ত্রিপুরায় খুলে দেওয়া হলো বাঁধ, দেশে হু-হু করে ঢুকছে পানি
ফেনীসহ ৮ জেলায় ভয়াবহ বন্যা, নিহত ২- আপলোড টাইম : ০৯:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজানের পানির তোড়ে ভাসছে ফেনী জেলা। সীমান্তবর্তী অন্য ৭ জেলার বাসিন্দাও রয়েছেন বিপদে। ত্রিপুরায় ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দেওয়ায় ওই পানি বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু-হু করে ঢুকছে দেশে। পানির তোড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদী খোয়াই, গোমতী, ধলাই, মুহুরী, হালদা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এসব জেলার পাঁচ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। জেলাগুলোর মধ্যে ফেনীতে ২ শ গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। প্রবল স্রোতে একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান সড়ক ২ থেকে ৪ ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে খাগড়াছড়িতে ডুবেছে ৩০ গ্রাম। সাজেকে আটকা পড়েছেন আড়াইশ পর্যটক। সংযোগ সড়ক ভেঙে মহালছড়ি উপজেলার সঙ্গে মুবাছড়ি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে সব ধরনের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক নারী। মৌলভীবাজারে পাঁচটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশত গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন দেশ লাখের বেশি মানুষ। নোয়াখালীর সাতটি উপজেলায় অবনতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কুমিল্লায় নদীতে পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার কাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখের বেশি মানুষ।
গতকাল বুধবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি এবং ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী ও হালদা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এসময় এসব এলাকায় নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কেন্দ্র থেকে আরও বলা হয়েছে যে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানিও কিছু পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলজুড়েই বর্ষণ চলছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় যে লঘুচাপটি ছিল, তা দুর্বল হয়ে এমন বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে। এই বৃষ্টিপাত আরও দুইদিন অব্যাহত থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
৩১ বছর পর স্লুইস গেট খুলল ত্রিপুরা:
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে চলছে টানা ভারী বর্ষণ। অবিরাম বর্ষণে সেখানকার বিভিন্ন জনপদ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে উজানের ওই পানি ত্রিপুরার বিভিন্ন জনপদ ভাসিয়ে হু হু করে ঢুকছে বাংলাদেশে। ত্রিপুরা টাইমস ও বোরোক টাইমসের প্রতিবেদনে ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস খুলে দেওয়ার এ খবর জানানো হয়েছে। স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষিজমি ভেসে গেছে। বিভিন্ন নদনদী বেয়ে সেই পানি ছুটে আসছে ভাটির দিকে।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা গতকাল বুধবার তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারী বৃষ্টির কারণে গোমতী জেলায় রাজ্যের একমাত্র পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ডুম্বুর জলাধারে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পানি জমা হয়ে পড়েছে, তাই যে কোনো সময় বাঁধ ভেঙে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে; এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকায় আগাম ঘোষণা দিয়ে জলাধার কর্তৃপক্ষ স্লুইস গেট খুলে বাড়তি পানি ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলে গোমতী ও সিপাহীজলা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়িঘর ও কৃষিজমিতে ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
বোরোক টাইমস বলছে, ৩১ বছর পর ত্রিপুরা কর্তৃপক্ষ ডুম্বুর জলাধারের বাঁধের স্লুইস গেট খুলেছে। ভারী বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে বানের পানি ঢুকতে থাকায় ফেনী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি এখন পানির নিচে। সদর উপজেলা, সোনাগাজীর অনেক গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। বানের পানিতে এখন পর্যন্ত একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।