ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিধি নির্ধারণ; পথরেখা প্রণয়ন দরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৪১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের পর এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তার মেয়াদ এক মাসও হয়নি। এই সরকার ক্ষমতায়িত হওয়ার পর থেকে বিএনপি প্রায় শুরু থেকে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলে আসছে। যদিও পরে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে চায়। তবে কতটা সময় দিতে চায় তা স্পষ্ট করা হয়নি। যৌক্তিক সময় বলতে কতটা সময় তা-ও স্পষ্ট নয়।
একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান ঘটেছে দেশে। শিশু-কিশোর, যুবাসহ নানা শ্রেণীর হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন। সন্তান হারিয়েছেন হাজারো বাবা-মা। তাদের সান্ত্বনা দেয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। একই সাথে দেশের অন্তত ১২টি জেলায় দেখা দিয়েছে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা। অর্ধকোটি মানুষ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের উদ্ধার ও নিরাপত্তা দেয়ার চেয়ে বড় কোনো বিষয় নেই, যা নিয়ে এ সময়ে বিচলিত হওয়ার সুযোগ আছে। স্বৈরাচারের পতনের পর তার সহযোগী দলগুলোও এ মুহূর্তে নিষ্ক্রিয়। মাঠে আছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিগত সরকারের সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ মুহূর্তের জরুরি বিষয়- শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং বন্যার্তদের সাহায্যে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঠিক এই কাজটি করছেন বিরামহীনভাবে।
বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব বেশি। সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দলটি দিচ্ছে নিশ্চয়। প্রতি বিপ্লবের আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক করছে। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের সেটি মনে করিয়ে দিচ্ছে। সবই ঠিক আছে, তবে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যও সংস্কার দরকার। পতিত স্বৈরাচার দেশের প্রতিটি খাত ঠাণ্ডা মাথায় সমূলে ধ্বংস করেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, আইন কাঠামো সব এখন লেজেগোবরে অবস্থায়। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আবার সংস্কার করাও দুরূহ। এখন পর্যন্ত বিচার বিভাগে স্বৈরাচারের নিয়োগ পাওয়া চিহ্নিত বিচারকদেরও রদবদল সম্পন্ন হয়নি। প্রশাসনে পুরনো ফ্যাসিস্টের সহযোগী ও সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলাসহ প্রায় সব পদে একই লোক বসে আছেন। পুলিশেও একই অবস্থা। মাঠপর্যায়ের প্রশাসন আগাগোড়া স্বৈরাচারের লোকেদের নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা আদৌ কী সম্ভব? নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে অর্থনৈতিক সঙ্গতি বড় ফ্যাক্টর। বিগত সরকার ও এর সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলোর নির্বিচার লুটতরাজ ও অর্থ পাচারের পর এ মুহূর্তে রাজকোষের যে অবস্থা তাতে নির্বাচন আয়োজনের মতো সঙ্গতি আছে কি না তাও বিবেচনায় নিতে হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, দ্রুত নির্বাচন করার সুযোগ কম। তবে বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ শুরুর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এ সংলাপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে, কোন কোন বিষয়ে কতটা সংস্কার করতে হবে এবং তা সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারে কতটা সময় ‘যৌক্তিক’ বলে বিবেচিত হবে।
এটি নিঃসংশয় সত্য যে, রাষ্ট্র সংস্কারের বৃহত্তর দায়িত্ব জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া নির্বাচিত সরকার ও সংসদের। তবে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। সেটি উপেক্ষা করার নয়। সংলাপের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে পারে, যা বিদ্যমান অনিশ্চয়তা দূর করে জনমনে স্বস্তি এনে দেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিধি নির্ধারণ; পথরেখা প্রণয়ন দরকার

আপলোড টাইম : ১০:৪১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসানের পর এ সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। তার মেয়াদ এক মাসও হয়নি। এই সরকার ক্ষমতায়িত হওয়ার পর থেকে বিএনপি প্রায় শুরু থেকে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলে আসছে। যদিও পরে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দিতে চায়। তবে কতটা সময় দিতে চায় তা স্পষ্ট করা হয়নি। যৌক্তিক সময় বলতে কতটা সময় তা-ও স্পষ্ট নয়।
একটি রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান ঘটেছে দেশে। শিশু-কিশোর, যুবাসহ নানা শ্রেণীর হাজারো মানুষ শহীদ হয়েছেন। সন্তান হারিয়েছেন হাজারো বাবা-মা। তাদের সান্ত্বনা দেয়া, তাদের পাশে দাঁড়ানো এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। একই সাথে দেশের অন্তত ১২টি জেলায় দেখা দিয়েছে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা। অর্ধকোটি মানুষ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের উদ্ধার ও নিরাপত্তা দেয়ার চেয়ে বড় কোনো বিষয় নেই, যা নিয়ে এ সময়ে বিচলিত হওয়ার সুযোগ আছে। স্বৈরাচারের পতনের পর তার সহযোগী দলগুলোও এ মুহূর্তে নিষ্ক্রিয়। মাঠে আছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিগত সরকারের সময় ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ মুহূর্তের জরুরি বিষয়- শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং বন্যার্তদের সাহায্যে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঠিক এই কাজটি করছেন বিরামহীনভাবে।
বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব বেশি। সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দলটি দিচ্ছে নিশ্চয়। প্রতি বিপ্লবের আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক করছে। রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের সেটি মনে করিয়ে দিচ্ছে। সবই ঠিক আছে, তবে শুধু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যও সংস্কার দরকার। পতিত স্বৈরাচার দেশের প্রতিটি খাত ঠাণ্ডা মাথায় সমূলে ধ্বংস করেছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, আইন কাঠামো সব এখন লেজেগোবরে অবস্থায়। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আবার সংস্কার করাও দুরূহ। এখন পর্যন্ত বিচার বিভাগে স্বৈরাচারের নিয়োগ পাওয়া চিহ্নিত বিচারকদেরও রদবদল সম্পন্ন হয়নি। প্রশাসনে পুরনো ফ্যাসিস্টের সহযোগী ও সুবিধাভোগী দুর্নীতিগ্রস্ত অনেক আমলাসহ প্রায় সব পদে একই লোক বসে আছেন। পুলিশেও একই অবস্থা। মাঠপর্যায়ের প্রশাসন আগাগোড়া স্বৈরাচারের লোকেদের নিয়ন্ত্রণে। এ অবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা আদৌ কী সম্ভব? নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে অর্থনৈতিক সঙ্গতি বড় ফ্যাক্টর। বিগত সরকার ও এর সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলোর নির্বিচার লুটতরাজ ও অর্থ পাচারের পর এ মুহূর্তে রাজকোষের যে অবস্থা তাতে নির্বাচন আয়োজনের মতো সঙ্গতি আছে কি না তাও বিবেচনায় নিতে হবে। সব মিলিয়ে বলা যায়, দ্রুত নির্বাচন করার সুযোগ কম। তবে বিএনপি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপ শুরুর যে প্রস্তাব দিয়েছে তা গুরুত্বপূর্ণ। এ সংলাপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে, কোন কোন বিষয়ে কতটা সংস্কার করতে হবে এবং তা সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারে কতটা সময় ‘যৌক্তিক’ বলে বিবেচিত হবে।
এটি নিঃসংশয় সত্য যে, রাষ্ট্র সংস্কারের বৃহত্তর দায়িত্ব জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া নির্বাচিত সরকার ও সংসদের। তবে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার দায়িত্ব নিয়েছেন তারাও জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত। সেটি উপেক্ষা করার নয়। সংলাপের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে পারে, যা বিদ্যমান অনিশ্চয়তা দূর করে জনমনে স্বস্তি এনে দেবে।