-কালের মধ্যেই ইনস্টল করা বললেও তা এখনো হয়নি। নানা অজুহাতে তা পেছানো হচ্ছে। কখনো বলছে সমুদ্র উত্তাল, কখনো বলছে টেকনিক্যাল ত্রম্নটি।
বিপিডিবির তথ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই মাত্র একটি টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করছে সামিট। দিনে যেখানে ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেত বিদ্যুৎ বিভাগ এখন তা কমে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমেছে। অন্যদিকে আদানির শতভাগ বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। তবে তাদের বিদ্যুৎ বাবদ বকেয়ার পরিশোধের চাপ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে দ্রম্নত এ বিষয়ে একটা সমাধান আসবে। আর যদি তা না করা যায় তাহলে বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হতে পারে। ইতোমধ্যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বকেয়া অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে বাংলাদেশের নতুন অর্ন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কঠোর বার্তা দিয়েছে ভারতের আদানি গ্রম্নপ। বিদ্যুৎ বিক্রির পাওনা বেড়ে চলার প্রেক্ষাপটে কোটিপতি গৌতম আদানির এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে বলে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের ওই প্রতিবেদনের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, ভারতের ঝাড়খন্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের গড্ডা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ আদানির কাছে বাংলাদেশের বকেয়া ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার হয়েছে। এ পরিস্থিতিকে আদানি গোষ্ঠী ‘টেকসই নয়’ বলে বর্ণনা করেছে।
বিদ্যুৎ কেনা বাবদ এই বকেয়া মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে ইকোনমিক টাইমস মনে করছে। গত মাসে শেখ হাসিনার সরকারকে হটিয়ে অর্ন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়। আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনাসহ শেখ হাসিনার আমলে করা বিভিন্ন ব্যয়বহুল অবকাঠামো চুক্তির সমালোচনা করেছে নতুন সরকার। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে আদানি পাওয়ার বলেছে যে আর্থিক চাপ সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশে বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য সরবরাহ বজায় রাখতে প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ। কোম্পানিটি বলেছে, ‘আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং তাদের জানিয়েছি যে পরিস্থিতি আর টেকসই পর্যায়ে নেই। কারণ আমরা একদিকে যেমন বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে প্রতিশ্রম্নতি বজায় রাখছি, অন্যদিকে তেমনই আমাদের ঋণদাতা ও সরবরাহকারীদের কাছে দেওয়া অঙ্গীকারও রয়েছে।’
অর্থ পরিশোধের এই দায় বাংলাদেশের সার্বিক জ্বালানি সংকটেরই একটি অংশ। বাংলাদেশের বিদ্যুৎসংক্রান্ত দায়ের পরিমাণ ৩৭০ কোটি ডলারে উঠেছে। জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আদানি বাংলাদেশের কাছে ৮০ কোটি ডলার পায়, তার মধ্যে ৪৯ কোটি ২০ লাখ ডলার পরিশোধ বিলম্বিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার এখন বিশ্বব্যাংকসহ অন্য আন্তর্জাতিক ঋণদাতার কাছে অর্থ সাহায্য চাইছে। এর উদ্দেশ্য হলো অর্থনীতি স্থিতিশীল করা।
বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দ্রম্নত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু একই সময় জ্বালানি স্বল্পতায়ও ভুগছে। মূলত গ্যাসের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সাবেক সরকারের নেওয়া খোলা দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ কেনার মতো পদক্ষেপ দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ও অদক্ষতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।