গণহত্যার অভিযোগ তদন্তে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন
শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুই হত্যা মামলা- আপলোড টাইম : ০৯:২২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
- / ২৬ বার পড়া হয়েছে
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুটি মামলা এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রাজধানীর কাফরুল ও উত্তরা-পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। ঢাকার সিএমএম আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এই আদেশ দেন। মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, সালমান এফ রহমান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিল, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান কচি, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি গাজী মেজবাউল হক সাচ্চু, সাবেক এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হারুন-অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি হারুন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন, জামাল মোস্তফা, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান, সালামত উল্লাহ সাগর ও দিপঙ্কর বাছার দিপ্তকে আসামি করা হয়েছে। এই ২৪ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৫০০-৬০০ নেতা-কর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বাদী মো. রাাজিবের ছোট ভাই ফয়জুল ইসলাম রাজন মিরপুর-১০ গোল চত্বরসংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের পাকা রাস্তার ওপর পুলিশের গুলিতে মারা যান। রাজন ঢাকা মডেল ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন। মামলায় বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে ও তত্ত্বাবধানে পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার ঘাতক বাহিনীতে পরিণত হয়। এরা এই হত্যাকাণ্ড আরো বেশি করে করার জন্য অন্য আসামিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশ ও প্ররোচনায় পুলিশ সদস্যরা এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বাহিনী অবিরাম গুলি বর্ষণের মাধ্যমে বাদীর সন্তানসহ আরো অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। অনেকের লাশ গুম করে। আসামিদের আক্রমণ ও গুলিবর্ষণে অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ আহত হন। বাদীর পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে কাফরুল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে শেখ হাসিনাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা চৌধুরী সুমু মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে উত্তরা-পশ্চিম থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা বাদী হয়ে এ মামলা করেন। মামলায় আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর গেটের স্মাইল গ্যালারির সামনে থেকে বাদী ও তার বন্ধুকে একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে ১০-১১ জন বন্দুকধারী ছিলেন। গাড়িতে ঘণ্টাখানেক রেখে নির্যাতনের পর তাদের একটি ভবনে নেওয়া হয়। নির্জন স্থানে ছয় মাস তিন দিন আটক রেখে নির্যাতন করা হয়।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের:
শেখ হাসিনাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন দায়ের করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে শহিদ আরিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবিরের পক্ষে গতকাল বুধবার আবেদনটি দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত সংস্থা তদন্তের অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই এর তদন্ত করতে পারবে তদন্ত সংস্থা।
অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, এদের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অপরাধ করেছেন। যাদেরকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্তির আবেদন করা হয়েছে, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ এ আরাফাত, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ, হাবিবুর রহমান ও মো. হারুন অর রশিদ। আবেদনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে আহত হয়ে পরবর্তীকালে বিভিন্ন তারিখে নিহতরা এর আওতায় থাকবে। ঘটনার স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে।