ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় ধর্মান্তরিত দম্পতির নতুন জীবন

বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে দুই মেয়ে, আশ্রয় দিলেন প্রতিবেশী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০১:২০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে


চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা অরবিন্দু দাস (৬০) ও আরতি দাস (৫৫) দম্পতি এখন পরিচিতি পেয়েছেন আব্দুল্লাহ ও মরিয়ম নামে। মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তাদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে কৃষ্ণপুর জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মুফতি সাইদুর রহমানের নিকট থেকে তওবা পড়ে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার এ সিদ্ধান্ত তাদের নতুন জীবনের সূচনা করলেও পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে টানাপোড়েন।
জানা গেছে, অরবিন্দু ও আরতি, যারা এখন আব্দুল্লাহ ও মরিয়ম নামে পরিচিত। এই দম্পতি ইসলাম ধর্মের জীবনবিধানে আগ্রহী হওয়ায় ১৫ দিন পূর্বে ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকবছর ধরে আব্দুল্লাহ ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য স্ত্রীকে জানালেও রাজি না থাকায় তিনি ধর্মান্তরিত হননি। তার ইচ্ছা ছিল স্বামী—স্ত্রী একসঙ্গে ধর্মান্তরিত হওয়ার। অবশেষে ১৫ দিন পূর্বে আরতি দাসও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তারা তাদের সন্তান ও আত্মীয়—স্বজনদের বিষয়টি জানালে কেউ সম্মতি দেয়নি। পরিবার—পরিজন ত্যাগ করেই ধর্মান্তরিত হয়েছেন এই দম্পতি।
এদিকে, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এই দম্পতির জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন আলাদা বাড়িতে থাকছেন। পরিবার থেকেও হয়েছেন কিছুটা বিচ্ছিন্ন। তাদের দুই মেয়ে পুষ্পা দাস ও অর্চনা দাস এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন, যার ফলে পারিবারিক সম্পর্কও দুর্বল হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়ায় দুই মেয়ের জমিতে থাকা বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন তারা। স্বজনরা কেউ তাদের মেনে না নিলেও ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে আব্দুল্লাহ ও মরিয়মকে আশ্রয় দিয়েছেন প্রতিবেশী হুমায়ন ইসলাম। গ্রামবাসীও তাদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। নব্য মুসলিম এই দম্পতি এখন ইসলামের জীবন—বিধান মেনে চলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
আব্দুল্লাহ পেশায় ছাগলের ব্যাপারী ছিলেন। এখন তিনি একটি পাখিভ্যান ভাড়া চালান। তিনি বলেন, ইসলামের শান্তির পথে আসার পর আমার জীবন নতুন হয়েছে। আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে আমার জীবনের প্রতিটি কাজ করার চেষ্টা করছি।
মরিয়মও একই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা এখন শান্তি ও সুখে আছি, যা আগে অনুভব করিনি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি আমার বাবা—মা মেনে নিলেও দুই মেয়ে বিষয়টি মানতে পারছে না।
স্থানীয় ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাসেম মাহমুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দম্পতি ইসলাম ধর্মের বিধান ও এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে গিয়ে ধর্মান্তরিত হন। তারা বলেন, ইসলাম ধর্মের মূলনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় নিয়ম অনুসরণ করার বিষয়টি তাদের মন থেকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে।
হাসেম মাহমুদ বলেন, তারা ইমামের নিকট থেকে তাওবার পর কালেমা পাঠ করে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস এনেছেন। তারা নতুন নামও পেয়েছেন। তবে আইনিভাবে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের নাম পরিবর্তন হয়নি। রোববার তারা আইনিভাবে নাম ও ধর্ম পরিবর্তন করবেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গায় ধর্মান্তরিত দম্পতির নতুন জীবন

বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে দুই মেয়ে, আশ্রয় দিলেন প্রতিবেশী

আপলোড টাইম : ০১:২০:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪


চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা অরবিন্দু দাস (৬০) ও আরতি দাস (৫৫) দম্পতি এখন পরিচিতি পেয়েছেন আব্দুল্লাহ ও মরিয়ম নামে। মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে তাদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে কৃষ্ণপুর জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মুফতি সাইদুর রহমানের নিকট থেকে তওবা পড়ে তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার এ সিদ্ধান্ত তাদের নতুন জীবনের সূচনা করলেও পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে টানাপোড়েন।
জানা গেছে, অরবিন্দু ও আরতি, যারা এখন আব্দুল্লাহ ও মরিয়ম নামে পরিচিত। এই দম্পতি ইসলাম ধর্মের জীবনবিধানে আগ্রহী হওয়ায় ১৫ দিন পূর্বে ধর্মান্তরিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকবছর ধরে আব্দুল্লাহ ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য স্ত্রীকে জানালেও রাজি না থাকায় তিনি ধর্মান্তরিত হননি। তার ইচ্ছা ছিল স্বামী—স্ত্রী একসঙ্গে ধর্মান্তরিত হওয়ার। অবশেষে ১৫ দিন পূর্বে আরতি দাসও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। তারা তাদের সন্তান ও আত্মীয়—স্বজনদের বিষয়টি জানালে কেউ সম্মতি দেয়নি। পরিবার—পরিজন ত্যাগ করেই ধর্মান্তরিত হয়েছেন এই দম্পতি।
এদিকে, ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এই দম্পতির জীবনযাত্রায় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তারা এখন আলাদা বাড়িতে থাকছেন। পরিবার থেকেও হয়েছেন কিছুটা বিচ্ছিন্ন। তাদের দুই মেয়ে পুষ্পা দাস ও অর্চনা দাস এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন, যার ফলে পারিবারিক সম্পর্কও দুর্বল হয়েছে। ধর্মান্তরিত হওয়ায় দুই মেয়ের জমিতে থাকা বাড়ি থেকেও বিতাড়িত হয়েছেন তারা। স্বজনরা কেউ তাদের মেনে না নিলেও ধর্মান্তরিত হওয়ার পর থেকে আব্দুল্লাহ ও মরিয়মকে আশ্রয় দিয়েছেন প্রতিবেশী হুমায়ন ইসলাম। গ্রামবাসীও তাদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। নব্য মুসলিম এই দম্পতি এখন ইসলামের জীবন—বিধান মেনে চলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
আব্দুল্লাহ পেশায় ছাগলের ব্যাপারী ছিলেন। এখন তিনি একটি পাখিভ্যান ভাড়া চালান। তিনি বলেন, ইসলামের শান্তির পথে আসার পর আমার জীবন নতুন হয়েছে। আমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে আমার জীবনের প্রতিটি কাজ করার চেষ্টা করছি।
মরিয়মও একই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা এখন শান্তি ও সুখে আছি, যা আগে অনুভব করিনি। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়টি আমার বাবা—মা মেনে নিলেও দুই মেয়ে বিষয়টি মানতে পারছে না।
স্থানীয় ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হাসেম মাহমুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই দম্পতি ইসলাম ধর্মের বিধান ও এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে গিয়ে ধর্মান্তরিত হন। তারা বলেন, ইসলাম ধর্মের মূলনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় নিয়ম অনুসরণ করার বিষয়টি তাদের মন থেকে গভীরভাবে আকর্ষণ করে।
হাসেম মাহমুদ বলেন, তারা ইমামের নিকট থেকে তাওবার পর কালেমা পাঠ করে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস এনেছেন। তারা নতুন নামও পেয়েছেন। তবে আইনিভাবে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে তাদের নাম পরিবর্তন হয়নি। রোববার তারা আইনিভাবে নাম ও ধর্ম পরিবর্তন করবেন।