ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২২ বার পড়া হয়েছে
  • সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে- জেলা প্রশাসক
  • আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে- পুলিশ সুপার
  • প্রসাশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত-বাবু খান
  • দুর্নীতি ও মাদক নির্মূল করে সুন্দর চুয়াডাঙ্গা গড়ার আহ্বান শরীফের

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি প্রমুখ।

সভায় বিশেষ অতিথি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবন ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার কারণে জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এত সুন্দর ও শৃঙ্খল সভায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাইনি। এই সভায় উপস্থিত হয়ে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। যখন এই সভায় জেলার সকল বিষয়ের উন্নয়ন ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। এর আগে প্রশাসনকে স্বার্থান্বেষীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা আছি, প্রশাসনকে জেলার সকল মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে সহযোগিতা করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দলকে আরও সংগঠিত করার জন্য ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে জড়িত হয়েছেন এমন নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার করাসহ আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে কাজ করা হচ্ছে। আমরা আশা করব, প্রশাসন জেলার অবকাঠামোসহ গণমানুষের উন্নয়নে এবং সকল অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে উন্নত চুয়াডাঙ্গা গড়তে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।’

মাহমুদ হাসান খান বাবু জেলার একটি অন্যতম সমস্যা মাদককে নির্র্মূল করে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের থেকে বাঁচাতে করণীয় বিষয়ক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হয়। আমরা জেনেছি ইতোমধ্যে দেশব্যাপী এই সমস্যা পরিত্রাণে পুলিশের নতুন নিয়োগেও ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা ছাত্রদল-যুবদলের নতুন কর্মীদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে চাই। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে এটি করতে পারলে অন্যরাও শিক্ষা নিতে পারবে। সর্বোপরি মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়তে যা যা করণীয়, প্রসাশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সবাই অবগত আছেন এই জেলার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে। প্রশাসনের যে বিভাগ এ বিষয় নিয়ে কাজ করে, আমরা রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আমাদের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। কোন কারণে মানুষ নিজের জীবন এভাবে শেষ করছেন, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমরা জেলার মানুষকে আত্মহত্যামুক্ত সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে দিতে কাজ করতে চাই।’

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ দেশকে দ্বিতীয় বার স্বাধীন করে মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ছাত্র-গণআন্দোলনে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ ওনারা এই জেলার দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো দলবাজি করেননি। ফলে এই চুয়াডাঙ্গার সকল সরকারি স্থাপনাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা এই শহরের সকল রাস্তায় জনস্রোত দেখেছি। যদি ওনারা ভালো না হতেন, ভালো কাজের সঙ্গে না থাকতেন, তবে কারো পক্ষেই এই জনস্রোতের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’

শরীফুজ্জামান শরীফ চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যেন কোনো বেসরকারি ফার্মেসি, চায়ের দোকানসহ অন্যান্য ইজারা না রাখা হয়। তিনি সদর হাসপাতালের ল্যাব থেকে শুরু করে সকল চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত করার জন্য তাগিদ দেন। এতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষ উন্নত সেবা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গনে থাকা সাইকেল স্যান্ডটি সরিয়ে পেছনের দিকে নিলে সহজেই যানজট নিরসনসহ চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সকলের জন্য হাসপাতালকে আরও প্রশস্ত করা সম্ভব।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ৫ আগস্টের আগেও চুয়াডাঙ্গার সরকারি এবং আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতি ছিল, আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সেদিকে লক্ষ্য রাখলে এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব। সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসককেও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা রাজনীতির মধ্যে যারা আছি, ব্যক্তিগতভাবে কেউ দুর্নীতিবাজ নই। রাজনীতি করে টাকা-পয়সা গোছাতে হবে এই মনোভাব আমাদের কারো নেই, বরং নিজেদের যা আছে, তা দিয়েও জেলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি যদি কমানো যায়, তাহলে এই জেলার মানুষকে তাদের প্রাপ্য সেবা দিয়ে জেলার উন্নয়ন করা সম্ভব। কৃষিসমৃদ্ধ এই জেলার সাধারণ কৃষকেরা সরকারি সেবা পায় না। কিন্তু যে কৃষক নন, অথচ শত শত একর জমির সুবিধা ভোগ করছেন। এগুলো বন্ধ করে প্রকৃত কৃষকের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি এ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন এবং তা সমাধানে সকলকে ব্যবস্থা নিতেও কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। সর্বোপরি তিনি আগামী চুয়াডাঙ্গাকে সম্পূর্ণরুপে দুর্নীতিমুক্ত ও মাদক নির্মূল করে সুন্দর চুয়াডাঙ্গা গড়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, যে কোনো ধরনের অপরাধ কোনোক্রমেই যেন বৃদ্ধি না পায়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনভোগান্তি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনার ক্ষেত্রে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তাই পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে মাদকের বড় বড় চালান প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাদকের ব্যবহার বেড়ে যায়। আপনাদের প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ ঘাসমারা বিষাক্ত ওষুধ পান করে। আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে এটি এ জেলার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সিভিল সার্জনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। সদর হাসপাতালে রোগীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জেলার প্রতিটা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালাতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক বলেন, গত ৫ আগস্ট দেশের অন্যান্য জেলায় সরকারি দপ্তর, পুলিশ স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও আমাদের জেলায় তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে জন্য আমারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে জেলা প্রশাসক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা প্রতিটা কলেজের ছাত্র ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে যেভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে নেমেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, যিনি আইনের সাথে সংঘাতে জড়াবেন, তাকে আইনের আওতায় আনাই আমার কাজ। তিনি কে, কোন দল, কোন গোষ্ঠী, ওটা আমার দেখার বিষয় না। ভালো কাজে সবসময় আমি এবং আমার পুলিশ আছে। আপনাদের সাড়া পাচ্ছি, এটাই দারুণ। চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি। চুয়াডাঙ্গার মানুষ হেলমেট পরতে চায় না। তরুণরাও দল বেঁেধ প্রজাপতি টাইপের বাইক চালাতে যায়। এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা হয়। আমরা চায়, আপনারা সচেতন হন। দুর্ঘটনা কমুক। আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত

জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ

আপলোড টাইম : ১১:৫৯:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
  • সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে- জেলা প্রশাসক
  • আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে- পুলিশ সুপার
  • প্রসাশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত-বাবু খান
  • দুর্নীতি ও মাদক নির্মূল করে সুন্দর চুয়াডাঙ্গা গড়ার আহ্বান শরীফের

চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিশেষ অতিথি থেকে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু, সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতের আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি প্রমুখ।

সভায় বিশেষ অতিথি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবন ও স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার কারণে জেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে এত সুন্দর ও শৃঙ্খল সভায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাইনি। এই সভায় উপস্থিত হয়ে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে। যখন এই সভায় জেলার সকল বিষয়ের উন্নয়ন ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার সুযোগ রয়েছে। এর আগে প্রশাসনকে স্বার্থান্বেষীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তি যারা আছি, প্রশাসনকে জেলার সকল মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে সহযোগিতা করতে পারি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের দলকে আরও সংগঠিত করার জন্য ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে জড়িত হয়েছেন এমন নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার করাসহ আরও শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে কাজ করা হচ্ছে। আমরা আশা করব, প্রশাসন জেলার অবকাঠামোসহ গণমানুষের উন্নয়নে এবং সকল অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে উন্নত চুয়াডাঙ্গা গড়তে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।’

মাহমুদ হাসান খান বাবু জেলার একটি অন্যতম সমস্যা মাদককে নির্র্মূল করে তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের থেকে বাঁচাতে করণীয় বিষয়ক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হয়। আমরা জেনেছি ইতোমধ্যে দেশব্যাপী এই সমস্যা পরিত্রাণে পুলিশের নতুন নিয়োগেও ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আমরা ছাত্রদল-যুবদলের নতুন কর্মীদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনতে চাই। আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে এটি করতে পারলে অন্যরাও শিক্ষা নিতে পারবে। সর্বোপরি মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়তে যা যা করণীয়, প্রসাশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সবাই অবগত আছেন এই জেলার মানুষের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা রয়েছে। প্রশাসনের যে বিভাগ এ বিষয় নিয়ে কাজ করে, আমরা রাজনৈতিকভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করতে চাই। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আমাদের দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। কোন কারণে মানুষ নিজের জীবন এভাবে শেষ করছেন, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমরা জেলার মানুষকে আত্মহত্যামুক্ত সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ গড়ে দিতে কাজ করতে চাই।’

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ দেশকে দ্বিতীয় বার স্বাধীন করে মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ছাত্র-গণআন্দোলনে সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ ওনারা এই জেলার দায়িত্বে থাকাকালীন কোনো দলবাজি করেননি। ফলে এই চুয়াডাঙ্গার সকল সরকারি স্থাপনাসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমরা এই শহরের সকল রাস্তায় জনস্রোত দেখেছি। যদি ওনারা ভালো না হতেন, ভালো কাজের সঙ্গে না থাকতেন, তবে কারো পক্ষেই এই জনস্রোতের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’

শরীফুজ্জামান শরীফ চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যেন কোনো বেসরকারি ফার্মেসি, চায়ের দোকানসহ অন্যান্য ইজারা না রাখা হয়। তিনি সদর হাসপাতালের ল্যাব থেকে শুরু করে সকল চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত করার জন্য তাগিদ দেন। এতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষ উন্নত সেবা পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গনে থাকা সাইকেল স্যান্ডটি সরিয়ে পেছনের দিকে নিলে সহজেই যানজট নিরসনসহ চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সকলের জন্য হাসপাতালকে আরও প্রশস্ত করা সম্ভব।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ৫ আগস্টের আগেও চুয়াডাঙ্গার সরকারি এবং আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে যে দুর্নীতি ছিল, আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সেদিকে লক্ষ্য রাখলে এই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব। সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসককেও পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা রাজনীতির মধ্যে যারা আছি, ব্যক্তিগতভাবে কেউ দুর্নীতিবাজ নই। রাজনীতি করে টাকা-পয়সা গোছাতে হবে এই মনোভাব আমাদের কারো নেই, বরং নিজেদের যা আছে, তা দিয়েও জেলার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি যদি কমানো যায়, তাহলে এই জেলার মানুষকে তাদের প্রাপ্য সেবা দিয়ে জেলার উন্নয়ন করা সম্ভব। কৃষিসমৃদ্ধ এই জেলার সাধারণ কৃষকেরা সরকারি সেবা পায় না। কিন্তু যে কৃষক নন, অথচ শত শত একর জমির সুবিধা ভোগ করছেন। এগুলো বন্ধ করে প্রকৃত কৃষকের জন্য কাজ করতে হবে। তিনি এ আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারের বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন এবং তা সমাধানে সকলকে ব্যবস্থা নিতেও কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। সর্বোপরি তিনি আগামী চুয়াডাঙ্গাকে সম্পূর্ণরুপে দুর্নীতিমুক্ত ও মাদক নির্মূল করে সুন্দর চুয়াডাঙ্গা গড়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, যে কোনো ধরনের অপরাধ কোনোক্রমেই যেন বৃদ্ধি না পায়, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জনভোগান্তি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক ঘটনার ক্ষেত্রে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। তাই পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে মাদকের বড় বড় চালান প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাদকের ব্যবহার বেড়ে যায়। আপনাদের প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ ঘাসমারা বিষাক্ত ওষুধ পান করে। আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে এটি এ জেলার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। আমাদের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে সিভিল সার্জনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। সদর হাসপাতালে রোগীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জেলার প্রতিটা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালাতে হবে।

চুয়াডাঙ্গার বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করে জেলা প্রশাসক বলেন, গত ৫ আগস্ট দেশের অন্যান্য জেলায় সরকারি দপ্তর, পুলিশ স্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও আমাদের জেলায় তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। সে জন্য আমারা রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন করে জেলা প্রশাসক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা প্রতিটা কলেজের ছাত্র ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে যেভাবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযানে নেমেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, যিনি আইনের সাথে সংঘাতে জড়াবেন, তাকে আইনের আওতায় আনাই আমার কাজ। তিনি কে, কোন দল, কোন গোষ্ঠী, ওটা আমার দেখার বিষয় না। ভালো কাজে সবসময় আমি এবং আমার পুলিশ আছে। আপনাদের সাড়া পাচ্ছি, এটাই দারুণ। চুয়াডাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনার হার অনেক বেশি। চুয়াডাঙ্গার মানুষ হেলমেট পরতে চায় না। তরুণরাও দল বেঁেধ প্রজাপতি টাইপের বাইক চালাতে যায়। এভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা হয়। আমরা চায়, আপনারা সচেতন হন। দুর্ঘটনা কমুক। আইন মানার সংস্কৃতি চালু করতে হবে।