ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংখ্যালঘু নিয়ে পুরোনো প্রচারণা; আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সর্বাধিক গুরুত্ব পাক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে দেশে বড় ধরনের পালাবদল ঘটেছে। ধারণাও করা যায়নি বাংলাদেশ হাসিনার দানবীয় শাসন থেকে মুক্তি পাবে। শত শত ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অবিশ্বাস্য এ বিজয় এসেছে। কোটা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে রূপ নেয়। সব শ্রেণী, পেশা ও বর্ণের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রাণ গেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম- সব ধর্মের মানুষের। এ আন্দোলন ছিল দেশের আপামর জনসাধারণের। আশাব্যঞ্জক বিষয় হচ্ছে- সংখ্যালঘু পীড়নের বিষয় নিয়ে মুসলমানরা এখন সর্বোচ্চ সচেতন। বিশেষ করে আন্দোলনকারী ছাত্র, রাজনৈতিক দল ও মাদরাসার ছাত্ররা সারা দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় এগিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় অসংখ্য মানুষ প্রচার চালাচ্ছেন। আরো আনন্দের বিষয়, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাতে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা না ঘটে সে জন্য দলবেঁধে পাহারা বসাচ্ছেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ব্যাপক প্রচারণা তৈরি করে। এই কেন্দ্রিক ইস্যু তৈরি করে একটি গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকে ফায়দা হাসিল করে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময় এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো ধরনের তদন্ত না করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ওপর তার দায় চাপিয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সবসময় এ ধরনের প্রচারণা থেকে সুযোগ নেয়। অথচ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও তাদের সম্পদ দখলের ক্ষেত্রে দলটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। ছাত্রদের এই বিপ্লব সফল হওয়ার পর এবারো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রচারণা তোলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
বেশ কিছু জেলায় ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হচ্ছে। বিজয়ী ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে সচেতন। সবাই একমত যে, এ দেশে ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন নেই। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। এদেশ আমাদের সবার। তার ফল সারা দেশে দেখা যাচ্ছে। সবাই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সংখ্যালঘুদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। এর পরও ফাঁক গলিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাহলে হামলার ঘটনাগুলো কারা করছে সবাইকে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা এতদিন পাড়া-মহল্লায় সশস্ত্র হয়ে মাস্তানি সন্ত্রাসী করেছে এবং আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে তারা এখন এই আন্দোলনের ওপর কালিমা লেপনের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো ঘটাচ্ছে কিনা? যাতে করে দেখানো যায়- বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে- হাসিনা শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল ‘বিভক্ত করে শাসন করো’। কাউকে কোনো একটি তকমা দিয়ে তাদের মানবাধিকার খর্ব করা হতো। হাসিনা নিজেও ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করার অপকৌশল নিয়ে গদি হারিয়েছেন।
বর্তমান সময়টি দেশের জন্য অত্যন্ত নাজুক। একটি নিষ্ঠুর অত্যাচারী সরকার মাত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এখন দেশের নিরাপত্তা অর্গানগুলো রয়েছে জড়তার মধ্যে। বিগত সরকারের সময় পুলিশের সীমাহীন নেতিবাচক ব্যবহার সংস্থাটির ভাবমর্যাদা শূন্যে নামিয়ে এনেছে। আন্দোলনের ক্রিটিক্যাল সময়ে তার প্রভাব স্পষ্ট। সরকার পড়ে যাওয়ার পর পুলিশি কার্যক্রম একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এদিকে নতুন সরকার এখনো দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেনি। এ ধরনের একটি সময় স্বার্থান্বেষী শক্তিগুলো সক্রিয় রয়েছে। তারা বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে চায়। যাতে সদ্য মুক্ত হওয়া বাংলাদেশকে অপবাদ দেয়া যায়। আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব নেবেন। তারা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন। এর সাথে দেশবাসীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সবার প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আশা রাখি স্বল্প সময়ে মধ্যে সব ধরনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সংখ্যালঘু নিয়ে পুরোনো প্রচারণা; আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সর্বাধিক গুরুত্ব পাক

আপলোড টাইম : ১০:১১:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪

সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে দেশে বড় ধরনের পালাবদল ঘটেছে। ধারণাও করা যায়নি বাংলাদেশ হাসিনার দানবীয় শাসন থেকে মুক্তি পাবে। শত শত ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে অবিশ্বাস্য এ বিজয় এসেছে। কোটা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে রূপ নেয়। সব শ্রেণী, পেশা ও বর্ণের মানুষ এতে অংশগ্রহণ করেন। প্রাণ গেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম- সব ধর্মের মানুষের। এ আন্দোলন ছিল দেশের আপামর জনসাধারণের। আশাব্যঞ্জক বিষয় হচ্ছে- সংখ্যালঘু পীড়নের বিষয় নিয়ে মুসলমানরা এখন সর্বোচ্চ সচেতন। বিশেষ করে আন্দোলনকারী ছাত্র, রাজনৈতিক দল ও মাদরাসার ছাত্ররা সারা দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় এগিয়ে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় অসংখ্য মানুষ প্রচার চালাচ্ছেন। আরো আনন্দের বিষয়, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যাতে কোনো ধরনের হামলার ঘটনা না ঘটে সে জন্য দলবেঁধে পাহারা বসাচ্ছেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ব্যাপক প্রচারণা তৈরি করে। এই কেন্দ্রিক ইস্যু তৈরি করে একটি গোষ্ঠী স্বাধীনতার পর থেকে ফায়দা হাসিল করে যাচ্ছে। বেশির ভাগ সময় এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কোনো ধরনের তদন্ত না করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ওপর তার দায় চাপিয়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সবসময় এ ধরনের প্রচারণা থেকে সুযোগ নেয়। অথচ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও তাদের সম্পদ দখলের ক্ষেত্রে দলটির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি। ছাত্রদের এই বিপ্লব সফল হওয়ার পর এবারো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রচারণা তোলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
বেশ কিছু জেলায় ইতোমধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ হচ্ছে। বিজয়ী ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে সচেতন। সবাই একমত যে, এ দেশে ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন নেই। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। এদেশ আমাদের সবার। তার ফল সারা দেশে দেখা যাচ্ছে। সবাই ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সংখ্যালঘুদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। এর পরও ফাঁক গলিয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তাহলে হামলার ঘটনাগুলো কারা করছে সবাইকে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে যারা এতদিন পাড়া-মহল্লায় সশস্ত্র হয়ে মাস্তানি সন্ত্রাসী করেছে এবং আন্দোলনের সময় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে তারা এখন এই আন্দোলনের ওপর কালিমা লেপনের জন্য বিচ্ছিন্নভাবে এগুলো ঘটাচ্ছে কিনা? যাতে করে দেখানো যায়- বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে- হাসিনা শাসনের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল ‘বিভক্ত করে শাসন করো’। কাউকে কোনো একটি তকমা দিয়ে তাদের মানবাধিকার খর্ব করা হতো। হাসিনা নিজেও ‘রাজাকার’ তকমা দিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজন করার অপকৌশল নিয়ে গদি হারিয়েছেন।
বর্তমান সময়টি দেশের জন্য অত্যন্ত নাজুক। একটি নিষ্ঠুর অত্যাচারী সরকার মাত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এখন দেশের নিরাপত্তা অর্গানগুলো রয়েছে জড়তার মধ্যে। বিগত সরকারের সময় পুলিশের সীমাহীন নেতিবাচক ব্যবহার সংস্থাটির ভাবমর্যাদা শূন্যে নামিয়ে এনেছে। আন্দোলনের ক্রিটিক্যাল সময়ে তার প্রভাব স্পষ্ট। সরকার পড়ে যাওয়ার পর পুলিশি কার্যক্রম একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এদিকে নতুন সরকার এখনো দায়িত্ব বুঝে নিতে পারেনি। এ ধরনের একটি সময় স্বার্থান্বেষী শক্তিগুলো সক্রিয় রয়েছে। তারা বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা ছড়িয়ে দিতে চায়। যাতে সদ্য মুক্ত হওয়া বাংলাদেশকে অপবাদ দেয়া যায়। আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে নতুন সরকার দায়িত্ব নেবেন। তারা সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন। এর সাথে দেশবাসীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে সবার প্রাণ ও সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। আশা রাখি স্বল্প সময়ে মধ্যে সব ধরনের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে।