ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ ১১ বছর পর চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন সম্পন্ন

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমর্থিত পূর্ণ প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩০:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল ধরে বিজয়ী হয়েছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমর্থিত ইয়াকুব-শাহারিন-মর্তুজার ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ আলী।
নির্বাচনে সাধারণ সদস্য হতে পরিচালক নির্বাচিত হবেন ১৪ জন। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল ধরে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ নেতা চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থিত ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’। প্রাপ্ত স্থান অনুযায়ী বিজয়ীরা হলেন- প্রথম সালাউদ্দীন মো. মতুর্জা ৪৪৮ ভোট, দ্বিতীয় এস এম তসলিম আরিফ বাবু ৪৪৪ ভোট, ৪৪২ ভোট পেয়ে যৌথভাবে তৃতীয় শাহারিন হক মালিক ও মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, পঞ্চম আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার সোনা ৪৩৭ ভোট, ষষ্ঠ একেএম সালাউদ্দীন মিঠু ৪৩৫ ভোট, ৪৩২ ভোট পেয়ে যৌথভাবে সপ্তম হয়েছেন তাজুল ইসলাম ও ইয়াকুব হোসেন মালিক, অষ্টম এনামুল হক শাহ মুকুল ৪৬৩ ভোট, নবম সেলিম আহমেদ ৪১৪ ভোট, দশম হারুন অর রশিদ ৪১০ ভোট, একাদশ শামসুজ্জামান খোকন ৩৭৫ ভোট, দ্বাদশ মতিয়ার রহমান ৩৫৬ ভোট ও ত্রয়োদশ তম হয়েছেন কিশোর কুমার কুণ্ডু ৩০২ ভোট।
এছাড়াও সাধারণ সদস্য হতে পরিচালক পদে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কুক্ষিগত, অনিয়ম থেকে রক্ষা ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের প্যানেল নামে একটি প্যানেল থেকে চারজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছিলেন। তবুও তারাও কমবেশি ভোট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আব্দুল হাকিম মুন্সী ৫৩ ভোট, ইমতিয়াজ আহমেদ মিঠুন ২৮ ভোট, মফিজুর রহমান ৩৮ ভোট ও শহিদুল ইসলাম ৩৬ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা এই প্যানেলটির অন্য দুইজন গোলাম মস্তফা বাদল ১২২ ভোট ও ১২৪ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুল্লা জোয়ার্দ্দার ছটি ১৯১ ভোট পেয়েছেন।


অপর দিকে, সহযোগী সদস্য হতে পরিচালক নির্বাচিত হবেন ৫ জন। এখানেও পূর্ণ প্যানেল ধরে ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’ জয়লাভ করেছে। প্রাপ্ত স্থান অনুযায়ী বিজয়ীরা হলেন- নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার ১৫৩ ভোট, পবিত্র কুমার আগরওয়ালা ১৫৩ ভোট, কামরুল ইসলাম ১৫১ ভোট, সুরেশ কুমার আগরওয়ালা ১৫০ ভোট ও এএনএম আরিফ ১৪৯ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কুক্ষিগত, অনিয়ম থেকে রক্ষা ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের প্যানেল নামে একটি প্যানেল থেকে ভোট বর্জন করা দুই প্রার্থী রোকনুজ্জামান ২ ভোট ও সালাউদ্দীন বিশ্বাস মিলন ৪ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে মোট ২৮ জন ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছিলেন। সাধারণ সদস্য পদে ভোটার ছিলেন ৫৮৭ জন। ভোট পড়েছে ৪৬৫টি। বাতিল হয়েছে ৫টি। শতকরা পোলের হার ৭৯ শতাংশ। অপর দিকে, সহযোগী সদস্য পদে মোট ভোটার ছিল ২১৬ জন। ভোট দিয়েছেন ১৫৭ জন। বাতিল হয়েছে ৪টি। শতকরা পোলের হার ৭২ শতাংশ।
এদিকে, দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, এফবিসিসিআিই’র পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক নেতা মানিক আকবর, কামরুজ্জামান সেলিম, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলুসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন অ্যাড. মো. আশরাফ আলী, সহকারী নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. এম এম মনোয়ার হোসেন সুরুজ ও কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার। আপিল বোর্ডের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাড. এম এম শাহজাহান মুকুল, সদস্য ছিলেন অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন ও অ্যাড. তসলিম উদ্দিন ফিরোজ।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার/পোলিং অফিসার হিসেবে ছিলেন অ্যাড. মো. ইফতিকার হোসেন (খোকন), অ্যাড. মো. মোর্তাজান হোসেন, অ্যাড. মো. ইমতিয়াজ আহমেদ (উজ্জল), অ্যাড. এস এম, শরীফ উদ্দীন (হাসু), অ্যাড. মো. রবিউল হক (রবি), অ্যাড. মোর্ত্তুজা মো. মিল্টন, অ্যাড. মো. আতিয়ার রহমান (১), অ্যাড. মো. ইজাজুল ইসলাম (ইজাজ), অ্যাড. মো. মনিবুল হাসান (পলাশ) ও অ্যাড. সৈয়দ ফারুক উদ্দিন আহম্মেদ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের পর দুবার তফসিল ঘোষণা করা হলেও হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ায় দুবারই নির্বাচন স্থগিত করা হয়। মাস খানেক আগে মামলা উইড্রো করা হলে মন্ত্রণালয় ৪ মাস সময় দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় নির্বাচনী প্রস্তুতি। পরবর্তীতে যথাসময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে নির্বাচন এবং আপিল বোর্ড গঠন করে কর্তৃপক্ষ। ৩ আগস্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার। তবে এর মধ্যেও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
ফলাফল ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ আলী বলেন, অনেক চরাই-উতরাই পার হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ীরা নিশ্চয় আলোর দিকে এগিয়ে চলবেন এবং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিয়ে এগিয়ে নেবেন। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি বিজয়ী এবং পরাজিত প্যানেল এগিয়ে যাওয়ার এই পথচলায় একে অপরের পাশে থাকবে। এসময় তিনি নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন, তাদের প্রতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আগস্ট শোকের মাসে চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও চেম্বারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট পোল করেছেন। এই উপস্থিতি চেম্বারের নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছে। নির্বাচনে ভোটারা নিজেরদের মধ্যে সচ্ছতা রেখে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীরা ১০ শতাংশ ভোট পাওয়ায় এটাও প্রমাণ হয়েছে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন সুন্দর একটি ভোটের পরিস্থিতি আমাদেরকে উপহার দিতে পেরেছেন। আমি এই নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে যারা সহযোগিতা করেছেন, সকলকে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ প্রতিক্ষার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, নির্বাচনে মতভেদ থাকতেই পারে, আমরা এখন তা ভুলে যাবো।’ এসময় তিনি চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ীক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা সকলে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়িক উন্নয়নের স্বার্থে সকলে এক কাঁতারে দাঁড়িয়ে ব্যবসার উন্ননে এগিয়ে আসুন। আজকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, ব্যবসায়ীরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনারা সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে ছিলেন, আগামীতেও পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করবেন।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আমি এই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন সদস্য। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে চেম্বারের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। যারা বিজয়ী হয়েছেন, সকলকে আমার অভিনন্দন।’ এসময় নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচিত পরিষদের সকল সদস্য আগামী দিনে চেম্বারের উন্নয়নে একে অপরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দীর্ঘ ১১ বছর পর চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচন সম্পন্ন

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমর্থিত পূর্ণ প্যানেলের নিরঙ্কুশ জয়

আপলোড টাইম : ০৯:৩০:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ব্যবসায়ীদের বৃহৎ সংগঠন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল ধরে বিজয়ী হয়েছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা সমর্থিত ইয়াকুব-শাহারিন-মর্তুজার ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ আলী।
নির্বাচনে সাধারণ সদস্য হতে পরিচালক নির্বাচিত হবেন ১৪ জন। নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল ধরে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ নেতা চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থিত ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’। প্রাপ্ত স্থান অনুযায়ী বিজয়ীরা হলেন- প্রথম সালাউদ্দীন মো. মতুর্জা ৪৪৮ ভোট, দ্বিতীয় এস এম তসলিম আরিফ বাবু ৪৪৪ ভোট, ৪৪২ ভোট পেয়ে যৌথভাবে তৃতীয় শাহারিন হক মালিক ও মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ, পঞ্চম আরিফ হোসেন জোয়ার্দ্দার সোনা ৪৩৭ ভোট, ষষ্ঠ একেএম সালাউদ্দীন মিঠু ৪৩৫ ভোট, ৪৩২ ভোট পেয়ে যৌথভাবে সপ্তম হয়েছেন তাজুল ইসলাম ও ইয়াকুব হোসেন মালিক, অষ্টম এনামুল হক শাহ মুকুল ৪৬৩ ভোট, নবম সেলিম আহমেদ ৪১৪ ভোট, দশম হারুন অর রশিদ ৪১০ ভোট, একাদশ শামসুজ্জামান খোকন ৩৭৫ ভোট, দ্বাদশ মতিয়ার রহমান ৩৫৬ ভোট ও ত্রয়োদশ তম হয়েছেন কিশোর কুমার কুণ্ডু ৩০২ ভোট।
এছাড়াও সাধারণ সদস্য হতে পরিচালক পদে চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কুক্ষিগত, অনিয়ম থেকে রক্ষা ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের প্যানেল নামে একটি প্যানেল থেকে চারজন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছিলেন। তবুও তারাও কমবেশি ভোট পেয়েছেন। তাদের মধ্যে আব্দুল হাকিম মুন্সী ৫৩ ভোট, ইমতিয়াজ আহমেদ মিঠুন ২৮ ভোট, মফিজুর রহমান ৩৮ ভোট ও শহিদুল ইসলাম ৩৬ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা এই প্যানেলটির অন্য দুইজন গোলাম মস্তফা বাদল ১২২ ভোট ও ১২৪ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুল্লা জোয়ার্দ্দার ছটি ১৯১ ভোট পেয়েছেন।


অপর দিকে, সহযোগী সদস্য হতে পরিচালক নির্বাচিত হবেন ৫ জন। এখানেও পূর্ণ প্যানেল ধরে ‘প্রগতিশীল ও উন্নয়ন পরিষদ’ জয়লাভ করেছে। প্রাপ্ত স্থান অনুযায়ী বিজয়ীরা হলেন- নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার ১৫৩ ভোট, পবিত্র কুমার আগরওয়ালা ১৫৩ ভোট, কামরুল ইসলাম ১৫১ ভোট, সুরেশ কুমার আগরওয়ালা ১৫০ ভোট ও এএনএম আরিফ ১৪৯ ভোট পেয়েছেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কুক্ষিগত, অনিয়ম থেকে রক্ষা ও ব্যবসায়ীদের অধিকার আদায়ের প্যানেল নামে একটি প্যানেল থেকে ভোট বর্জন করা দুই প্রার্থী রোকনুজ্জামান ২ ভোট ও সালাউদ্দীন বিশ্বাস মিলন ৪ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে মোট ২৮ জন ব্যবসায়ী প্রার্থী হয়েছিলেন। সাধারণ সদস্য পদে ভোটার ছিলেন ৫৮৭ জন। ভোট পড়েছে ৪৬৫টি। বাতিল হয়েছে ৫টি। শতকরা পোলের হার ৭৯ শতাংশ। অপর দিকে, সহযোগী সদস্য পদে মোট ভোটার ছিল ২১৬ জন। ভোট দিয়েছেন ১৫৭ জন। বাতিল হয়েছে ৪টি। শতকরা পোলের হার ৭২ শতাংশ।
এদিকে, দিনব্যাপী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, এফবিসিসিআিই’র পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজীব হাসান কচি, সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক নেতা মানিক আকবর, কামরুজ্জামান সেলিম, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি সরদার আল আমিন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলুসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ছিলেন অ্যাড. মো. আশরাফ আলী, সহকারী নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. এম এম মনোয়ার হোসেন সুরুজ ও কাইজার হোসেন জোয়ার্দ্দার। আপিল বোর্ডের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাড. এম এম শাহজাহান মুকুল, সদস্য ছিলেন অ্যাড. আকসিজুল ইসলাম রতন ও অ্যাড. তসলিম উদ্দিন ফিরোজ।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার/পোলিং অফিসার হিসেবে ছিলেন অ্যাড. মো. ইফতিকার হোসেন (খোকন), অ্যাড. মো. মোর্তাজান হোসেন, অ্যাড. মো. ইমতিয়াজ আহমেদ (উজ্জল), অ্যাড. এস এম, শরীফ উদ্দীন (হাসু), অ্যাড. মো. রবিউল হক (রবি), অ্যাড. মোর্ত্তুজা মো. মিল্টন, অ্যাড. মো. আতিয়ার রহমান (১), অ্যাড. মো. ইজাজুল ইসলাম (ইজাজ), অ্যাড. মো. মনিবুল হাসান (পলাশ) ও অ্যাড. সৈয়দ ফারুক উদ্দিন আহম্মেদ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের পর দুবার তফসিল ঘোষণা করা হলেও হাইকোর্টে মামলা দায়ের হওয়ায় দুবারই নির্বাচন স্থগিত করা হয়। মাস খানেক আগে মামলা উইড্রো করা হলে মন্ত্রণালয় ৪ মাস সময় দেয়। তারপর থেকেই শুরু হয় নির্বাচনী প্রস্তুতি। পরবর্তীতে যথাসময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে নির্বাচন এবং আপিল বোর্ড গঠন করে কর্তৃপক্ষ। ৩ আগস্ট দিনক্ষণ নির্ধারণ করে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক সাধারণ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার। তবে এর মধ্যেও নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
ফলাফল ঘোষণাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. আশরাফ আলী বলেন, অনেক চরাই-উতরাই পার হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর পর চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে বিজয়ীরা নিশ্চয় আলোর দিকে এগিয়ে চলবেন এবং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিয়ে এগিয়ে নেবেন। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি বিজয়ী এবং পরাজিত প্যানেল এগিয়ে যাওয়ার এই পথচলায় একে অপরের পাশে থাকবে। এসময় তিনি নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যারা নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে কাজ করেছেন, তাদের প্রতি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এফবিসিসিআই-এর পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আগস্ট শোকের মাসে চেম্বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারা দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও চেম্বারের নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট পোল করেছেন। এই উপস্থিতি চেম্বারের নির্বাচনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছে। নির্বাচনে ভোটারা নিজেরদের মধ্যে সচ্ছতা রেখে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। পরাজিত প্রার্থীরা ১০ শতাংশ ভোট পাওয়ায় এটাও প্রমাণ হয়েছে ব্যবসায়ীরা তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নির্বাচন কমিশন সুন্দর একটি ভোটের পরিস্থিতি আমাদেরকে উপহার দিতে পেরেছেন। আমি এই নির্বাচনের নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে যারা সহযোগিতা করেছেন, সকলকে ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘ প্রতিক্ষার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, নির্বাচনে মতভেদ থাকতেই পারে, আমরা এখন তা ভুলে যাবো।’ এসময় তিনি চুয়াডাঙ্গা ব্যবসায়ীক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা সকলে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়িক উন্নয়নের স্বার্থে সকলে এক কাঁতারে দাঁড়িয়ে ব্যবসার উন্ননে এগিয়ে আসুন। আজকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমার অনুরোধ, ব্যবসায়ীরা অনেক প্রত্যাশা নিয়ে আপনাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনারা সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে ছিলেন, আগামীতেও পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করবেন।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘আমি এই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন সদস্য। সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে চেম্বারের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। যারা বিজয়ী হয়েছেন, সকলকে আমার অভিনন্দন।’ এসময় নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার আশাবাদ ব্যক্ত করে আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচিত পরিষদের সকল সদস্য আগামী দিনে চেম্বারের উন্নয়নে একে অপরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন এবং এই প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন।’