ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৮ বার পড়া হয়েছে

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকানমালিকের মৃত্যুর ঘটনায় পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার আবেদন সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদাবর থানার বাসিন্দা এস এম আমীর হামজা (শাতিল) নামের এক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। সাতজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলা ৪০ ফুট চৌরাস্তা পাকা রাস্তার ওপর গত ১৯ জুলাই বিকেলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মামলার এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে তা দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। ৩ নম্বর আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ৪ নম্বর আসামি হারুন-অর-রশীদ, ৬ নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার সরকার ও ৭ নম্বর আসামি হাবিবুর রহমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। ৫ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত নিরীহ ছাত্র-জনতাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মিয়া বলেন, আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছে। এজাহার হিসেবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট থানাকেই মামলাটির তদন্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি। বাদী আমীর হামজা বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকেই আমার মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি এই হুমকিকে ভয় পাই না।’

যা বলা হয়েছে এজাহারে :
এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে দমানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দমনপীড়ন শুরু করে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার সময় মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করে। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে। মুদিদোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানায়, আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা তার লাশ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। যেহেতু পঞ্চগড়ে নিহতের বাড়ি এবং তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। এ কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। সচেতন নাগরিক হিসেবে বাদী এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। পরে বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্যের নির্দেশ দেন।

ঢাবিতে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান:
আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেই রেজিস্ট্র্যান্স উইকের প্রথম দিনে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা এই স্লোগান দেন। চার দফা দাবি নিয়ে আগামী এক সপ্তাহ মাঠে থাকার ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। কর্মসূচি অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিন সারা দেশে যেসব স্থানে আন্দোলনকারীরা শহীদ হয়েছেন, সেসব স্থান অভিমুখে ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর পর এখন নানাভাবে প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ছাত্রসমাজ খুনিদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। আমরা আপাতত প্রথম দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন পরবর্তী দিনের কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে । আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর দাবি হচ্ছে- ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনা এবং তার দল ও সরকার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
এদিকে গত ১২ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সারা দেশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই- খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘অপরাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ স্লোগান দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হতে পারে :
দেশের শত শত শিক্ষার্থী ও জনতাকে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক। গত ৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়েরকারী আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা এবং তার আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পলাতক। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেখানের আইনটা যদি দেখি, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে মামলা হতে পারে। সেখানে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তখন তাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা যেতে পারে। অনীক আর হক বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নয়, তিনি তার সহযোগীরা যে সব গণহত্যার অপরাধ করেছে, চাইলে উচ্চ আদালতেও শেখ হাসিনাসহ সবার বিচার করা সম্ভব। এদিকে গত ১২ আগস্ট ঢাবিতে শিক্ষার্থীর সমাবেশ করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওই সব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাদী এ মামলা করলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শেখ হাসিনাসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

আপলোড টাইম : ০৯:১১:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় পুলিশের গুলিতে এক দোকানমালিকের মৃত্যুর ঘটনায় পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার আবেদন সরাসরি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদাবর থানার বাসিন্দা এস এম আমীর হামজা (শাতিল) নামের এক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। সাতজনের নাম উল্লেখ ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যবৃন্দকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুর থানাধীন বসিলা ৪০ ফুট চৌরাস্তা পাকা রাস্তার ওপর গত ১৯ জুলাই বিকেলে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মামলার এজাহারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আন্দোলন চলাকালে শক্ত হাতে তা দমন করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ২ নম্বর আসামি ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। ৩ নম্বর আসামি সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ৪ নম্বর আসামি হারুন-অর-রশীদ, ৬ নম্বর আসামি বিপ্লব কুমার সরকার ও ৭ নম্বর আসামি হাবিবুর রহমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে তাদের অধীনস্ত পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। ৫ নম্বর আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশকে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যান্য অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর নির্দেশে হত্যাকাণ্ড ঘটায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শত শত নিরীহ ছাত্র-জনতাকে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে হত্যা করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুন মিয়া বলেন, আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছে। এজাহার হিসেবে গণ্য করে সংশ্লিষ্ট থানাকেই মামলাটির তদন্ত করতে হবে বলেও জানান তিনি। বাদী আমীর হামজা বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর থেকেই আমার মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি এই হুমকিকে ভয় পাই না।’

যা বলা হয়েছে এজাহারে :
এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়। গত ১৮ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গতি সঞ্চার হয়। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে দমানোর জন্য তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার দমনপীড়ন শুরু করে। শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। ১৯ জুলাই বিকাল ৪টার সময় মোহাম্মদপুরের বসিলা ৪০ ফিট চৌরাস্তায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করে। সেই আন্দোলন দমনের জন্য পুলিশ নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি করে। মুদিদোকানদার আবু সায়েদ (৪৫) রাস্তা পার হয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। তার মাথার এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানায়, আবু সায়েদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার পর স্থানীয়রা তার লাশ গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাড়োয়া বামনহাট ইউনিয়নের নতুন বস্তি প্রধানহাটে পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। যেহেতু পঞ্চগড়ে নিহতের বাড়ি এবং তার পরিবার অত্যন্ত গরিব। এ কারণে আইনের আশ্রয় নিতে পারছেন না। সচেতন নাগরিক হিসেবে বাদী এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান। পরে বিচারক বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্যের নির্দেশ দেন।

ঢাবিতে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান:
আওয়ামী লীগের প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেই রেজিস্ট্র্যান্স উইকের প্রথম দিনে শেখ হাসিনার ফাঁসির দাবিতে স্লোগান উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা এই স্লোগান দেন। চার দফা দাবি নিয়ে আগামী এক সপ্তাহ মাঠে থাকার ‘রেজিস্ট্যান্স উইক’ কর্মসূচি গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ঘোষণা করেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। কর্মসূচি অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিন সারা দেশে যেসব স্থানে আন্দোলনকারীরা শহীদ হয়েছেন, সেসব স্থান অভিমুখে ‘রোডমার্চ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছেড়ে পালানোর পর এখন নানাভাবে প্রতিবিপ্লবের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ছাত্রসমাজ খুনিদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দেবে। তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। আমরা আপাতত প্রথম দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। প্রতিদিন পরবর্তী দিনের কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হবে । আন্দোলনকারীদের চার দফা দাবির মধ্যে এক নম্বর দাবি হচ্ছে- ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে ব্যবহার করে ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনা এবং তার দল ও সরকার যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সেগুলোর দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা।
এদিকে গত ১২ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে আসেন। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সারা দেশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করারও দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে-খুনি কেন বাহিরে’, ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই- খুনি হাসিনার বিচার চাই’, ‘অপরাজনীতির ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’ স্লোগান দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার হতে পারে :
দেশের শত শত শিক্ষার্থী ও জনতাকে গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনাকে হুকুমের আসামি হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক। গত ৬ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এনেক্স ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট পিটিশন দায়েরকারী আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা এবং তার আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন পলাতক। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, সেখানের আইনটা যদি দেখি, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়। সেখানেও তার বিরুদ্ধে গণহত্যার দায়ে মামলা হতে পারে। সেখানে যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তখন তাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা যেতে পারে। অনীক আর হক বলেন, শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নয়, তিনি তার সহযোগীরা যে সব গণহত্যার অপরাধ করেছে, চাইলে উচ্চ আদালতেও শেখ হাসিনাসহ সবার বিচার করা সম্ভব। এদিকে গত ১২ আগস্ট ঢাবিতে শিক্ষার্থীর সমাবেশ করে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা মিছিল সমাবেশ করে। ওই সব শান্তিপূর্ণ মিছিলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালানো হয়। বহু ছাত্র-জনতা নিহত ও আহত হন। গত ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুরে বসিলার ৪০ ফিট এলাকায় ছাত্র-জনতা শান্তপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করছিল। সেখানেও পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। রাস্তা পার হওয়ার সময় স্থানীয় মুদি দোকানদার আবু সায়েদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিহত সায়েদকে তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের বোদায় নতুন বস্তি প্রধান হাটে নিয়ে দাফন করা হয়। তার মা, স্ত্রী, ছেলে সন্তান সেখানেই থাকেন। এ কারণে তারা ঢাকায় এসে মামলা করতে অপারগ। এজন্য বিবেকের তাড়নায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাদী এ মামলা করলেন।