ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের এক মাস পূর্তি ও শহীদদের স্মরণ

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ‘শহীদি মার্চ’ পালন

আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর নির্দেশদাতাদের কঠোর শাস্তির দাবি

সমীকরণ প্রতিদেবক:
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় জুলাই ও আগস্ট মাসে নিহতদের স্মরণে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ‘শহীদি মার্চ’ নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চুয়াডাঙ্গায় শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে এই শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে বের হয়ে শহীদি মার্চ শহরের কোর্ট মোড় প্রদক্ষিণ করে বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশটা ভালোভাবে গড়তে হবে। কোনো জায়গায় অনিয়ম-দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। জনগণের আস্থার জায়গা গড়তে হবে। ছাত্র সমাজের প্রতি মানুষের আসা-আকাক্সক্ষার পরিবর্তে নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

এসময় বক্তারা যে সকল সাধারণ শিক্ষার্থী মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর বিচারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ওই সব দপ্তর দুর্নীতি সংস্কার করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা কৃষকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশাসনকে তাদের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হলে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। এসময় শহীদি মার্চ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থী শাওন, রিমন, সাকিব, আব্দুল্লাহ আল কাফি, সজিব, রনি, তামান্না, মাসুম বিল্লাহ, ঝুমুর বিশ্বাস, সুমাইয়া প্রমুখ।
অপরদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় শহীদদের স্মরণে ছাত্র-জনতার শহীদি মার্চ পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা স্তম্ভ ৭১-চারতলার মোড় প্রদক্ষিণ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যকারী ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবিও জানানো হয়। শহীদি মার্চ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান।

এদিকে, শহীদি মার্চে পালনে দর্শনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বিকেল চারটায় দর্শনার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের উদ্যোগে দর্শনা শহীদ শাহারিয়ার শুভ মঞ্চে এর আয়োজন করা হয়। আলোচনার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বাইজিদ। সোহান ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন তন্ময় তৌহিদ।

দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন দর্শনা পৌরসভার ইমাম সমিতির সভাপতি ও কেরু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইাসলাম। সভা পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপ্ললবী নাঈম সৌরভ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহযোগিতা করে সিগনেচার ও সুর সাথী।

অন্যদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জীবননগর শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শহীদি মার্চ’ বের করে। মার্চটি উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূর্বের স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এবং আহতদের চিকিৎসার দাবি জানান। শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে জীবননগর ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান বলেন, স্বৈরাচার সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পাখির মতো গুলি বর্ষণ করেছে। এসময় অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আন্দোলনে অনেক শহীদের লাশ গুম করা হয়েছে, কিন্তু এখনো তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান দিতে হবে। তা না হলে সেই সব নিহত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে বলতে হবে তাদের কবর কোথায় দেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের কবরের পাশে গিয়ে দোয়া-মোনাজাত করতে চাই। যদি তাদের সন্ধান না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আবারো আন্দোলনে নামবে। এসময় সাখাওয়াত, আব্দুল্লাহ, যুথি, সাকিব, তাহসানসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল পৃথকভাবে আন্দুলবাড়ীয়া কলেজে, আন্দুলবাড়ীয়া আশরফিয়া আলিম মাদ্রাসা, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে।

এছাড়া গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ফুটবল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইফফাত আরা হ্যাপী। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আন্দুলবাড়ীয়া কলেজের অধ্যক্ষ এস এম এনায়েতুল হক, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন, আন্দুলবাড়ীয়া আশরফিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা সাইফুজ্জামান প্রমুখ।

অপরদিকে, শহীদদের স্মরণে শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে মেহেরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ উপলক্ষে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শহরের শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ইমতিয়াজ, তানজিমুল, সিহাব, শীতলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। আন্দোলনে ছাত্রদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এছাড়া আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।
এদিকে, সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরের গাংনীতেও শহিদদের স্মরণে মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে গাংনী উপজেলা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে শেষ হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন মুজাহিদ, মোস্তাক আজম সোহাগ, সাদ্দাম হোসেন জীবন, জাইমুল হাসান, সাইমুন ইসলাম, শীতুল আহম্মেদ প্রমুখ। আন্দোলনে ছাত্রদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এছাড়া আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।

অন্যদিকে, ঝিনাইদহে শেখ হাসিনা সরকার পতনের একমাস পূর্ণ হওয়ায় ও জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠ থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শারমিন আক্তার, আবু হুরায়রাসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি চালিয়ে গণহত্যার নির্দেশদাতাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারে যারা বাধাগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পরে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার পতনের এক মাস পূর্তি ও শহীদদের স্মরণ

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ‘শহীদি মার্চ’ পালন

আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর নির্দেশদাতাদের কঠোর শাস্তির দাবি

আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় জুলাই ও আগস্ট মাসে নিহতদের স্মরণে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক মাস পূর্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি শুরু হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ‘শহীদি মার্চ’ নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চুয়াডাঙ্গায় শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় গণঅভ্যুত্থানের এক মাস পূর্ণ হওয়ায় শহীদদের স্মরণে এই শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের মূল ফটকের সামনে থেকে বের হয়ে শহীদি মার্চ শহরের কোর্ট মোড় প্রদক্ষিণ করে বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশটা ভালোভাবে গড়তে হবে। কোনো জায়গায় অনিয়ম-দুর্নীতি দেখলে রুখে দাঁড়াতে হবে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে হবে। জনগণের আস্থার জায়গা গড়তে হবে। ছাত্র সমাজের প্রতি মানুষের আসা-আকাক্সক্ষার পরিবর্তে নিজ নিজ জায়গা থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান শিক্ষার্থীরা।

এসময় বক্তারা যে সকল সাধারণ শিক্ষার্থী মারা গেছেন, তাদের মৃত্যুর বিচারের দাবি জানান। বক্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, ওই সব দপ্তর দুর্নীতি সংস্কার করতে হবে। চুয়াডাঙ্গা কৃষকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রশাসনকে তাদের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হলে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। এসময় শহীদি মার্চ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থী শাওন, রিমন, সাকিব, আব্দুল্লাহ আল কাফি, সজিব, রনি, তামান্না, মাসুম বিল্লাহ, ঝুমুর বিশ্বাস, সুমাইয়া প্রমুখ।
অপরদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলায় শহীদদের স্মরণে ছাত্র-জনতার শহীদি মার্চ পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা স্তম্ভ ৭১-চারতলার মোড় প্রদক্ষিণ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যকারী ও তার দোসরদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবিও জানানো হয়। শহীদি মার্চ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানান।

এদিকে, শহীদি মার্চে পালনে দর্শনায় আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের এক মাস পূর্তি উপলক্ষে গতকাল বিকেল চারটায় দর্শনার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের উদ্যোগে দর্শনা শহীদ শাহারিয়ার শুভ মঞ্চে এর আয়োজন করা হয়। আলোচনার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন বাইজিদ। সোহান ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন তন্ময় তৌহিদ।

দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন দর্শনা পৌরসভার ইমাম সমিতির সভাপতি ও কেরু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইাসলাম। সভা পরিচালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপ্ললবী নাঈম সৌরভ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় সহযোগিতা করে সিগনেচার ও সুর সাথী।

অন্যদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জীবননগর শহরের মুক্তমঞ্চ থেকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শহীদি মার্চ’ বের করে। মার্চটি উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূর্বের স্থানে গিয়ে শেষ হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান এবং আহতদের চিকিৎসার দাবি জানান। শহীদি মার্চ কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে জীবননগর ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান বলেন, স্বৈরাচার সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পাখির মতো গুলি বর্ষণ করেছে। এসময় অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আন্দোলনে অনেক শহীদের লাশ গুম করা হয়েছে, কিন্তু এখনো তাদের বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান দিতে হবে। তা না হলে সেই সব নিহত শিক্ষার্থীদের বাবা-মাকে বলতে হবে তাদের কবর কোথায় দেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীরা তাদের কবরের পাশে গিয়ে দোয়া-মোনাজাত করতে চাই। যদি তাদের সন্ধান না দেওয়া হয়, তাহলে আমরা আবারো আন্দোলনে নামবে। এসময় সাখাওয়াত, আব্দুল্লাহ, যুথি, সাকিব, তাহসানসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। গতকাল পৃথকভাবে আন্দুলবাড়ীয়া কলেজে, আন্দুলবাড়ীয়া আশরফিয়া আলিম মাদ্রাসা, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচি পালন করে।

এছাড়া গতকাল বেলা সাড়ে ৩টায় আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ফুটবল মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইফফাত আরা হ্যাপী। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আন্দুলবাড়ীয়া কলেজের অধ্যক্ষ এস এম এনায়েতুল হক, আন্দুলবাড়ীয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী হোসেন, আন্দুলবাড়ীয়া আশরফিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হযরত মাওলানা সাইফুজ্জামান প্রমুখ।

অপরদিকে, শহীদদের স্মরণে শহীদি মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে মেহেরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ উপলক্ষে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শহরের শহীদ ড. সামসুজ্জোহা পার্ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ইমতিয়াজ, তানজিমুল, সিহাব, শীতলসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। আন্দোলনে ছাত্রদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এছাড়া আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।
এদিকে, সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরের গাংনীতেও শহিদদের স্মরণে মার্চ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে গাংনী উপজেলা চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে শেষ হয়। এসময় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন মুজাহিদ, মোস্তাক আজম সোহাগ, সাদ্দাম হোসেন জীবন, জাইমুল হাসান, সাইমুন ইসলাম, শীতুল আহম্মেদ প্রমুখ। আন্দোলনে ছাত্রদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এছাড়া আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় বিক্ষোভ থেকে। দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের কঠোর অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয় কর্মসূচি থেকে।

অন্যদিকে, ঝিনাইদহে শেখ হাসিনা সরকার পতনের একমাস পূর্ণ হওয়ায় ও জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বিকেলে শহরের উজির আলী স্কুল মাঠ থেকে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শারমিন আক্তার, আবু হুরায়রাসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। বক্তারা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলি চালিয়ে গণহত্যার নির্দেশদাতাদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারে যারা বাধাগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। পরে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়।